বোকা হিম্মত
......... ঋষি
হিম্মত আলী মারা গেছে
দুদিন নিখোঁজ থাকার পর তার পচা ,গলা দেহটা পাওয়া গেছে হাঁসখালির খালে
সবাই জানতো লোকটা ভালো ছিল
সবাই জানতো লোকটার সাহসের কাছে যমও মাটি আঁকড়াতো
আমি হিম্মত আলীকে চিনি
আপনারাও তাকে চিনতে পারবেন জিভকাটা হিম্মত আলী ডাকতো সবাই ।
.
হিম্মত কোলমাইনে কাজ করতো
সেইবার শ্রমিকদের ঠিক পারিশ্রমিক না পাওয়ায় সে স্ট্রাইক করেছিল কোলমাইনে
সে সেদিন চিৎকার করছিল বুর্জোয়া নিপাত যাক
আমাদের দাবী মানতে হবে ,
সেই কোলমাইনে সেই দাবী মানা হয়েছিল কিনা জানি না
কিন্তু সেই রাতে কিছু দুষ্কৃতী তার জিভ কেটে তাকে ফেলে রেখে যায় কারখানার গেটের সামনে।
.
হিম্মত তবুও হারে নি
তার কোলমাইনের চাকরিটা চলে গেছিল বহুদিন ,
সে রাস্তার পাশে একটা ঘুগনি ,পাউরুটি ,চা ডিমটোস্টের দোকান খুলছিল
একলা মানুষ বেশ চলছিল
ব্যবসাও তার জমে যাচ্ছিল ধীরে ধীরে।
একদিন এক পার্টির ছেলে এসে হিম্মতকে বলে দোকান তুলে ফেলতে হবে
দুদিন সময়
এখানে পার্টি অফিস হবে।
হিম্মত সেদিন ছুটে গেছিল থানার দারোগার কাছে
দারোগা সব শুনে তাকে বলে তোমার ওই নাড়ানিতে কিছু বুঝছি না বাপু
তুমি লিখে দেও
কোলমাইনে খাটা নিরক্ষর হিম্মত কি লিখবে ?
হিম্মত ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল দারোগার মুখের দিকে।
কিন্তু ডরাই নি সে
সেই রাতে হিম্মত জানতো আজ তার দোকান ভাঙা হবে
তাই সে দোকানেই ছিল,
গোটা দশেক ছেলের সামনে সে একলাই রুখে দাঁড়িয়েছিল
সে বেঁচে থাকতে তার দোকানে কেউ হাত লাগাতে পারে নি
কিন্তু শেষে হিম্মতকেও হিম্মত হারাতে হলো
এই পৃথিবীতে প্রতিটা সত্যের হিম্মতের দাঁত সময় হাতুড়ি দিয়ে ভাঙে
শ্রমিকের হাতুড়ি সত্যি হলেও তা শুধু আজ অভিধানে থাকে
মানুষকে সময়ের কাছে প্রতিবারই হিম্মত হারতেই হয়।
.
থানার দারোগা হিম্মতের শরীর সারজেমিনে এলো
পানের পিক মাটিতে ছুঁড়ে রিপোর্টে লিখতে বললো আননোন বডি
তারপর পুলিশের জিপে উঠতে উঠতে ড্রাইভারকে বললো
হিম্মতটা বড্ড বোকা ছিল।
No comments:
Post a Comment