Tuesday, October 31, 2023

ফুরিয়ে যাওয়া ঈশ্বর

ফুরিয়ে যাওয়া ঈশ্বর 
... ঋষি 

হঠাৎ ঈশ্বর ফুরিয়ে যায় এই শহরে 
হঠাৎ সর্বস্ব নিজস্বতায় হেঁটে যায় ব্যস্ত শহরে আগের মতো 
কিছুই থেমে  থাকে না ,
রাস্তার পাশে প্যান্ডেলের বাঁশ ,ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো ,দড়ি,ভাঙা মণ্ডপ 
সব গিলিগিলি যে ,উধাও ।
সব ছড়িয়ে থাকে বিষণ্ণ সন্ধ্যের বারান্দায় 
কিন্তু হাজারো ঈশ্বরের মুখেও তোমার মুখ মনে থাকে
ভুলচুক হয় না মুহূর্তদের ভিড়ে অসংখ্য টানাপোড়েন। 
.
কত কথা তো মনে পরে 
কত কথা তো বলার থেকে যায় অবশিষ্ট মানুষে 
পুরোনো জামার মতো হঠাৎ কেমন ছোট পরে যায় জীবন ,
হৈচৈ করে সেই অভিমানী ঈশ্বর 
আজও যে  তার আলতা রাঙানো পা রাখে আমার বুকে 
শুধু দাগটুকু থেকে গেছে 
আমিও আজও হাসি ,ভাবতে ভালো লাগে 
ঈশ্বর হওয়া থেকে অসুর হওয়াই ভালো 
কারণ তবে বোধহয় পৃথিবীর জন্মদ্বার দর্শন হয়। 
.
সবকিছু গোলমাল হয়ে যায় উৎসবের পরের শহরে 
দু শালিখ ,কিংবা তিন শালিখ ,কোনো পরিসংখ্যান টেকে না 
ঈশ্বর বোধহয় অবশিষ্ট মানুষে যন্ত্রনা খোঁজে। 
আমি চেয়ে থাকি দূরে রাস্তার দিকে 
আজ উদযাপন ,কাল বোধন ,
ঝপাং করে একটা শব্দ হয় চোখের জলে 
এর থেকে বোধহয় আরও জোরে কাঁদা যায় না ,
ঈশ্বরের অপেক্ষায় পরে থাকে অবশিষ্ট কাঠামো আগলে জীবন 
আবার অপেক্ষা অন্যদিনের  
হা ঈশ্বর ,সত্যি কি শুধু একটা সময় 
আর উৎসব শব্দটা শুধুই সাময়িক।

Sunday, October 29, 2023

কেঁদো না আমার জন্য

সরে যাচ্ছি, ক্রমশ কবিতার পাতা
সরে যাচ্ছি চলন্তিকা, প্রমানিত বিক্রিয়া, প্রমানিত রসায়ন 
আস্তে আস্তে ক্রমশ
একটা ছায়ার মত হাত,আবোলতাবোল 
অনিশ্চয়তা একটা অন্তরিন কর্কশ কাক ডাকে নিজের ভিতর। 
.
ব্যক্তিগত ষড়যন্ত্র, ব্যাক্তিগত অসুখ 
ক্রমশ তুমি এগিয়ে চলেছো কংক্রিটের রাজপথে 
আমি ক্রমশ পিছিয়ে চলেছি
নিজের থেকে, জন্মের থেকে জন্মান্তরে, আরো পিছনে
তবু ভালোলাগে ভাবতে কোন একদিন পৃথিবীটা সত্যি ছিল 
কিন্তু সেদিন বোধহয় আমি মিথ্যে ছিলাম। 
.
আজ এক প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা জীবনটাকে দেখলে মনে হয় 
আমার মৃতদেহ,আমার আত্মহত্যা
অথচ কেন যে নিজেকে বোঝাতে পারি না
আমিও সবার মাঝে একজন, 
আমি টলস্টয়, আমি গোর্কি, আমি সুবোধ সরকার নই, আমি নিবেদনের মঞ্চ নই 
অথচ আমি সত্যিও নই, তোমার নই।
তবুও চলন্তিকা আজও স্পর্ধা করি ভাবতে 
তুমি যেদিন  শুনবে আমার মৃত্যুর খবর 
সেদিনও হয়তো তুমি ভুলতে চেষ্টা করবে
একজন অপদার্থ লিখতো কবিতা
একজন প্রেমিক লিখতো যন্ত্রনা
একজন অনামিকবি লিখতো সময় 
আর একজন মানুষ চাইতো বাঁচতে
অদ্ভুত তোমার চোখে জল 
প্লিজ চলন্তিকা আর কেঁদো না আমার জন্য
আমি তোমার কান্না দেখতে পারি না।
.
কেঁদো না আমার জন্য
..ঋষি

