Thursday, June 30, 2022

পৃথিবীর বুদ্ধিমান জীব

 


পৃথিবীর বুদ্ধিমান জীব

... ঋষি 


বন্যার জলে যারা ভাসছে ,শুনতে পাচ্ছেন তাদের  চিৎকার ,

বন্যার জলে গবাদি পশু ,পুকুরে মাছ ,কষ্টরা ভাসছে

শুনতে পাচ্ছেন , 

কি বলছে সুনামগঞ্জ  ,কি বলছে আসাম ,কি বলছে সিলেট ?

কি বলছে ওখানকার মানুষ ?

জল নেই ,খাবার নেই ,ছাদ নেই 

তবুও তো আছে রাষ্ট্র ,তবুও তো আছে রাষ্ট্র পিতারা  ,

তবুও তো তাদের আছে মিথ্যা বুলি 

তবুও তো আছে মানুষের কান্না। 

.

রোজকার খবর 

প্রতিবারে ঘটে ,শুধু দিন বদলায় ,বদলায়  সনদে রাজার রং 

কিন্তু মানুষের কান্না থামে না 

কিন্তু তবুও মানুষ মরে ,নিরীহ পশুদের সাথে

তবুও যুদ্ধ চলে 

তবুও তো ধর্মের নামে এই  শরমের দুনিয়ার চলচিত্র । 

.

 কি বলেন আপনারা , গর্বিত 

গর্বিত বটেই 

গর্বিত আমাদের রাষ্ট্রপিতারা যারা চিৎকার করছে শুধুমাত্র  মানুষের জন্য 

গর্বিত আমরা ,তাদের  হাজারো পতাকার রঙে আজ শুধু একটাই ছায়া -মৃত্যুর জন্য । 

গর্বিত এই রাষ্ট্র ,এই পৃথিবী

মানুষ বলে এই দুনিয়ার সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতির জন্য 

গর্বিত আমরা ক্রমশ ২ জি ,৪ জি ,৫ জি ছাড়িয়ে ধ্বংসের  মুখোমুখি বলে , 

তাই না ?

আচ্ছা আপনাদের ভয় করে  না 

এই যে প্রতিদিন ক্রমশ দূষিত করছেন এই পৃথিবীকে আপনাদের জীবনযাত্রায় 

অযাচিত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে হারজিতের গল্প লিখছেন 

অযাচিত ভাবে ক্রমশ কাটছেন গাছ ,মেরে চলেছেন জঙ্গলের জীবদের ,

ভেবেছেন কখনো 

একদিন এই পৃথিবীতে যদি বদলা নেয় 

আজকে যে একে ফরিটিসেভেন আপনি পৃথিবীর দিকে তাক করে আছেন 

কাল যদি পৃথিবী হাজারো একে ফরিটিসেভেন নিয়ে আপনাকে তাক করে 

কি করবেন ?

.

সত্যি আপনাদের  লজ্জা করে না 


তাই না ,


আপনারা  নিজের হাতে নিজের ধর্ম ,নিজে সম্পর্ক ,নিজেকে হত্যা করেন 


হত্যা করেন  এই পৃথিবী থেকে ঈশ্বর শব্দটাকে  


এই পৃথিবীকে নির্মম ভাবে হত্যা করেন প্রতিমুহূর্তে 


তারপরও নিজেরা  চিৎকার করেন আপনারা  পৃথিবীর বুদ্ধিমান জীব।   


Wednesday, June 29, 2022

রক্তক্ষরণ

 রক্তক্ষরণ 

... ঋষি 


পুব দিকে আলো হয়ে এলো 

এখনো নখ দিয়ে আঁকড়ে রাখতে চাইছি মাংসের কণা 

অনেকটা রক্তক্ষরণের পর 

রাত্রি ফুরোচ্ছে 

কিন্তু অন্ধকার সরছে না কিছুতেই। 

.

কে তুই 

শৈল্পিক অধিকারে তুলে নিচ্ছিস নিজের হাতে তুলি 

এঁকে চলেছিস ,নিজের বাড়ি ,নিজের ঘর ,গৃহস্থের প্রেম 

অথচ বাউল ক্রমশ 

সারারাত তোকে ভালোবাসার পরও চোখে ঘুম আসে না। 

.

কি খুঁজছিস ? অধিকার 

আবারও কোনো দিনে আমার নাগরিক মুখোশের অন্য লোক হাসবে 

আবারো আলুর দাম ,পটলের দাম 

দিন ফুরোবে 

দুচোখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগে তোকে একবার বলতে চাই 

আমি অনেকদিন হলো বাড়ি ফিরি নি 

তোকে ভালোবাসতে এই রাতটা বড়ো ছোট মনে হয়। 

Sunday, June 26, 2022

আর একদিন

আর একদিন 
.. ঋষি 
আর একদিন তোমার মতো দেখতে এক নারীকে হাত তুলে চুমু খেয়ে বললাম      কেমন আছো? 
সে মিষ্টি হেসে বললো 
যাবে আমার সঙ্গে পাশেই ডাক বাংলো। 
.
আর একদিন তোমার মতো দেখতে এক নারীর কানের পাশে ঠোঁট রেখে বললাম 
কেমন আছো? 
সে আমার হাত ধরে বললো 
যাবে আমার সাথে ওইপাশটা অন্ধকার বিশেষ কেউ আসে যায় না। 
.
আর একদিন তোমার মতো স্বভাবের এক নারীকে
 তার গভীর নীল চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বললাম 
কেমন আছো? 
সে আমাকে নিবিড় ভাবে জড়িয়ে বললো আরো কাছে পেতে চাই তোমায়। 
.
আর সেইদিন তোমার নরম বুকে ঠোঁট ছুঁয়ে বললাম 
কেমন আছো?  
তুমি বললে - তুমি কখনো সমুদ্র দেখো নি তাই না 
আমি বললাম তুমি জানলে কি করে? 
তুমি বললে এমন করে কোন পুরুষ কোন নারীকে দেখে না 
সমুদ্রকে দেখে। 


