কবিতা ভৌমিক
... ঋষি
কবিতা ভৌমিককে আপনি চেনেন না বোধহয়
বছর চল্লিশের একজন বিধবা মহিলা
আপনি দেখেছেন বোধহয় ,
নন্দনের উল্টোদিকের গলিতে চায়ের দোকান
চা ,ওমলেট ,ঘুগনি ,সিগারেট সবই পাবেন , খেয়েছেন বোধহয়
কিন্তু তার কবিতাটা পড়েন নি।
.
নাম ?: কবিতা ভৌমিক ( ভালোবেসে স্বামীর দেওয়া )
বয়স: আগেই বলেছি
পেশা : চায়ের দোকান,সাত বছরের ছেলে নিয়ে চালান
গ্রাম : ফরিদপুর অধুনা বাংলাদেশে
স্বামী : বছর বারো আগে ছেড়ে চলে যায়
স্বামীর দেশ : কলিকাতা
স্বামীর পেশা : কবি
হ্যা মশাই বিশ্বাস হচ্ছে না তো একবার জিজ্ঞাসা করবেন কবিতা ভৌমিককে
শুনবেন তার স্বামীর ছেড়ে যাওয়ার কথা।
.
এই শহরে এমন অনেক কবিতা আছে
এই শহরে এমন অনেক না বলা শব্দ আছে
এখন প্রশ্ন কেন খুঁজছি উত্তর ?
মশাই শেষ অবধি কবি ,
শুনেছি কবিরা আকাশের মতো হৃদয় নিয়ে জন্মায়
শুনেছি কবিদের শরীরের রক্ত আগুনের মাঝে টগবগ করে ফোটে
শুনেছি কবিদের প্রেম কল্পনায় নারী আর প্রকৃতি
শুনেছি কবিদের ঘৃণার কল্পনায় রাষ্ট্র আর সময়
শুনেছি কবিরা বর্ণ চেবায় ,শব্দ দিয়ে পেট ভরায়
শুনেছি কবিরা কবিতায় ঘুমোয় ,কবিতায় বাঁচে
শুনেছি কবিদের বেঁচে থাকা একটা বাউন্ডুলে জীবনা কবিতার খোঁজে
তবে এ কেমন কবি ?
যে কবিতার খোঁজে অন্য কবিতাকে ছেড়ে যায়
যে কবিতা লিখতে সময়কে পিঠ দেখায়
যে কবিতা ভাবতে পালিয়ে বাঁচে ,
না হে মশাই লোকটা কবি হতে পারে না
কবিরা যন্ত্রনা বইতে পারে
কিন্তু কাউকে কষ্ট দিতে পারে না বোধহয়।
.
আমি প্রশ্ন করেছিলাম কবিতা ভৌমিককে
কেন আবার বিয়ে করলেন না ?
উনি বললেন,অপেক্ষা করছি ,পাগল মানুষ ঠিক ফিরে আসবে
আমি বললাম যদি না ফেরে
উনি বললেন ,কবি মানুষ ,কবিতা লিখছে বোধহয়
লিখতে লিখতে এই কবিতাকে ভুলে গেছে ,
তার আর দোষ কি ?
দোষ আমার কবিকে নিয়ে সংসারী করতে চেয়েছিলাম।
আমি মোটেও অবাক হলাম না
নারীরা বোধহয় এমনি হয় ,অপেক্ষা করে ফিরে আসার
নারীরাই পারে এক মানুষে বাঁচতে
সে যেমনি হোক।
তবে মশাই আমি সেই কবিকে চিনি না
তবে আমি খুশি কারণ আমার একটা কবিতা লেখা হলো
লেখা হলো এই শহরের কবিতা ভৌমিককে।
No comments:
Post a Comment