Saturday, October 28, 2023

লক্ষ্মী মেয়েদের কথা

লক্ষ্মী বলে দেহাতি মেয়েটার ৭০২ পাতার খসড়া পরে আছে থানার গুমঘরে 
যার ধর্ষণের প্রতিজন অভিযুক্তকে প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, 
লক্ষ্মী বলে সেই মেয়েটাকে ক্রমাগত অপমানিত হতে হচ্ছে তার শশুরবাড়িতে 
কারণ তার বাপের বাড়ি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারি ,
লক্ষ্মী বলে মেয়েটা পয়সা ইনকাম করতে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে 
কারণ তার পতি অকালে মরেছে তিনটে বাচ্চা দিয়ে ,
তা নাকি শুনছি আজকে লক্ষ্মী পুজো 
এ কি তবে লক্ষ্মী মেয়েদের পুজো নাকি এক সাজানো পুরুষতন্ত্র 
সংসারে শান্তির জন্য সারাদিন অনাহারে ঘোমটা টেনে মেয়েদেরকে মানতে হয়। 
.
না না আপনারা বুঝছেন না 
আমার জানার আছে 
লক্ষ্মী মেয়েদের বৈশিষ্ট কি ?
বিয়ের পর সামাজিক পতির সেবা করা ,বাচ্চা মানুষ করা 
রান্না করা ,সংসার সামলানো ,মাথা নিচু করে ঘোমটা পরে থাকা ,
তবে কি লক্ষ্মী মেয়েদের আকাশ দেখতে নেই 
সত্যি বলতে নেই কষ্ট হচ্ছে 
কাঁদতে নেই কারোর সম্মুখে 
শুধু হাসি মুখের মুখোশে সবার জন্য ভাবতে হয়। 
.
তবে কি লক্ষ্মী মেয়েদের সহ্য করতে হয় 
তার পতিদেব যদি রাত করে মদ খেয়ে ফুর্তি করে বাড়ি ফেরে  
তাকে সাদরে গ্রহণ করতে হয় ,
যদি তার পতি দেব সত্যি বলার জন্য তার গায়ে হাত তোলে 
সেই ব্যথার কালসিটে গুলো লুকোতে হয় ,
তবে কি দাঁড়াচ্ছে 
লক্ষ্মী মেয়ে হলে বাঁচতে নেই 
শুধু নিজেকে প্রতিমুহূর্তে হত্যা করে শাড়ির আড়ালে,শাড়ির গিঁটে 
একটা সংসার নামক নিয়মকে মেনে চলা ,
আমি অবাক হচ্ছি না 
এই পোড়া দেশে যেখানে আজও মেয়েদেরকে শরীর ভাবা হয় 
আজও যেখানে মেয়েদেরকে বিয়ের উপকরণ ভাবা হয় 
সেখানে মেয়েদেরকে সত্যি লক্ষ্মী ভাবাটা কষ্টকর 
বরং মেয়েদের লক্ষ্মী পুজো করাটাই  ভালো
মেনে নেওয়া ভালো নষ্ট পুরুষতন্ত্রের সামাজিক আবরণ ।  
.
লক্ষ্মী মেয়েদের কথা 
... ঋষি