ফেলানী প্রেম

ফেলানী প্রেম
.. ঋষি 

আজ তোমাকে একলা থাকা শেখাবো প্রেম 
একলা থাকা, একদম না।
ভাতের গন্ধে যারা বশ্যতার কাছে নতি স্বীকার করেছে 
তাদের তুমি একলা রাখতে পারো 
কিন্তু প্রেম!না কখনো না। 
.
পশ্চিমমুখো বারান্দা 
একটু সামলে 
শ্রেণী সংগ্রামে পুড়িয়ে দেওয়া কাগজের অধিকার 
তাদেরকে ধুয়ে মুছে নতুন মাটির গন্ধ 
সেখানে প্রেম একা 
হতে পারে না। 
.
তোমাকে শেখাতে চাই একলা থাকতে প্রেম 
ঘুম ভাঙা চোখে এই শহরে ডাস্টবিনে পড়ে থাকা স্থায়িত্ব 
সেখানে রক্ত, মাংস, পোড়া গন্ধ 
অস্তিত্বের কাছে প্রেম বড় একা। 
সাদা ভাতের অস্তিত্ব সত্যি, উথলে ওঠা প্রেম 
ওমা কাঁদছো কেন 
কি বলছো? 
.
ফেলানী সময়ের কাজের ফাঁকে প্রেম অপেক্ষা করে
একলা থাকে না। 

Saturday, June 25, 2022

বন মোরগ

নিজের অজান্তে এক মতবাদ তৈরী করি
অতি নিরিবিলিতে
হাত বাড়িয়ে পাওয়া ইট, কাঠ, মাটি, রং,তুলি, ইচ্ছে দিয়ে
প্রগাঢ় সাধনায় মতবাদকে পরিপুষ্ট করি 
যেন এক বন মোরগ, 
সযত্নে বানিয়ে ফেলি তার পা, তার ডানা, তার মাথার ঝুঁটি। 
,
নিমেষে ঝাঁপিয়ে পরে সভ্যতা, সভ্য মানুষ
যেন এখুনি কেটে ফেলবে তাকে, 
ওরা চিরকাল বুদ্ধিমান, সামাজি
ওরা সবসময় নারীকে গৃ্হস্থালিতে দেখতে চায় 
কিছুতেই বুঝতে চায় না
মৃত্যুর থেকে দামী হলো সৃষ্টি, ভালোবাসা। 
.
নিমেষে রুখে দাঁড়াতে চায় আমার সাধের বন মোরগ 
আমি মানুষ বলে বোধহয় পারি নি
মতবাদ আগলে একলা থাকতে, 
সভ্যতা তাই কেটে খেলো আমার সাধের সৃষ্টিকে 
আমাকে মানতে হলো 
সমাজ আর সময় আমার থেকে শক্তিশালী। 

Tuesday, June 21, 2022

পাখির আকাশ

 পাখির আকাশ 

..ঋষি 

.

বর্ণদের  রিফু  করা পোশাক ক্রমশঃ ছোট হচ্ছে শরীরে  

বারান্দায় দড়িতে মেলে দিই বর্ণের পোশাক।

রেলিং-এর ধার ঘেঁষে পাখিরা ভিড় করে আজকেও আগের মতো 

খুঁটে খায় ইচ্ছেদের ,খুঁটে খাওয়া স্বভাব। 

সময়ের সান্নিধ্যে খিদে ফুরোয় না তাদের 

শুধু নিয়ম করে ফুরিয়ে যেতে থাকে বীজ ,চাল ,বেঁচে থাকা। 

.

কী করব এরপর? 

খোলা বুকে আকাশ নামবে না  কবি?

তুমি বলো একবার আমি পোশাক খুলে দাঁড়াবো 

তুমি বলো একবার আমি বর্ণদের নিয়ে নতুন পোশাক বানাবো 

তুমি থাকবে তো 

যদি আমার বদলানো কবিতারা পাখি হতে চায়। 

.

দমকা সত্যগুলো মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি দেয় সময়ের বিপরীতে 

জানি আমি জমা খুলে উড়িয়ে দিলেও 

সে আমার গায়ে স্নেহ হবে না ,

বর্ণদের বানান ভুল হলেও আমি আমি মেনে নিতে পারি 

কিন্তু ক্ষুধার পৃথিবীতে আমি চাঁদের গায়ে পাখি 

না হবে না 

.

কবি - পোশাক পরার কপাল সকলের থাকে না 

কেউ কেউ পাখি হয় 

আকাশ খোঁজে বাঁচার। 

অসহ্যদের

 অসহ্যদের

... ঋষি 

 

কীভাবে সে সময়ের শেষ মুহূর্তে পৌঁছবে 

সমস্ত অবয়ব ধুয়ে মুছে

.  

স্মৃতি কি ভাস্করকৃত কোনো মূর্তি?

.

তুমি যা সহ্য  করো, তুমি বা  তুমিই?

যা হয়তো কাল্পনিক শরীরের মতো কিছু অবয়ব

স্মৃতির রাস্তা ধরে হাত ধরে হেঁটে যাবে 

ভুলে যাবে ? 

আমি জানি না শেষ মুগ্ধতায় আমি কোথায় দাঁড়াবো ?


আমি জানি না কবি কাকে বলে ?

মনে হয় মাঝে মাঝে কবি মানুষের মাঝে ভেক ধরে ঈশ্বর 

কোথাও হয়তো বরফের চাঁই গলে পড়ছে 

কবি সেই বরফ শরীর ছুঁয়ে মুহূর্ত লিখছে 

জানি না তার কতটুকু কবিতা 

শুধু কবিতা লিখে কবি হওয়া যায় না 

পাঠক তার বোঝে কতটুকু  

কবিকে কবিতা সহ্য করতে হয় ,স্পর্শ করতে হয় 

শব্দদের চিবিয়ে যন্ত্রনাদের সময় দিতে হয়। 


দিনলিপি

 দিনলিপি 

.... ঋষি 


আমাদের দিনলিপিতে একটা রাস্তা থাকা ভালো 

আলাপচারিতা তবে যাওয়া আসা করে। 

.

তুমি আমার ডাইরির পাতা হয়ে যাও 

তোমাকে লিখবো 

তুমি আসা যাওয়া বন্ধ করে হয়ে যাও আমার কবিতা। 

.

মুঠোফোনটা ডেকে ওঠে হঠাৎ হত্যায় 

বলে কেমন আছো ?

সাড়া দিতে ইচ্ছে করে না আজকাল 

তবু অন্ধকার ছাড়িয়ে ফুটে ওঠে তোমার নাম। 

.

আমি বিষক্রিয়া জানি না ,জানি ভালো থাকা 

আমি আকাশের কবিতায় দেখি তোমার চোখে জমতে থাকা কালি 

তুমি স্তব্ধ হতে চাও 

আমি নীরব 

কিন্তু কবিতায় শব্দরা মিথ্যে লিখতে পারে না। 

পাখিদের ঘর

 পাখিদের ঘর 

,,, ঋষি 


আমি শরীরে চায় 

একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে পরে শরীরের কোষে প্রাধান্য 

কথা বলার সময় শত শত মৃত হাসির কথা মনে পরে 

মনে পরে বুকের কেবিনেটে জমানা একশো আঠারো মুহূর্ত 

মুহূর্ত কাছে আসার ,সরে যাওয়ার 

দূরে সরে থাকার। 

.

