Tuesday, March 23, 2021

অনিন্দ্য(১২)

অনিন্দ্য (১২) 
...ঋষি
অনিন্দ্য আজকাল শরীর আর ভালো থাকে না
তোর বুকে ব্যাথার রোগটা আমারো ধরেছে, 
অনিকেত মারা গেছে এক বছর, বুবুন এখন পাকা সংসারী 
হবে না কেন?  বুবুন যে এখন বাবারে। 
মিরার আঁকা ওই নুড ছবিটা লজ্জার মাথা খেয়ে চেয়ে নিয়েছি আমি মিরার কাছ থেকে 
এখন আমার শোয়ার ঘরে টাঙানো থাকে, 
দু চারজন ঘরে চোখ টাটায় কিন্তু আমার লজ্জা করে না অনিন্দ্য
ভালোবাসলে বোধহয় লজ্জা থাকে না অনিন্দ্য। 
.
আজ দুদিন হলো অনিন্দ্য আমি হাসপাতালে ভর্তি 
বুবুন আসছে,মিরা আসছে,আসছে দাদুভাই 
কিন্তু কেউ আমাকে স্পর্শ করতে পারে না 
তুই সারাক্ষন মাথায় হাত বোলাস, আগলে রাখিস আমায় বুকে করে।
কাল যখন আমি অচেতন,  বুবুন কখন যেন আমার কবিতার ডাইরিটা পড়ে ফেলেছে 
আমার জ্ঞান ফেরার পর প্রশ্ন করেছিল, অনিন্দ্য কে? 
আমি চুপ ছিলাম 
কিছু বলে নি বুবুন, শুধু চলে গেলো গম্ভীর মুখে। 
.
আজ আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি , শরীরটা আর দিচ্ছে না
কাল রাতে সেই বিভ্যস্ত স্বপ্নটা আমি দেখলাম 
দেখলাম তোর ট্রেনে কাটা গলাটা
আর তোর পকেটে সেই রক্ত ভেজা চিঠিটা,
যেখানে লেখা ছিল 
নীরা চল্লাম, আবার দেখা হবে মৃত্যুর পর। 
আচ্ছা মৃত্যু বলে সত্যি কিছু থাকে? 
আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না অনিন্দ্য,চারপাশ অন্ধকার 
বুকে খুব ব্যাথা হচ্ছে, তুই হাসছিস কেন এমন? 
সব অন্ধকার অনিন্দ্য,
শুধু বুবুনের গলা পাচ্ছি, পাচ্ছি বুবুনের কান্নার শব্দ। 
বুবুন বলছে শোন , মা তোমার কবিতার বই ছাপিয়েছি 
নাম দিয়েছি "অনিন্দ্যকে লেখা চিঠিগুলো। "
.
আমি শুনছি তোর কন্ঠ, তোর হাসির শব্দ 
তোর কন্ঠে কবিতা, 
" নীরার চোখের জল অনেক চোখের অনেক
                                 নীচে
                                 টল্‌মল্‌
নীরার মুখের হাসি মুখের আড়াল থেকে
                                 বুক, বাহু, আঙুলে
                                       ছড়ায়
শাড়ির আঁচলে হাসি, ভিজে চুলে, হেলানো সন্ধ্যায় নীরা
                                 আমাকে বাড়িয়ে দেয়, হাস্যময় হাত। "
.
.
অনিন্দ্য তোর  চোখ বেয়ে বোধয় জল গড়ালো এক ফোঁটা। 

No comments:

Post a Comment

জানতাম না

জানতাম না এক প্রতিবাদী আন্দোলন রাতভর মিটিং,মিছিল,অনসন সবকিছু মিথ্যা  মিথ্যা কাগজফুলের মতো গন্ধহীন এশহরে এক পৈশাচিক রাত্রির আয়ু, রক্তের গন্ধ।...