Friday, October 27, 2023

বাঁচতে চাই

আকাশে যুদ্ধবিমানের ঘনঘটা
ইউক্রেন কিংবা গাজায় এ কে ৪৭ এর সামনে দাঁড়িয়ে শিশুটা বলছে বাঁচতে চাই, 
চারিদিকে ভেঙে পরছে একের পর এক বিশাল বিশাল কংক্রিটের পাঁচিল, ভুমিতে ফাটল 
মরক্কোয়  অসহায় ভুমিকম্পে দাঁড়িয়ে সেই বৃদ্ধা শেষবারের মত বলছে বাঁচতে চাই, 
ক্যন্সার আক্রান্ত অনিকেত দা মৃত্যুর শেষমুহুর্তে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বল্লেন বাঁচতে চাই,
নিজস্ব এফবি পোস্টে সানগ্লাস লাগিয়ে মৃত মানুষটা বলছে বাঁচতে চাই, 
মায়ের ফ্যালিওপিয়ান টিউবে বেড়ে ওঠা ভ্রুনটা ভীষন কাঁদছে, বলছে বাঁচতে চাই,
অনাহুত প্রেম বিশ্বাসে ঠকে গিয়ে মধ্যরাতে একলা সংযমে চিৎকার করে বলছে বাঁচতে চাই,
এই প্রাচীন ভালোবাসার শহর, শহরের গাছগুলো,মানুষগুলো,পুরনো ট্রামলাইন সকলেই বলছে গুপচুপ করে  বাঁচতে চাই,
শহরে প্রত্যহ ঘটে চলা ঘটনা,রাইটার্স বিল্ডিং,বিনয়, বাদল, দীনেশের স্ট্যাচু সকলেই বলছে বাঁচতে চাই 
এই উৎসব শেষে কবিতার মঞ্চ, হাজারো কবিতার পাতা,কবিদের বুকের গভীরে ঘুমন্ত কবিতারা সময়ের কলমে চিৎকার করছে, বলছে বাঁচতে চাই। 
.
ঠিক তো মশায় বাঁচতে চাই সবাই 
পঞ্চবার্ষিকী সরকার, খবরের সাজানো পাতা,কবিতার দালাল, সেলিব্রিটি ফটোফ্রেম
শঙ্কঘোষের দালান,দেশের তিন রঙা জাতীয়পতাকা,অনুপমের জীবমুখী গান, সাঁওতাল পরগনায় ধর্ষিত সেই মেয়েটা,
ঋনগ্রস্থ সেই কৃষক, কন্যাগ্রস্থ সেই পিতা,পরীক্ষার রেজাল্ট, চাকরীর এপোয়েনমেন্ট লেটার, তোমার দু:খে এগিয়ে আসা কাঁধগুলো কিংবা লোভী থাবাগুলো
কিন্তু
কিন্তু মশাই
আমি জানতাম ভালো থাকাটা,বাঁচতে চাওয়াটা একটা আর্ট
কিন্তু সেটাই ক্রমশ কেমন যেন ফিকে হয়ে যাচ্ছে 
মানুষ দৌড়চ্ছে আধুনিকতা আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যাস্ততার সাথে
মানুষ হারাচ্ছে,মানুষের বেঁচে থাকা মানুষের সাথে
আমি মানুষের চিৎকারগুলো ইদানীং শুনতে পাই 

কারন আমিও যে সেই মানুষগুলোর দলে দাঁড়িয়ে  একদা অপরাধী ও প্রেমিক। 
.
বাঁচতে চাই 
.. ঋষি