আমার বুকের ভিতর শত শত রাত পাখি হয়ে ওড়ে

তারা নেমে আসে একলা নিশ্চিন্ত ছাদে 

ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে যায় এই শহরে কোনো একদিকে তখন আলো ফোটে ,

মানুষ ভুলে যায় মানুষ একা কাঁদে না 

কাঁদে মানুষের ভিতর শত শত মুহূর্ত ,আহত পাখি 

ফিরে আসে তখন বাসায়। 

.

মানুষ মারা যায় ,ধীরে ধীরে ভিড় বাড়ে পাশে দাঁড়ানোর পরিকল্পনারা 

কিন্তু মানুষ জানে মানুষের দুঃখগুলো বুক বাক্সে বন্দী থাকে 

বন্ধক রাখে না কেউ ,

শুধু বন্ধক রেখে সম্পর্ক খাঁচায় আটকানো পাখি। 

বুকের বারান্দায় জমে ওঠে অনেকদিনের পুরোনো নেশার বোতল 

বরফের নখ ,হৃদয়ের রক্ত আর সাদা হয়ে যাওয়া ঠোঁট 

সূর্যাস্ত হলে আমার সারা শরীরে জমা হ ওই ক্লান্তি 

আবার হয়তো ফিরে যেতে হবে পাখিদের ঘরে  

আবার সকালের অপেক্ষায়। 

 


Sunday, June 19, 2022

কিন্তু আমার কি

 কিন্তু আমার কি 

.. ঋষি 


বন্যার জলে ভাসুক আসাম ,চেরাপুঞ্জি 

আমার কি ,আমার কলকাতা ভেসে আছে মাটির উপর ,

কে খাচ্ছে ,কে খাচ্ছে না 

আমার কি ? 

.

ইউক্রেনে পারমাণবিক রিয়াক্সন ,তালিবানদের আরেকটা দেশ 

রাশিয়া গর্জাচ্ছে ,আমেরিকা বর্ষাচ্ছে 

আমার কর্কটক্রান্তির দেশে মৌসুমী ঢুকবে ঢুকবে বলছে 

গড়িয়াহাটে ,ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি আজও ব্যাঙের হিসুতে এখনো ডুবছে 

আমার কি ?

গিন্নি বৃষ্টি হলে খিচুড়ি রান্না করে ,সাথে ইলিশ মাছ 

আমি মশগুল। 

.

খবরে শুনছি একজন কর্মরত নার্সের হাত কেটে নিলো তার স্বামী 

পার্কস্ট্রিটের হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের আট  তলার ফ্লোর তিন দিনের মৃত দেহ 

ই  এম আই ফেল চাকরি হারানো দম্পতির ঝুলতে থাকা মৃতদেহ 

কোরোনায় বাড়তে থাকা হিসাবের গোলমাল

কয়লার কালি ,গরুর ঘাস ,একাডেমী পুরস্কার ,শিক্ষা কান্ড 

সবই বুঝি 

সবই জানি 

কিন্তু আমার কি ?

প্রয়োজনে দেশ আর দশের ক্রিকেট ম্যাচে  আমি পাকিস্তানি 

প্রয়োজনে সুযোগমতো আমিই তো ধর্ষক 

ধর্মের নামে চিৎকার আবার বুজরুকি 

ইতিহাস ,ভূগোল আর ম্যাথেমেটিক্স ,ফিজিক্স 

নারী বাদ ,ধন বাদ ,প্রেমিক ,কবর ,মৃতদেহ 

সবই আমি 

কারণ আমি জনগণ। 

সব বুঝি ,সব জানি 

শুধু জানতে চাই  আমার পাশের বাড়ির হাঁড়ির খবর 

কিন্তু জানতে চাই না  পাশের ঘরে হাঁড়ি আদৌ চড়ে কিনা 

শুধু দেওয়ালে পোস্টারে মিথ্যে প্রতিবাদ দেখি 

কিন্তু মানতে চাই না প্রতিবাদ দরকার  ,

আমি বিশ্বাস করি 

আমিই শুধুই বাঁচবো 

দেশ ,সময় ,মনুষত্ব সব যাক রসাতলে

তাই আমি খুব সহজে ভাবি 

কিন্তু আমার কি ?  

 


 

সময়ের খবর

 সময়ের খবর 

... ঋষি 


ও বুধন কই  গেলি রে বাপ্ ,কই  গেলি। আমি শুনতে পাচ্ছি ,আপনারা শুনতে পাচ্ছেন ,বুধোনের  মা মনসা সরাই  কাঁদছে ,কেন কাঁদছে ?চলুন শুনে নি বুধোনের  মার্ জবানিতে কারণটা,সঙ্গে আমি সাথে আছি সময়ের সাংবাদিক মানুষ ,

.

মানুষ : আপনি কাঁদছেন কেন ?

.

মনসা  সরাই :আমরা গরীব ,না খেতে পাওয়া মানুষগুলোর চুখের জলি সব ,আমার ব্যাটাকে খুঁজে পাওয়া যায় না আজ চার দিন ,কাঁদুন না কেন কন। 

 .

মানুষ : পুলিশকে জানিয়েছেন ?

.

মনসা  সরাই : কোন পুলিশের কুথা কন আপনি ,পুলিশ সে বুড়োলোকের গুলাম গো ,তাদের সেবা ছিড়ে কি করতে খুঁজবে গো বুধনকে। এই দেশে আইনকানুন সবই তো বড়োলোকের গো ,আমাদের তো শুধু কপালে কান্না। এই দ্যাখেন না 

এই রাঢ় মাটি বড় বন্ধ্যা গো ,এই জঙ্গল আমাদের মা। তবু কুষ্ট কুরে কিছু যা কিছু ফসল ফলাই আমরা উড়া কেটে নিয়ে যায়। এইবার  বুধন গাজোয়ারি কুড়লো,আমি মানা করেছিলাম ,শুনে নাই। ব্যাটাটা হুয়েছে ঠিক উর বাপের মতো ,দা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। উড়া তখন পলাইয়েছিল বাবু কিন্তু শাসিয়ে গিছিল 

জুঙ্গুলে জাবি নাক ,তোকে পুঁতে দেব ,ওরা বোধহয় পুঁতে দিয়েছে আমার পুলাটাকে গো। 

.

