চলন্তিকা ,প্রেমিক ও আগন্তুক
... ঋষি
চলন্তিকা আর তার প্রেমিক বসে আছে প্রায় ফাঁকা পার্কের এককোনে গঙ্গার ধারে বেঞ্চটাতে। সময়টা রাত্রি তখন ,মৃদুমন্দ বাতাস ,চোখে চোখ ,হাতে হাত ,দুজনের মনের কোনে তখন সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে কিংবা এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় ।
০
চলন্তিকা : এই একটু আস্তে কথা বলো ,কে যেন আসছে আমাদের দিকে।
প্রেমিক : যে আসছে আসতে দেও ,কুছ পরোয়া নেহি ,হাম কিসিকো ডরতে নেহি।
চলন্তিকা : দেখো লোকটা কি বিশাল লম্বা।
প্রেমিক : তাতে কি ?আমিও তো পালোয়ান ,তুমি তো আছো আমার পাশে।
আগন্তুক : এত রাত্রে ,এই সময়,তোমরা কারা এখানে ?
প্রেমিক : আপনি কে মশাই ? এত রাত্রে ,এই সময় এখানে ,আর আমাদের দেখে
আপনি নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন ,আমরা ভাই বোন নিশ্চয় নই।
আগন্তুক : তোমরা ভাই বোন তো নও ,কে তোমরা ?
চলন্তিকা : লোকটা ক্ষেপা নাকি ,নাকি টাইমপাস করছে বলোতো ?
প্রেমিক : আমরা মানুষ এবং ভালোবাসি একে অপরকে ,এবার বলুন তো আপনি কে ? চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে না পার্কের ওয়াচম্যান ,তবে এত কৌতহল কিসের আপনার বলুনতো ?
আগন্তুক : যারা বিশ্বাস করে আমি কেঊ ,একমাত্র তাদের জন্য আমি আমিই ,এটাই আমার পরিচয়।
প্রেমিক : মশকরা করছেন মশাই ,অনেক দিন অনেক কষ্টে অফিস পালিয়ে নিজের মনের মানুষটার সাথে একটু সময় কাটাবো ,কেন বলুন তো আমাদের সময়টা আপনি নষ্ট করছেন। দেখলে তো আপনাকে পাগল মনে হয় না ,মনে হয় ভদ্রলোক। প্লিজ দাদা আপনি এবার আসুন।
আগন্তুক : হ্যা আমি তো সময় কাটাতে চেয়েছিলাম তোমাদের সাথে তাই তো আমার এখানে আসা।
চলন্তিকা : তখন কি আবোলতাবোল বলছেন বলুন তো।
আগন্তুক : আবোলতাবোল ,শুনেছি ওই নামে একটা বই আছে ,যার কবিতাগুলো বিশ্বাস করলে হাসতে ইচ্ছে হয় ,হ্যা যা বলছিলাম তুমি চলো চলন্তিকা তো ? আর মশাই আপনি একজন অখ্যাত কবি তো ?
চলন্তিকা : আপনি কি করে জানলেন ?
প্রেমিক : হ্যা আমি কবিতা লিখি ,সেই অর্থে আমি কবি।
আগন্তুক : যে হাওয়াতে আছে ,যে সময়ে আছে ,যে মুহূর্তে আছে ,আসলে যে সাথে সাথে চলছে সেই তো চলন্তিকা ,চলন্তিকা প্রেমিকা হতে পারে,মা হতে পারে ,হতে পারে সেই ধর্ষিত মেয়েটা কিংবা সেই মেয়েটা যে প্রতিবাদ মিছিলের একেবারে সামনে হাঁটে ,হতেই পারে সে সময়ের প্রেমিকা কিন্তু তুমি লুকিয়ে এই অন্ধকারে পার্কের বেঞ্চে বসে কি করছো ?ভালোবাসা ,সে তো লুকিয়ে রাখার নয় ,সে তো অন্ধকার থেকে ফুটে বেড়োনে এক যন্ত্রনা ,সে তো সময়ের অধিকার। আর আপনি মশাই কবি ,কবিত্বের মানে কি সাদা পাতায় অজস্র স্পর্শহীন আঁকিবুঁকি ,যা শুধু টাইমপাস ,যা কোথাও কোনো দাগ রাখবে না। আমি তো জানি কবির কবিত্ব মানে সময়ের আগুন ,মানুষের চিৎকার ,দিন বদলের কতগুলো অভ্যাস। আর আপনি অন্ধকারে চলন্তিকাকে নিয়ে এইভাবে সময় কাটাচ্ছেন।আপনি যদি প্রেমিক হন তবে আলোতে আসুন কারণ প্রতিটা চলন্তিকার জন্ম আলোতে ,অন্ধকারে রাখলে আপনি আপনার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলবেন।
চলন্তিকা : কে আপনি ?এই ভাবে হাসছেন কেন ?
আগন্তুক : এখনো সময় আছে ,এখনো মুহূর্তরা জীবিত ,এখন সময় তোমার নিজেকে এই পৃথিবীতে পরিচিত করার ,যদি ভালোবাসো তো ভালোবাসাকে আলোতে নিয়ে আসার ,আর কবি মশাই আপনি লিখুন কবিতা আলোর ,চলন্তিকার কিন্তু অন্ধকারে না।
প্রেমিক : এই যে শুনছেন আপনি কে ? আপনাকে বড়ো পরিচিত লাগছে ,প্লিজ যাবেন না ,বলে যাবেন কে আপনি ?
আগন্তুক :যারা বিশ্বাস করে আমি কেঊ ,একমাত্র তাদের জন্য আমি আমিই ,এটাই আমার পরিচয়। তবে আমার পরিচয় জানতে হলে তোমাকে নিজেকে জানতে হবে আগে।
চলন্তিকা : এই তো ছিল ,কোথায় গেলো লোকটা ,কোথায় ? আমার ভয় করছে গো চলো উঠি এখান থেকে ,ওই ল্যাম্পোস্টের আলোর নিচে সিটটাতে বসি গিয়ে চলো।
প্রেমিক : কুছ পরোয়া নেহি ,হ্যাম তো হ্যা না ,কিন্তু চলন্তিকা তুমি বলছিলে না অনেক কবিতা হলো এবার একটু একটু করে এবার একটা উপন্যাস কিংবা নাটক লেখো,পেয়ে গেছি ,পেয়ে গেছি প্লটটা।
No comments:
Post a Comment