Thursday, October 26, 2023

ছুটছি


আগুনে জ্বালা, আগুনে সময়, মৃত বিপ্লব,
কবিতার দালাল
আমি ছুটছি, আমাকে তাড়া করছে কেউ
মানুষের মত ভিক্ষা করছি,হাসছি, কাঁদছি
জন্মানো শোক
মৃতদেহের কবিতা
তবু বুকের ভিতরে আজ মহাউৎসব। 
.
সত্যি তো উৎসব মরে না
ভালোবাসা জন্মায় কিন্তু ভালো থাকে না 
সময় বদলায়,
আমি ছুটছি রোজ, আমাকে তাড়া করছে কেউ
দরজা খুলে দেখি 
বিপ্লব দাঁড়িয়ে, এত ক্ষোভ, এত আগুন, শহুরে কবিতা
আগুনে জ্বালা, আগুনে সময় আর অনেকগুলো মৃতদেহ
মানুষগুলোর পচা গলা লাশে লেখা বাঁচতে চাই।
.
তারপর 
আমি ছুটছি, আমাকে তাড়া করছে পাপ 
ক্রমশ একটা চোঙের ভিতর দিয়ে ছুটছি
বানান ভুল করছি সম্পর্কের। 
দেরী হচ্ছে, দিন কাটছে, 
চোঙটার একদিকে পৃথিবী, অন্যদিকে অনন্ত
ভয় করছে, ঠান্ডা শরীর 
একটা অর্ধেক জন্মানো ভালোবাসা তোমার ভিতরে
আমি পুরোটা চাইছি, 
ক্রমশ চোঙটা হারিয়ে যাচ্ছে অবহেলায়
কবিতা উৎসবের আগে ঘুম ভেঙে আয়নায় দেখছি 
তুমি তোমার ফোকলা দাঁতে সুখ চিবোচ্ছো। 
.
ছুটছি
..ঋষি 

Wednesday, October 25, 2023

hasi

তোমাকে নিয়ে আমার স্বপ্নের কমতি নেই 
ফুটপাথে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চা খাবো 
সমুদ্রের বালিতে পাশাপাশি আমাদের ফুটপ্রিট থাকবে ,
কাঁকড়ার মতো ঢুকে যাবো তোমার ভিতরে 
তোমার বুকের গন্ধে বিভোর হয়ে ভাববো এই তো বেশ। 
এই শহরে হাতে টানা রিক্সা চড়বো কিংবা ট্রাম
সময়ের মাটিতে পুঁতে দেব বিশুদ্ধ একটা নতুন প্রজাতির গাছ  
যে গাছে ফুল হবে ,ফল হবে ,নিশ্বাস শুনবো ,ঘুমোবো 
আর তোমার মতো চিৎকার করে বলবো কাউকে দেব না তোকে । 
.
ভালোবাসা মানুষের এক ব্যাক্তিগত অসুখ 
সারা শহর যখন উৎসব ক্লান্ত ঘুমে ঢলে পড়ছে বিষন্নতায় 
তখন এই শহরে তোমার জামার বোতাম খোলার শব্দ শুনছে কেউ
বুকের ভিতর জঙ্গলে আগুন লাগছে
অনুভবে উঠে আসছে তোমার তপ্ত নিশ্বাস  ,
অনেকটা না বলা গলার কাছে আটকে চিৎকার করছে 
শুধু আমার,শুধু আমার বলা যাচ্ছে না । 
হচ্চে না ,হচ্ছে না কিছুতেই , সানগ্লাস লাগিয়ে হাসিমুখে ক্লিক 
নেওয়া যাচ্ছে না একের পর এক লাইক ,সাজানো ছবিতে মেকি হাসি 
তবুও জানি ,তবুও মানি 
'বুকের আগুনের ভিতর একটা বোধ আজও সোনার পাখি হয়ে জ্বলছে 
মাথার চারপাশে চক্রাকারে ঘুরে বেড়াচ্ছে মুহূর্ত 
ভালোবেসে ভালো রাখাটা সত্যি 
ভালোবাসা  একটা অসুখ তাও  সত্যি 
তবে সত্যি নয় এই মুহূর্ত আর এই বেঁচে থাকা 
তবু হাসছি 
কারণ হাসতে থাকাটাই  নিয়ম। 
.
হাসির কথা 
... ঋষি