মানুষ :ওরা করা ?

.

মনসা সরাই :উড়া গো উড়া ,ওই যে আগের জামিনদার ,তার ছিলে এখন পার্টিতে দাঁড়িয়ে বড় মস্তান হুয়েছে। কারুকে ভয় পাই না,দিনে রাতে মস্তানি করে ,গ্রামের বৌ ,ঝিদের খারাপ নজরে দেখে ,শুকুনের নজর উর। থানার বাবুরা ওদের সাথে ,একসাথে বসে নেশা করে উড়া। উড়া আমার ছিলেট্যারা মেরে ফেললো গো বাবু। তবে তুমি শুনে রাখো বাবু আমার চিলিট্যার যদি কিছু হয় আমি ওদের ছাড়ুম না ,এই কাটারি দিয়ে কেটে ফেলুম। ও বুধন তুই কি গেলি রে। 

.

বুঝলেন এর কিছুদিন পরে রাঢ় অঞ্চলের শাল বনের ভিতর পাওয়া যায় বুধোনের গলায় দড়ি দেওয়া রক্তাক্ত  ঝুলতে থাকা  জিভ বার করা শরীরটা। বুধোনের মা মনসা পুলিশ কোতায়ালীতে বেশ কিছুবার যাওয়ার কারণে এর কিছুদিন পরে মনসার ধর্ষিত রক্তাক্ত শরীরটা পাওয়া যায় গ্রামের পুকুরের পাড়ে। এই খবর আপনারা কোনো সময়ের  খবরে পাবেন না ,পাবেন একমাত্র সময়ের খবরে। 

তাই সময়ে থাকুন ,সময়ের কথা ভাবুন আর পড়ুন সময়ের খবর ,আপনাদের সঙ্গে সময়ের সাংবাদিক মানুষ।  

  


Friday, June 17, 2022

সভ্যতাকে করা প্রশ্ন

 


সভ্যতাকে করা প্রশ্ন 

... ঋষি 

.

এটা একটা অন্য  যুগের গল্প 

যখন কোনো পুরুষ পেশী জোরে কেড়ে নেয় নারী সম্ভ্রম 

যখন কোনো পুরুষ মাঝ রাস্তায় চলতে চলতে হাত ছেড়ে দেয় তার প্রেমিকার

যখন কোনো পুরুষ নিজের স্বার্থে নিজের প্রেমকে ব্যবহার করে 

ব্যবহার করে তার নিজস্ব নারীর স্বত্বাকে বিনিমিয়ে প্রথায়

কিংবা বিছানার সামাজিক নারীকে বারংবার ধর্ষণ করে  

তখন সমাজ চুপ থাকে 

তখন সময় চুপ থাকে

শুধু সাজানো প্রতিবাদে একই ঘটনা বারংবার ঘটে। 

.  

যখন কোনো নারী চোখের জলে তুলে নেয় নিজের অন্তেষ্টিক্রিয়া  

যখন কোনো নারী পরিবারের লাজ বাঁচাতে নিজেকে বলি করে 

যখন কোনো নারী সন্তানের খিদের বিনিময়ে নিজেকে বিক্রি করে 

রফা  করে নিজের অহংকার নিজের সামাজিক পুরুষের কাছে 

নিজের সিঁদুরের কাছে 

তখন সমাজ চুপ থাকে 

তখন সময় চুপ থাকে 

শুধু মাঝের মধ্যে কেউ কেউ সাজানো ভূমিকায় বলে 

মেয়ে হয়েছিস সহ্য করতে হয়। 

.

আমি সেই সামাজিক পুরুষকে প্রশ্ন করতে চাই 

আমি সেই গৃহস্থ ভীতুনারীকে প্রশ্ন করতে চাই 

তোমরা কেমন আছো ?

আমি এই সময়কে ,এই সভ্যতাকে প্রশ্ন করতে চাই 

তোমরা ভালো আছো তো ?

আমি সেই প্রেমিক পুরুষকে প্রশ্ন করতে চাই ,কেন ?

আমি সেই নারী স্বত্বাকে প্রশ্ন করতে চাই ,কেন ?

.

কেন এক নারীতে পুরুষের বিশ্বাস থাকে না ,

কেন এক নারী স্বত্বায় পুরুষের বিশ্বাস থেকে না 

কেন এক নারীর মাঝে পুরুষ বিলীন হয় না

কেন কোনো নারী এতটাই অসহায়

কেন কোনো নারীর কাছে নিজের শরীরের পণ্যতা ছাড়া উপায় থাকে না 

উপায় থাকে না পুরুষের চোখের তাকিয়ে বলার " না "। 

.

এই  একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও আমরা কেন এতটা অসহায় 

কেন আমাদের আয়নায় আমরা মুখোশ  দিয়ে সাজানো 

কেন আমরা সত্যি বলতে পারি না 

কেন নিজেকে বোঝাতে পারি না শরীর আর মন এক না 

কেন সময়কে বলতে পারি না সম্পর্ক মানে অসহায়তা না 

কেন সভ্যতাকে জানাতে পারি না প্রতিবাদ ,

সভ্যতা মানে তো 

মুখ বুজে বাঁচা নয় 

সভ্যতা মানে সময়ের চোখে চোখ রেখে বাঁচার অধিকার। 


Thursday, June 16, 2022

শুধু এতটুকু

শুধু এতটুকুন 


... ঋষি 




কেরোসিনের দাম বেড়ে গেল গো দ‍্যাশে


আমি কিছু বুলি নাই  


আমার গ্রামের মোড়লের ব্যাটা না পইরেই পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াইলো 


অথচ আমার ব্যাটা কলেজে পাশ দিয়াও বেকার!


আমার বাপ্ মরা বিটিটাকে পাড়ার পার্টির ছুরারা তুলে লিয়ে গিয়ে অসভ্যতা করলো 


আমি কিছু বুলি নি। 


.


জানেন তো গরীব আমরা ,আমাদের আবার লজ্জা! 


 গরীব লোক ,তাদের আবার অহংকার! 


গরীব হা ভাতে লোকের শুধু খিদ্যা পায়.. 


গরীব হা ভাতে লোকের সংসারে সব সময় আগুন..


আমার মানুষটাও পুড়ে মরেছে সেই আগুনে.. 


শহরে কুনো জেলে এতদিনে বুধহয় পচে মইরেছে। 


.


