Friday, March 13, 2020

অন্ধকার শরীর


অন্ধকার শরীর
.... ঋষি

আমি রত্না গো ,চিনতে পারলে আমাকে 
বয়স সাঁইত্রিশ ,প্রতিদিন  সোদপুরের ট্রেনে আমাকে দেখতে পাবেন। 
হয়তো দেখে  খুশি হবেন
আমি ঠিক এই গ্রহের না ,আমি ঠিক পুরুষ না আর নারীও না
লোকে আমাকে  অবাক চোখে দেখে ,
তাকিয়ে থাকে আমার বুকের দিকে।
.
বিশ্বাস করুন সেদিন ট্রেনের মধ্যে একটা বছর ছাব্বিশের ছেলে
অবাক ভাবে তাকিয়ে ছিলেন বুকের দিকে
আমি জানি ছেলেটা  জানতে চাইছিল আমার বুকে দুটো বল না কমলালেবু।
আমি কি করে বোঝায় সবাইকে
আমি নারী হতে চাই ,আর জানি নারীর বুক ছাড়া নারী হওয়া যায় না ,
আমিই কি করে বোঝাই বাজারে স্পঞ্জওয়ালা ব্রাও পাওয়া যায়,
আসলে পুরুষের কাছে নারীর বুক ছাড়া স্বীকৃতি কই ?
আমি  শাড়ি পড়ে ,নকল চুল বেঁধে হিজড়া পর্যন্ত হতে পেরেছি
মেয়ে হতে পারিনি ,
আমি জানি এইভাবে  মেয়ে হওয়া যায় না ।
.
আমার মতো মানুষের ওড়নায় আজ কত পুরুষের বীর্য
কন্ডোম এর মিষ্টি গন্ধ আর ভালোবাসার ক্ষত ।
আমাদের ভালোবাসা সে তো অন্ধকারে মেশা
এক অন্ধকার পুরুষ ,
জানি না আর কত ক্ষত তৈরি হলে পুরুষ তুমি প্যান্ট পড়বে ?
জানি না আর কত অন্ধকার পার হলে আমার শীৎকার থামবে ?
আসলে যৌনতায় আমি মেয়ে,
আসলে মাথার ঘিলুতে আমি মেয়ে ।
কিন্তু প্রয়োজন ফুরোনোতে কেউ ই বুঝিয়ে দিতে ছাড়ে না
শরীরের সাথে শরীরের গল্প শুধু ক্ষনিকের
আসলে আমি পৃথিবীর আশ্চর্য যৌন কর্মী।
.
গু থুতু কফ, নাড়ি ভুঁড়ি মাড়িয়ে সময় ঠিক বুঝিয়ে দেবে আমাদের পরিচয়
 তাতে শাড়ি চড়ানোর দরকার পড়ে না, কানের ,নাকের পড়তে হয় না
কিন্তু মনের দুনিয়ায় আমি তো রত্নাই।
কিন্তু কাজল না টানলে যে পুরুষ আসে না
কিন্তু সায়া ব্রা না পড়লে যে আমাকে মেয়ে লাগে না 
মন আর শরীর যে এখনও একসাথে ,বড়ো জটিল এক অন্ধকার।
এবার আপনি ভাবছেন হয়তো আমরা লড়াইতে হেরে গেছি ,
কি তাই তো ? ভুল ভাবছেন।
আমাদের যে হাড়ে হাড়ে আগুন। বেঁচে থাকার স্পর্ধা,
আমরা মেয়ে না হয়েও ,মেয়েরই মতো
আমরা পুরুষ না হয়েও ,পুরুষের শরীর
সমাজ আমাদের নগ্ন করে
আর শাড়ি তুললেই আমাদের হিজড়া বলে। 

No comments:

Post a Comment

জানতাম না

জানতাম না এক প্রতিবাদী আন্দোলন রাতভর মিটিং,মিছিল,অনসন সবকিছু মিথ্যা  মিথ্যা কাগজফুলের মতো গন্ধহীন এশহরে এক পৈশাচিক রাত্রির আয়ু, রক্তের গন্ধ।...