Monday, October 23, 2023

বৃষ্টি বিঘ্নিত সুখ

এই অসময়ের বৃষ্টি আরেকবার প্রমান করে না
এই শহরে আজও ভালোবাসা বেঁচে, 
একটা সস্তা, রিমেকি গানের মতো চারিদিকে এতো ফুটেজ খাওয়া ক্লিক
সত্যি কি প্রমান করে না আমরা মিথ্যা দিয়ে চোখ লুকোতে চাই। 
উৎসবের শহরে এত প্যান্ডেল,এত রোশনাই 
এত হাতে, হাতে, তোমার হাসিমুখ
কেমন একটা প্রমান খোঁজে
শুধু ভালোবেসে তবে ভালো রাখা যায়। 
.
নি:শব্দে একের পর এক অপরাধ ঝরে বৃষ্টি ফোঁটায়
সকলের নতুন শাড়ী,নতুন জামা,  বস্তা বন্দী ঘোরা পথ
চোখ ঝলসে ওঠে, 
আবছা চশমার কাঁচের বাস্পে বৃষ্টি বিঘ্নিত সুখ।
মানুষ কি সত্যি নিয়ম করে উৎসবের সামনে দাঁড়ায়, ভালো থাকার জন্য
নাকি প্রতিদিনকার আয়নার সামনে আমরা সকলে দাঁড়িয়ে নকল মুখোশে মুড়ে
ভাবতে চাই,   ভালো আছি 
এই তো বেশ।
.
এর পরও উৎসব 
অতি প্রেমের কবিতার মতো তোমার রুক্ষ্ম কন্ঠে ঝরতে থাকে ক্ষোভ, 
আমি বৃষ্টির উৎসবে শান্তনা খুঁজি কালবেলায় 
কান পাতলে শুনতে পাই ক্যামেরায় ক্লিক, 
তবু কিছু মিথ্যে হয়ে যায় না 
কারণ বৃষ্টির হাত ধরেও শহরের রাজপথ আজও ভীড়ে ভারাক্রান্ত
আর আজও সকলে ভালো থাকা খুঁজছে। 
.
 বৃষ্টি বিঘ্নিত সুখ
.. ঋষি 

Monday, October 16, 2023

বন্ধ দরজার ওপারে

দরজাটা পাল্লাখানা খোলা ছিল চিরকাল 
সুন্দর করে বাহারি পর্দা দিয়ে সাজানো ছিল বাইরে দিয়ে 
এসেছে অনেকে ,
কেউ বসেছে ,কেউ হেসেছে ,কেউ খেলেছে 
অনেকের যাওয়ার সময় পর্দাটা ছিঁড়ে ,পাল্লা ভেঙে চলে গেছে। 
আমি দর্জি ডেকেছি ,দেখেছি কাঠ মিস্ত্রি 
তারপর আবারও বলেছি "এসো "
এসেছে অনেকে ,কেউ একটা সকাল ,একটা বিকেল কিংবা সন্ধ্যা 
কেউ যাওয়ার সময় আলতো করে ভেজিয়ে দিয়েছে দরজা 
তারপর অনেকেই দরজার সামনে থমকে দাঁড়িয়েছে 
অনেকে এমন ছিল যাওয়ার সময় আমাকে অনুভব দিয়েছে 
যেতে চায় না সে 
কিন্তু চলে গেছে। 
.
তারপর কখন যেন তুমি এলে 
আমার মনে হলো আর আর কারোর আসার প্রয়োজন নেই 
আর কাউকে বলার দরকার নেই " এসো ",
তাই দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছি ,
তুমি এসেছো ,তুমি যাও নি ,তবু আমার ভিতরে বেহালার সুর
তুমি বসে আছো আমার সামনে ,তোমার রয়ে যাওয়া আমার ভিতরে 
তবু আমার একলা কবিতা।
এখন আমার ঘরেতে শান্তি 
এখন ঘরেতে বসে থাকা তুমুল ঝিমুনিতে তোমার মাঝে 
এখন আমার মন দিয়ে তোমার পায়ের শব্দ শোনা ,
এখন আর আমার ঘরের কোনো দরজা নেই ,সত্যি প্রয়োজন নেই 
বেশ তো  আছি তোমায় নিয়ে 
তোমার অপেক্ষায় আর দীর্ঘশ্বাসে। 
.
বন্ধ দরজার ওপারে
.. ঋষি