মুখ্যু সুখ্যু মানুষ আমি 


তবে এতটুকু বুইঝেছি এই দেশে আর কিছু অবশিষ্ট নাই 


সবকিছুই বিক্কির হয়ে গেছে ইখানে


দিনেরাইতে বৌ ঝিদের সম্মান নিয়ে হুজ্জুতি হয় 


লিখাপড়া লিয়ে ,মানুষ লিয়ে ,মানুষের ভাবনা লিয়ে শুধু বিজনেস হয় 


পার্টির লিডাররা ফি বছর ভুটের লেগে মানুষকে মিছা কথা বলে 


এই দেশের সব বিক্কির হয়ে গেছে গো। 


আমি মুখ্যু সুখ্যু মানুষ


এতকিছু জানি না ,জানতিও চাই না..  


শুধু চেইচি খেয়েপরে বাঁচি যেন মানুষ হয়ে ..


কিন্তু তা হচে কই!


মেয়েটাকে কাল রাইতে তুলে নে গেছে আবার 


এখনো ফিরেনি সাহেব 


আপনাকে আর কিছুই বুলার নাই


গরিব মানষের কিছু থাকে না বুলার  


শুধু এতটুকুন 


মেয়েটাকে যাতে ওরা জানে না মারে।

Wednesday, June 15, 2022

আদুরে বেড়াল

 আদুরে বেড়াল 

... ঋষি 


অদৃশ্য একটা আদরের গল্প 

যেখানে পৌঁছতে হলে গড়িয়ে নামে জল 

মনের ভিতর বিড়াল ডাকে ,

অথচ তুমি  পা টিপে টিপে গড়িয়ে নামো  রোজ আমার  বিছানায় 

আসমুদ্র বিশ্বাস 

সেখানে ছুঁয়ে দিলে বোধহয় নিঃশ্বাসে আশ্রয় লাগে। 

.

কি ভাবে নামবো ?

ঠান্ডা বিছানা ,কফি কাপে লেগে থাকার তোমার ঠোঁটের দাগ 

আলগা হয়ে জড়িয়ে থাকা কোল বালিশ 

পিষে নেয় বুকে 

তুমি থাকো যেন সারারাত জেগে আমার আদরে 

বিড়ালের চোখ। 

.

অনেকদিনের গল্প এটা 

ঘুম আসে না ,তোমার বুকের ভিতর স্নেহেরা  ছান্দিক 

কবিতা লিখতে চাই 

সারা রাত ,সব মুহূর্তরা তোমাকে স্পর্শের খোঁজে  পা টিপে টিপে হাঁটে 

আমার  বাড়ির রেলিং বেয়ে ,আমার  স্বপ্নের ভিতর, 

তুমি এসে পড়ো আমার বিশ্বাসের ভিতর 

আদুরে বেড়াল 

চোখ তুলে চাও ,মুখ ঘষো আমার বুকে 

আমি বুঝি আমার হৃদপিন্ড চলছে,

 জীবনের  বাইরে 

জীবনের ভিতর 

গভীরে 

কিন্তু সকাল হলেই তুমি মানুষ হয়ে যাও। 


হারানো শব্দরা

 হারানো শব্দরা 

... ঋষি 


কি বলবো ?

কাব্য করতে গেলে হৃদয় ভাঙতে হয় বারংবার 

আমার কলমের তিনকাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে 

তাই রৌদ্র লিখলে 

আর এই বয়সে কোনো অভিজ্ঞতা হয় না। 

.

এই তো সেদিন লিখতে চাইলাম ২০২২

কিছুতেই হচ্ছে না 

চিঠিপত্র ফুরিয়েছে লেখা আজ অনেকদিন এই সভ্যতায় 

আজ এস এম এস ,ম্যাসেজ 

আর অনেকটা সময় শুধু অন্ধকার থেকে কলমের শব্দরা 

চিৎকার করছে   .........

.

এ যেন একটা রাত 

পুকুরের একদম নিচে পালিত শ্যাওলার মতো অন্ধকার 

এ যেন সেই সময় অথবা অন্ধকারে মুখঢাকা এক সভ্যতা 

অনেকদিন শিশিরের ফোঁটা পায় নি 

প্রায় অন্ধকারে কলমে হারিয়েছে জলের দাগ। 

আজকাল আর কান্না পায় না 

এখন চিঠির চল নেই 

তাই লিপিবদ্ধ করে পাঠাবার মতো ভাষারা হারাচ্ছে  রোজ 

আমি লিখতে চাইছি 

অথচ বুকের কাছে খামচে ধরছে স্মৃতি ভেজা নখ 

আমি বলতে চাইছি 

কলম চিৎকার করছে 

আর অন্ধকার না ,না না আর অন্ধকার না 

এইবার সভ্যতা হাসুক 

মানুষ বাঁচুক সকালের সবুজ শিশিরে পা ভিজিয়ে বাঁচবার ইশারায়। 

 

Saturday, June 4, 2022

পাশাপাশি

 


পাশাপাশি 

................শুয়ে আছি 

                       .................................তুই আর আমি 

দুটো বালিশ পাই নি কতদিন আমাদের রোদের আঙ্গুল

প্রশস্ত চাতাল পেরিয়ে বালিয়াড়িতে রয়ে গেছে আমরা জীবন 

তবুও নিজেদের সমুদ্র বলতে পারি না 

কারণ সমুদ্রের কাছে সব সম্পর্ক ভীষণ ছোট। 

.

দিগন্ত ছোঁয়া কাব্যিক সময়ের ভিড় 

আমাদের পায়ের পাতা ছুঁয়ে অসংখ্য ধুলোঝড় 

সময়ের ঘরে ধ্বংসস্তূপে মুখোমুখি আমরা 

জীবন হাতড়াচ্ছি ,

কিন্তু অসহতার ভিড়ে জ্বলে যাওয়া নক্ষত্রপুঞ্জেআজ স্বপ্ন 

তবুও আকাশ দেখছি না আমরা। 


কবির কবিতা

 কবির কবিতা 

... ঋষি 


আমার কবিতা আমাকে বোঝে না 

আমি তাকে ভালো রাখতে চাই 

তবুও সে পালায় চেতনার স্তর ছাড়িয়ে মানুষের ইতিকথায় 

চলে যায় কালাহান্ডি গলির নোংরা বস্তিতে 

গিয়ে দাঁড়ায় কসবার সেই গোতর খাটানো মেয়েমানুষটার পাশে 

কিংবা বনগাঁ থেকে প্রত্যহ ডেলি প্যাসেঞ্জার করা ফেরিওয়ালাটার পাশে 

আমি চিৎকার করি 

কবিতার নাম ধরে ডাকি 

সে সাড়া দেয় একলা গ্রামের অন্ধকার পুকুর থেকে এখানে আমি ,

এইতো ,এখানে কবি। 

.

