Sunday, August 22, 2021

আমি রাধিকা বিশ্বাস

 আমি রাধিকা বিশ্বাস 

... ঋষি 


আমি রাধিকা বিশ্বাস 

যে বছর কোলমাইনের বিস্ফোরণে  আমার স্বামী মারা গেলো 

আমি তখন সদ্য সিঁদুর  কোড়াঁনো তেইশ ,

বাঁচতে শেখা সেটাও যে নারী  ভাবনায় একান্নতলা বাড়ি

নারীর একান্নটুকরো শরীর ,

নারীর আদৌ কোনো বাড়ি থাকে না 

থাকে না ঘর। 

.

প্রথম যেদিন সাদা কাপড় ঢাকা স্বামীর শরীরটা আমার বাড়িতে 

সেদিন বোঝাতে পারবো না কতগুলো হাত যে  আমার দিকে এগিয়ে এসেছিল 

নানান ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছিল আমাকে নারী মানে শরীর 

নারী মানে কোনো মন নয় 

নারী মানে কোনো দীর্ঘশ্বাস নয় 

নারী মানে একটা শারীরিক চুক্তি শুধু পুরুষের সমাজ। 

.

বেশ কিছুদিন কাঁদার পর আমি বুঝেছিলাম 

এই পৃথিবীতে কাঁদে তারা যারা বোকা ,যারা থামতে চায় 

আর নারী মাত্র যে এই সমাজে একটা সহজ বোঝপড়া 

যদি সেই নারী বাঁচতে চায়।  

আমিও বুঝেছিলাম 

হ্যা আমি রাধিকা বিশ্বাস বুঝেছিল বিধবা শাড়ি সেটাও একটা সামাজিক পরিচয় 

আসলে এই শাড়ির তলায় লুকিয়ে থাকে এক মৃত নারীর শরীর 

আর সমাজের কাছে সেই শরীর সহজলোভ্য,

আমিও এগিয়েছিলাম আমার এই শরীরকে অস্ত্র করে ধাপে ধাপে 

আমি বিলিয়েছিলাম এই শরীরকে বিক্রি করে সমাজের কাছে। 

আর দেখুন 

আজ আমি রাধিকা বিশ্বাস না 

একজন ছত্রিশ বছরের একটা বোঝাপড়া 

যে এই সমাজে বুকে দিয়ে ,কয়েকশো পুরুষের বিকৃত কামে 

একজন বেশ্যা। 

.

হু হু ঘাবড়াবেন না 

আমি বেশ্যা বটে তবে আমাকে বেশ্যা বলে সামনে ডাকে না কেউ 

বরং আমার শরীরের গলিতে হাভাতে পুরুষগুলো হামলে পরে বলে 

জানু কেন যে তোমায় আগে পাই নি ,

আর আমি লিপস্টিকের আড়ালে ,চোরা মেকাপের আড়ালে থেকে হাসি 

আর ভাবি 

আমি রাধিকা বিশ্বাস একজন বিধবা

যে বেঁচে আছে শুধু শরীরের একান্নটুকরোর বোঝাপড়ায়। 

No comments:

Post a Comment

জানতাম না

জানতাম না এক প্রতিবাদী আন্দোলন রাতভর মিটিং,মিছিল,অনসন সবকিছু মিথ্যা  মিথ্যা কাগজফুলের মতো গন্ধহীন এশহরে এক পৈশাচিক রাত্রির আয়ু, রক্তের গন্ধ।...