সেই সময়

সবকিছু চাপা পড়ে যায়
জীবনে কতবার তো দেখলাম কত মানুষ কাঁদছে
অথচ চারপাশ বরাবর একরকম, কোনো বদলই পার্মানেন্ট নয়।
আমার বন্ধু রাজদীপ হঠাৎ হারিয়ে গেলো অকাল মৃত্যুতে
কি বদলালো, 
আমরা বন্ধুরা সকলেই ব্যাস্ত নিজের মত 
সমস্ত তার ছবি ধুলোচাপা আজ।
.
কত প্রেম, কত সংসার কত মন ভাঙতে দেখলাম
মানুষের মাঝখানে থেকে হিংসা,ঠকানো, মুখোশ,মিছিল 
সব দেখলাম,স্রোতা হয়ে শুনলাম,বুঝলাম
প্রতিটি মানুষের একটা গল্প আছে
গল্প আছে মঞ্চের উপর দর্শক আসনে যারা তাদের
আবার যারা ড্রপসিনে লুকোনো অভিধানে পাঠ মুখস্থ করছে।
.
সত্যি হলো আমাদের সকলের মধ্যে একটা পাগল বোধ কাজ করে
আমরা সকলেই কি একা নই? 
জীবনের অভিনয়ে আমাদের আভ্যন্তরীণ বোধ আমাদের মানতে শেখায় 
ভিতরের প্রতিবাদগুলো সামজিকতায় মাথা নিচু করে,
আমরা চিৎকারগুলো দমবন্ধ রাখি সেই পাগল বোধের মতো 
যে রোজ অফিস ফেরত সেই ছেলেটা একমুহুর্ত গিয়ে দাঁড়ায় তার বিবাহিত প্রেমিকার বাড়ির সামনে
কিংবা সেই মেয়েটা সংসারে হাজার কাজে অন্তত দিনে একবার গীতবিতান থেকে বের করে তার প্রেমিকের শেষ চিঠি,
কিন্তু কিছু কি বদলায়? 
একটা হাসিখুশি মানুষের ভিতরেও যে একটা পাগল বাস করে আমরা সেটা কজন বুঝি
কজন বুঝি সেই মারাত্নক মাতাল ছেলেটা রোজ রাতে এই শহরে গোলমাল করে না
আসলে চিৎকার করে প্রেমিকার নাম ধরে, 
কিংবা সেই শিশুটা বড্ড কাঁদুনি, আসলে সে শেষ দুদিন কিছু খায় নি, 
কিন্তু কিছু কি বদলায়
বদলায় সময় সমাজ, নিয়ম,হিসেব, অধিকার,উঁচু নিচু পাঠ,ওয়াইট কলার,দরিদ্র
কিছু না
এই শহরে এমন অনেক মানুষ আছে একটা নির্দিষ্ট ডোরবেলের অপেক্ষা করে আছে সারাজীবন 
যদি দরজা খুলে একবার দেখতে পায় সেই সময়।  
.
সেই সময় 
.. ঋষি 



ভালোবাসার চাঁদ

চাঁদে প্রাণ আছে এই ভেবে কেউ এগিয়ে যায় অনবদ্যের দিকে 
কেউ পথ চলতি হঠাৎ ছেড়ে দেয় প্রেমিকার হাত 
কেউ আবার চিৎকার করে মাঝরাস্তায় প্রেমিকার নাম ধরে 
কেউ কেউ ভালোবাসাকে  শরীর ভেবে সঙ্গমে লিপ্ত হয় অন্যে পুরুষের সাথে 
কেউ আবার আগুনে ঝাঁপ দেয়  হঠাৎ কোনো একলা দিনে 
কেউ আবার একলা অপেক্ষায় অন্ধকারে দিন কাটায়। 
.
কেউ ক্ষুধার্তের মুখ থেকে কেড়ে নেয় থালা
কেউ যত্ন ক'রে তাকেই বেড়ে দেয় ভাত আর ভালোবাসা  
সময় বুভুক্ষুর মতো তৃষ্ণার্ত মরুভূমিতে ভিক্ষা করে 
তখন কেউ  জলকেলিতে খুঁজে নেয় আনন্দ। 
কেউ ভালোবাসার আপদতা  মরেছে ভেবে এগিয়ে যায় অন্য প্রেমের কাছে 
কেউ বেহুলার ভেলা নিয়ে ভেসে পরে গাঙুড়ের জলে
ভেসে যায় একা একা
একলা  আঁচল দিয়ে আগলে রাখে তার পচা ,গলা লুকোনো ভালোবাসা । 
.
যখন পাথুরে চাঁদের মাটিতে  মুখ থুবড়ে পড়ে ভালোবাসা 
আত্মঘাতী ট্যাংকার একলা আবিষ্কার খোঁজে মনের গভীরতায় ,
আত্মঘাতী মানুষেরা বুঝতে পারে না 
ভালোবাসা  শুধু খিদে নয় ,তৃষ্ণা নয় ,একটা ক্লোরোফরমিয় সৃষ্টি 
যা মানুষকে বাঁচাতে  সাহায্য করে আগামীর জন্য 
যা আগামী প্রজন্মের দিয়ে যেতে পারে অস্তিত্বের উপস্থিতি। 
চাঁদের প্রাণ আছে ভেবে যারা স্বপ্ন দেখে 
তারা এটা বোঝে না বিষ খেয়ে হয়তো যন্ত্রনা মেটানো যায় 
কিন্তু অপেক্ষার থেকে বেশি সুখ ইহজগতে নেই ,
অণুবীক্ষণে নিজেকে আবিষ্কার করা 
মুখোশ খুলে মুখোশ পরা সব মানলাম শক্ত 
কিন্তু তার থেকেই শক্ত ভালোবাসার হাত ধরা
অপেক্ষায় চাঁদের মাটিতে সবুজ গাছ লাগানো । 
.
ভালোবাসার চাঁদ 
ঋষি