রোজ প্রতিদিন আমি জ্যোস্ন্যায় স্নান করা সেই মেয়েটাকে লিখতে চাই 

লিখতে চাই ভালোবেসে তোমাকে কবিতা 

তোমার চুলে তেল দিয়ে ,চুল আঁচড়ে আদর করতে চাই 

তুমি শোনো না কথা 

দস্যি মেয়ের মতো ছুতে পালাও মানুষের শৈশবে 

কোনো চিত্রশিল্পীর তুলিতে ,

কোনো নৃত্য শিল্পীর পায়ের নূপুরে 

আমি বলি এতো জোড়ে ছোটো না ,লাগবে না 

অথচ তুমি অবিকল খেটে খাওয়া মানুষের মতো বলো 

না খাটলে তুমি কি খাওয়াবে কবি। 

.

কবিতা ক্লান্ত অভিমানী চোখ মেলে চায় 

ছলো ছলো চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলো 

তুমি আমায় বোঝো না কবি ,তুমি আমায় বোঝো না 

আমার অদৃশ্য পাপ বোধ থেকে আমি লিখে ফেলি 

আমাদের বাইরে কবিতা 

মানুষের জন্য 

সময়ের জন্য 

কবিতা খিল খিল করে হেসে ওঠে রক্তমাখা মানুষের খোঁজে 

আমার কষ্ট হয় 

আমি কবিতাকে বলি 

কবিতা তুমি আমাকে কিছুতেই বোঝো না। 

আবার একটা সকাল

 আবার একটা সকাল 

... ঋষি 


আবার একটা সকাল হবার আগেই 

আমি ঘুম থেকে উঠি 

অস্থির জীবনের পাল্লায় নিজেকে পরিমাপ করি 

ভাবি ঈশ্বর কি তবে জীবনের একটা মানে রাখে সময়ে ?

প্রশ্নোত্তরে ভাবনারা আছারিবিছারি খেয়ে ভাবে 

অনেক হলো সময় 

এইবার মানুষ ঘুরতে হবে পৃথিবীর পথে। 

.

ভাবনারা আজকাল বাউল ,আমি ভিখিরি 

রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রোজ দেখি সময় চলে যায় অনিদ্রায় 

অস্থির পালাই পালাই জীবন গিয়ে দাঁড়ায় খোয়াইয়ের মাটি রাস্তায় 

কত্তদিন দেখি 

কত্তদিন থাকি নি নির্জনে একা 

অবান্তর প্রশ্নের মতো 

বঞ্চনার প্রশ্নের মতো 

স্বপ্নের মতো 

হয়তো লজ্জার মতো। 

.

আবার একটা সকাল হবার আগেই 

আমি হাঁপিয়ে উঠি 

সামনে খোলা প্রান্তর অনেকদূর যেতে হবে 

এখনো অনেক কাজ বাকি 

তবুও দুঃখ হয়  ঝরা শুকনো পাতা মাড়িয়ে কতদিন হাঁটি নি

কতদিন সমুদ্রের বালিতে পা রেখে 

সময় দেখি নি 

দেখি তোমার মুখ চলন্তিকা। 

.

সবকিছু কেমন একলা হয়ে যায় জীবন ছাড়া 

প্রতিদিন  একটা সকাল হবার আগেই 

শব্দরা আমাকে জাগিয়ে দেয় 

কানে কানে বলে ..পালা।  

কুয়াশার আড়ালে

 কুয়াশার আড়ালে 

.০...ঋষি 

একবার চেষ্টা করি নি 

নিহত কুয়াশার দেশে ফরমায়েশি কিছু আবদার 

আবদার একার ছিল না 

তাই ডিঙি মেরে পড়ে যাবার আগে অবাক ভাবে খুঁজেছিলাম সেই চোখ 

চোখের পবিত্রতা 

আসলে ভালোবাসা শব্দটার সার্থকতা শুধুমাত্র শব্দে। 

.

কি নাম ছিল মনে থাকে নি 

মনে থেকে গেছে কেউ যখন আমার শব্দটাকে স্পর্শ করেছে 

স্পর্শ কেমন হয় ?

বোঝার জন্য উঁকি মেরে দেখে এসেছি তোমার চার তোলার ফ্ল্যাটে 

কিংবা একলা ছাদে 

আমি যে ভীষণ জংলী 

আদপকায়দা কিছুই বুঝি না। 

.

এই যে পাগল পাগল মন 

এই যে এই মুহূর্তে তোমার ইশারায় কুয়াশারা আমাকে ঘিরে 

আমি হাত বাড়িয়ে আগুন ছুঁতে চাই 

দেখি আমার মৃতদেহে তোমার গন্ধ। 

কিছুতেই শরীর পোড়ে না 

কিছুতেই সময় পোড়ে না 

কিছুতেই মহেঞ্জোরের মাটিতে কেউ দাঁড়িয়ে ভাবে না সভ্যতা 

শুধু রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় ইতিহাস খুঁজতে 

সভ্যতা আবিষ্কার করে। 


মদনদার চায়ের দোকান

 মদনদার চায়ের দোকান 

... ঋষি 


একটু পরেই বেরোতে হবে 

তাই একটু নিজেকে সাজিয়ে নেওয়া 

জিন্সটা একটু পুরোনো ,কিন্তু পাঞ্জাবীটা পুরোনো হলেও নতুন

তুমি দিয়েছিলে। 

.

বেশ জমিয়ে বসা গেলো রাস্তা ঘেঁষা সেই মদনদার চায়ের দোকানে 

জমিয়ে বেশ কিছু তেলেভাজা ,বেশ কয়েকভাঁড় মাটির ভাঁড়ে চা 

রাস্তা দিয়ে ক্রমশ হেঁটে যাওয়া মানুষের ভিড় 

চলন্তিকা তুমি আসবে তো আজ ?

.

এই যে টেবলে বসে আছি 

রাস্তা দিয়ে ঢুকে ডান হাতে 

এই  টেবিল জানে আমার প্রথম কবিতার ব্যাথা 

পকেট হাতড়ে বের করা খুচরো কিছু সময় ,

এই টেবিল জানে তোমার আঙ্গুল জড়িয়ে প্রথম কিছু স্পর্শ 

তোমার চোখে চোখে কথা 

আমার প্রথম টিউশুনি পয়সা ,রাজনীতির সেই গন্ধ 

হাতে ধরা সিগারেট ,তুমুল কিছু অব্যক্ত

রুমালে ঘামের গন্ধ 

তোমার গন্ধ চলন্তিকা 

.

