Sunday, August 23, 2020

এক নারী ও দুই দৃশ্য



 এক নারী ও দুই দৃশ্য 

.... ঋষি 


সময় রাত্রি


সময় : হ্যালো ! শুনতে পারছিস। ধুস ভালো লাগছে না কিছু তোকে ছাড়া। 

নারী : ভালো লাগছে না কেন ? এই তো দেখা হলো সেদিন। 

সময় : অন্ধকার হাঁতড়ে একটা জংলী ঘোড়া দৌড়োচ্ছে সবুজ হৃদয়ে ,সেই সবুজটা তুই আর আমি ক্রমশ অন্ধকার আঁকড়ে শহরের রাত্রে ঢেলে দিচ্ছি 

ঝড় ,উড়ে যাওয়া খড়কুটো আর সময়ের ঘর। 

নারী : তুই পাগল করিস না এইভাবে আমায় ,দেখিস একদিন তোর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতে হবে আমাকে সেদিন বুঝবি আমি কত ভারী। 

সময় :ওই সব বুঝতে ইচ্ছে করে না আমার ,ভাবতে ইচ্ছে করে তোকে,এক ঈশ্বরের মতো ,আলোর মতো ,আমার হৃদয়ের ধুকপুকের মতো। 

নারী : এমন করিস না মোটেই ,ছুটে চলে যাবো তোর বুকে ,আমারও যে বুক পোড়ে ,কেন পাগল করিস এই ভাবে। আমি জানি তুই জংলী ঘোড়া আর আমি সবুজ অরণ্য ,কিন্তু একটা কথা বল কবে শেষ হবে আমাদের এই দৌড়  ? কবে  তোর বুকে মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমোতে পারবো  ? 

সময় :ভাবিস না সময়কে সময় দে ,দেখিস এই অন্ধকার শহর একদিন রূপকথার  সময় হবে। 

নারী : আমারও আর এই সব ভাবতে ভালো লাগে না সোনাই,আমিও অপেক্ষা করি তোর মতো। 

সময় : জানিস অপেক্ষা শব্দটায় একটা অদ্ভুত পাগলামি আছে ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো ,কিছু স্থির থাকে না ,ক্রমশ সরতে থাকে ,আর ওটাই তো মানুষের যন্ত্রনা। 

নারী : তুই আবার দার্শনিক হয়ে যাস না ,আমি যাকে ভালোবাসি সে দার্শনিক নয় একজন মানুষ যার একটা বুক আছে ,যেটা আমার আশ্রয়। 

সময় : এটা কি হচ্ছে ,এইবার যে আমি পাগল হবো। 

নারী : ঘুমো বাবু ,আজ অনেক রাত্রি হলো ,পাগলামি করতে হবে না আর কাল কথা হবে। 


সময় দুপুর 


নারী : হ্যালো ! হ্যা বল রে , কেমন আছিস তুই ? 

অন্য সময় : ভালো রে ,কাল রাতে রাত জেগে এক নিঃশ্বাসে  শেষ করলাম বুঝলি কবিতার বইটা।  দারুন দারুন ,তোকে দেবো পড়তে। কি করছিস তুই আজকাল  ?

নারী : আর কি সংসার ,স্বামী ,পুত্রের দেখভাল।  সবই তো এখন একলা হাতে করা ,কাজের লোকটা আসছে না এই লকডাউনে সুতরাং রান্না  ,ঘরের কাজ ,ছেলেকে পড়ানো।  ছেলেকে অনলাইন  ক্লাস করাতে  একবেলা কেটে যায়,তারপর আর সময় পাই না কিছু করার। 

অন্য সময় : তবে তুই যে এত ভালো আবৃত্তি করতিস,এত ভালো কবিতা ,গল্প লিখতিস।কেন নষ্ট করছিস এইভাবে নিজেকে । শোন আমার একটা পত্রিকা আছে ,আমাকে একটা লেখা দে।   

নারী : কই বলিস নি তো তুই একটা পত্রিকা চালাস  ? আমি আর লিখতে টিখতে পারি নি ,ভালো লাগে না আর। এই তো বেশ আছি ,সংসার করছি ,খাচ্ছি ,পড়ছি ,ছেলে মানুষ করছিস। 

অন্য সময় : ভুলভাল যত ,তোরা বাঙালি মেয়েরা না নিজেকে কেন যে নষ্ট করিস এইভাবে বিয়ের পর ,আমি শুনছি না এই সব ,আমার লেখা চায়। 

নারী : কেন তোর বাড়িতে বউ নেই ,সে যদি সংসার ছেড়ে এমন করে তবে 

তোর ভালো লাগবে ,আর আমি তো ওসব ছেড়ে দিয়েছি বহুদিন ,ছেলেটাকে ঠিক করে মানুষ করতে পারলে হয়। 

অন্য সময় : বাড়িতে বউ আছে ,তবে ও নিজের মতো সংসার নিয়ে ব্যস্ত ,এই সবে ওর ঝোঁক নেই। 

নারী : এই আজকে রাখছি রে ,ছেলেটা খেতে বসেছে রে ,ওর আবার আমায় ছাড়া চলে না ,পরে আবার ফোন করিস। 

No comments:

Post a Comment

শেষ শব্দটা

শেষ শব্দটা  ... ঋষি  . শেষ শব্দটা লিখতে লিখতে ইদানিং এক  বিষন্নতা  একে একে শেষ হওয়া প্রতিবাদ ,প্রতিফলন ,অভিমান  কিছুই স্থির হয় না এক জীবনে ,...