ক্রমশ ঢুকে যাচ্ছে শহরটা সদ্য তৈরী হওয়া মেট্রোর অলিগলিতে 

ক্রমশ এক সন্ধ্যার কথা আজও হারাচ্ছে আমার অপেক্ষায় 

এখন পাড়ায় ফেরার গলিতে সেই পার্ক ,সেই মাঠটা 

সেই একলা দাঁড়ানো বৃদ্ধ গাছটা গলির মোড়ে 

সবই একই আছে। 

ঝিম ধরা হলুদ বাল্বটা আরো অন্ধকারে 

শুনতে পাচ্ছি মদন দা বলছে 

সময় হয়ে গেছে ,এবার বাড়ি যাও। 

.

আমি পা টেনে বাড়ি ফিরছি 

আর বলছি মনে মনে আজ ফিরে চলন্তিকা 

সময় হয় নি জানি 

আমি আবারও কাল আসবো 

তুমি কোথায় ?

সহগমন

 সহগমন 

... ঋষি 

.

সেতুটার সামনে আমার প্রেমিকা 

কে বেশি নিচে নামবে ,কে কতটা ওপরে 

সৃষ্টিদাতা মঙ্গল করুক 

মঙ্গল করুক তোমার মুখে আটকানো কিছু প্রশ্ন ,

.

যোগ্যতা 

আকাশ ফুঁড়ে একটা চিল নেমে আসে বুকের হৃৎপিন্ড কুড়োতে 

রে রে করে ছুটে আসে সম্পর্ক 

মৃত্যুর আগে তোমাকে মরতে দেওয়া চলবে না 

এই শহরে জন্ম বন্ধ করা সম্ভব 

ভাবনায় মৃত্যু না। 

.

সহগমনে যাবো 

শর্তশীল এই জামানার  গায়ে দু এক বালতি মানুষের দুঃখ 

আমার প্ৰেমিকা হাসছে সেতুর রেলিঙে হেলান দিয়ে 

আমি ভাবছি ঝাঁপ দেবো কিনা ?

পালকের মতো নেমে আসবো কিনা একার প্রতিবাদে 

একটা মীমাংসা দরকার 

কে এই মুহূর্তে নামতে পারবে বোবা সময়ের সিঁড়ি বেঁয়ে 

উত্তর চাইছি 

প্রত্যুত্তরে দেখছি 

সকলেই ভালো থাকতে চায়। 


 

Friday, June 3, 2022

দাগী আসামীর কবিতা

 দাগী আসামীর কবিতা

... ঋষি 

 

তোমার পাশে শুয়ে থাকা সম্ভ্রম 

                        মুখশ্রী ,সুনাম ,দর্পন 

কেন ভালোবাসে তোমাকে কেউ ?

কি সম্পর্ক ?

প্রশ্ন করেছি তোমার প্রিয় বন্ধুকে ,বন্ধুর বন্ধুকে 

উত্তর পাই নি। 

.

যজ্ঞের আহুতিতে পুড়তে থাকা হৃদয় 

ঘুরেছে ফিরেছে তোমার চারপাশে এক বৃত্তের আকারে 

এ যেন সীতার জন্য লক্ষণের অভ্যেস 

কিন্তু মানুষের অভ্যেস ,

কে সে ?

প্রশ্ন করেছি বারংবার সদুত্তরে শুধু একটা মুখোশের লোক। 

.

তোমাকে বলা হয় নি 

কেউ তোমাকে ভালোবাসে ,তাকে স্বীকার করতে হবে 

তুমি কাউকে ভালোবাসো 

তোমাকে কেউ ভালোবাসে 

তাকে উত্তর দিতে হবে ,

দেওয়ালের চোখ আর প্রদীপের চোখের মাঝে দূরত্ব 

আমার বুকে পুড়তে থাকা সলতে 

আর দাগী আসামীর  কবিতা ,

তোমাকে বলা হয় নি এক তো মুখোশ খুলে ফেলুক সে 

না হলে স্বীকার করতে শিখুক। 

নিজের ঘর

নিজের ঘর 
.. ঋষি 
সবুজ স্বপ্নের মতো মেঝে, আদুরে রঙের দেওয়াল 
আহ্লাদী আঙুল, খোলাছাদ 
প্রথম প্রেমের চিঠি, চিঠির ভাঁজে লুকোনো আকাশের পাখিটা। 
.
লোকটা ঘর চেয়েছিল নিজের 
শুধুই একটা ঘর যাকে লোকটা নিজের বলতে চেয়েছিল 
ঘরের ভিতর মানুষগুলোকে চিনতে চেয়েছিল অনবরত স্পর্শে, 
আজকে লোকটা প্রশ্ন করে সকলকে 
স্পর্শ মানে কি শুধু সম্পর্ক? 
.
প্লিজ ফিরে তাকাবেন না 
একটা কবিতা লেখার জন্য ভাবনাদের সংযত হতে বলবেন না 
বুঝবেন ব্যাপারটা
ইট দিয়ে আপনি বাড়ি তৈরী করতে পারেন কিন্তু ঘর না 
চারদেওয়াল দিয়ে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন 
কিন্তু ভালো না, 
মশাই ভালো থাকার জন্য যদি মানুষ না লাগতো 
তবে দেশের গল্পে দশজন আসতো না
তবে রাশিয়া, ইউক্রেনের যুদ্ধ থাকতো না,
শুধু যুদ্ধে আপনি আহত হতে পারেন 
কিন্তু আপনার আঘাতে মলম দেওয়ার জন্য মানুষ দরকার 
দরকার নিজের ঘর। 

না থাকার মুহুর্ত

না থাকার মুহুর্ত 
.. ঋষি 
তোমার চলে যাওয়া দেখতে দেখতে 
চোখে রুমাল দিলাম 
রুমাল নামালাম তুমি নেই আমার চারপাশে , ফাঁকা
আমি ফাঁকা মানে 
কবিতা
কবিতা মানে সব্বাই, গাছ, পাথর, মানুষ, সম্পর্ক 
শুধু কেন যে হৃদয় থাকে না। 
.
তোমার থেকে ফেরার রাস্তায় বারংবার বিখ্যাত কবিদের সাথে দেখা হয় আমার, 
সকলেই দেখি তোমার চলে যাওয়ার কথা লেখে 
স্মৃতিচারন করে
তবে কি তোমাকে পাওয়ার কবিতা কেউ লেখে না
ব্যাপারটা বুঝি 
তুমি থাকলে কেউ কবিতা লেখে না। 
.
তুমি চলে যাও প্রতিবার
আমি পিছন ফিরে দেখি তোমার মত কেউ আমাকে তাড়া করে
আমি দৌড়তে থাকি 
হয়তো লুকোচুরি খেলতে চাই তোমার সাথে 
কিন্তু বেশিক্ষন লুকোতে পারি না
পাগলপাগল লাগলেই, খুলে ফেলি কবিতার খাতা
খস খস শব্দে কি লিখে ফেলি কে জানে, 
লোকে বলে সেগুলো কবিতা 
আমি কাউকেই বলতে পারি না ওগুলো তোমার না থাকার মুহুর্ত। 


.

Wednesday, June 1, 2022

শোনাও তোমার কবিতা

 শোনাও তোমার কবিতা 

... ঋষি 


এই এইবার 

না না কোনো কারণ ছাড়া ,শোনাও তোমার কবিতা। 

.

অপেক্ষা করছি বহুযুগ 

অপেক্ষা করছে আমার শব্দরা 

জানি সময় আসেনি এখনো ,এখনো ঘড়ির কাঁটা ঘোষণা করে নি 

এখনো পিরামিডের বালি সরে যায় নি 

এখনো নদীর ঘরে নারীরা ঘুমিয়ে পরে নি সঙ্গম করতে করতে। 

.

সহসাই সেই দিন আসবে 

চলন্তিকা আমার সামনে এসে বলবে এই এইবার 

না না কোনো মঞ্চ নয় ,কোনো কারণ নয় 

তোমার কবিতা শোনাও 

শোনাও তোমার বুনো বাজপাখির কলমের গভীর আঁচড় 

আমি মুগ্ধ হতে চাই। 

.

জানি এখনো আসে নি সেই সময় 

যখন সমস্ত ঈশ্বর মাটিতে নেমে আসবে ,যখন সারা আকাশ জুড়ে শকুন 

শুভ আর অশুভ দুই ভাই তখন গলা জড়াজড়ি,

তখন তুমি আসবে চলন্তিকা 

আমাকে বলবে কি কবি ,শোনাও তোমার কবিতা 

তবে বিশ্বাস করো সেদিন আমি তোমাকে বলবো 

চলন্তিকা আর না ,আর না 

আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে 

আমি তোমার কোলে ঢলে পড়তে পড়তে শুনতে পাবো 

তুমি বলছো 

কবি সময় হলো 

কি হলো 

শোনাও তোমার কবিতা।  

কথা বলো

 কথা বলো 

... ঋষি 


শুধু কথা বলো 

আর তো কিছু চাই নি কোনোদিন চলন্তিকা ,

জানতে চাই নি আমার ঘরের হুকে টাঙানো আমি শব্দটা 

তোমার কেমন লাগে দেখতে 

জানতে চাই নি সারা দেশে কেন এত অর্থকষ্ট 

কেন রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ থামছে না। 

.

শুধু কথা বলতে চেয়েছি 

শুধু কথায় কথায় জানতে চেয়েছি মানুষের কষ্টগুলো কোথায় লুকোনো 

জানতে চাই নি কেন পিঁপড়ের কাঁধে চেপে আমার শব্দরা খিদে খোঁজে 

কেনোই বা জীবন বাবু রোজ হেঁটে যায় আমার কাঁধে কান্ড রেখে 

রোজ ফিরে আসে শান্তির খোঁজে তোমার কাছে 

একটু কথা বলবে বলে। 

.

আমি তো কিছুই চাই নি 

তোমার কাছে জানতে চাই নি সাড়ে তিন হাত মাটির  নিচে ফুল ফোটে কিনা 

জানতে চাই নি এই শহরে ভালোবাসার ঘর নেই 

কেন সাজানো ঈশ্বরের ঘর 

কেনই বা রাত্রি ফেরা ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ালে মানুষ চিৎকার করে 

কেন আকাশের চাঁদে এতো দাগ 

তবে কেন চলন্তিকা আমার থেকে দূরে থাকো 

কাছে এসো 

এখানে বসো আমার সামনে 

কথা বলো। 

ওদের কথা



ওদের কথা 


... ঋষি 


বেশ কিছুদিন পর পর ফিরে আসে ওরা আমার ঘরে 

গলার কাছে আটকে থাকে ,

আমি ওদের বসার আসন পেতে দি ,দুটো ভাতে ভাত ,কাঁচা লংকা খেতে দি 

ওরা সবসময় ঘুরতে থাকে আমার চার পাশে। 

এই শহরের রাস্তায় ,হাটে ,বাজারে ,অফিসের কাজের চাপে 

ওরা আমার সাথে থাকে 

আমি অবাক হয়ে ভাবি ওরাই আমার বন্ধু বোধহয় 

আমি ওদের বন্ধু বলি ,লোকে বলে কষ্ট। 

.

সারাদিন পরে ক্লান্ত হয়ে আমি ফিরে আসি আমার আস্তানায়

ওরাও ক্লান্ত তখন আমার মতো ,

ওরা আমার মুখের দিকে তাকায়  ,ওরা হাসে আমার আয়নায়

আমি ওদের প্রশ্ন করি ,কেমন কাটলো দিন ?

ওরা বলে যেমন তোমার ,

আশেপাশে লোকজন ভয় পায় ওদের 

বলে কষ্ট ধুর ,ওরা না থাকলেই তো জীবন বিন্দাস। 

.

এইভাবে দিন কাটতে থাকে 

হঠাৎ করে একদিন সকালের বিছানা হাতড়ে আর পাই না ওদের 

আমি ওদের খুঁজতে থাকি , 

বুঝতে পারি ঢোক গিলতে আর তো কষ্ট হচ্ছে না ,

বুঝতে পারি ওরা আমায় ছেড়ে গেছে  আবারও ফিরবে বলে, 

আমি হাসি মনে মনে 

খানিকটা বিরক্ত হই ওরা  আমাকে না বলে যাওয়ার জন্য।  

আমি জানি লোকে ওদের কষ্ট বলে 

কিন্তু ওরা আমার বন্ধু 

যখন কেউ থাকে না ওরাই তো থাকে

তাই আমি আবারও ওদের ফিরে আসার অপেক্ষা করি । 


 

bhabnar shohor

এই পারদের বেলায় প্রস্তাবিত শহরে স্লোগান দিন বদলাবার  যেখানে পিচ গলছে ,মানুষ গলছে ,গলছে রাতের বিছানায় ভাবনা  গড়িয়ে নামছে ঘাম  সব কিছু কেমন হা...