Saturday, October 14, 2023

অন্যদিন

বাজলো তোমার,,,,,,,, 
বাজলো না, শুনলেন না আপনারা সকালের রেডিওতে প্রতিবার একইরকম বীরেন্দ্রবাবু। 
বললাম তোমাকে শুভ মহালয়া
সেই একই বাতাসে পাখির ডানা ঝাপটাবার শব্দ  শুনতে পেলাম 
শুনতে পেলাম তাচ্ছিল্যের হাসির শব্দ 
তোমার কন্ঠ, মহালয়া কখনও শুভ হয় না 
শুভ হয় ভাবনারা। 
.
ভাবনা? 
সে এক মজার গল্প এক যে ছিল রাজা, এক যে ছিল রানী
ছোটবেলায় শোনা নটে গাছটি মুড়িয়েছে বহুদিন 
তবু ফুল বেচতে বেচতে দিদিটার নাম হয়ে গেছে ফুলি দি 
তবু রফিক চাচা পায়রা ওড়াতে থাকা ভাবনারা আজ আমার মুক্তি
তবু ভালোবাসায় মৃত লোকটার নাম হলো দেবদাস। 
.
গড়িয়াহাটে মারাত্নক কেনাকাটার  ভীড় তখন 
তোমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম নীল আকাশি শাড়িতে ভীষন ব্যস্ততায় 
তবে এই প্রথম ইচ্ছে হলো না তোমার সাথে কথা বলতে
মনে হলো উৎসবের শহরের পাশে দাঁড়িয়ে আছি আমরা একে অপরের হাত ধরে
তোমার অন্য হাতে তখন একটা গোটা সংসার। 
তুমি হাসছিলে খুব
হঠাৎ তোমায় বলতে ইচ্ছে করলো শুভ মহালয়া
উৎসবের শুভেচ্ছা
এইবার আমার ঘুম ভেঙে গেলো 
স্পষ্ট  শুনতে পেলাম নিচে বাবার ঘরে পুরনো রেডিওর শব্দ
আপনারা শুনবেন ১০৭ মেগাহার্জে উৎসবের আকাশ আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান মহিষাসুরমর্দিনী
আপনাদের সকলকে জানাই শুভ মহালয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা। 
.
অন্যদিন
.. ঋষি 



Friday, October 13, 2023

বোতল বন্দী

এতটা জীবন তৃষ্ণা নিয়ে মরে যাবো 
হাজারো রহর্স্য ,অনবদ্য চাঁদনীর  হাতছানি ,কতকিছু তো বাকি ,
শৈশব ,জীবিকা ,যৌবন ,আগামী সুগার প্রেশার কোলেস্টেরল থাইরয়েড ইউরিক এ্যাসিড
দুর্লভ প্যাকেজ ,কিন্তু কি যেন হলো না ,কি যেন 
বাঁচা ?তোমাকে খাওয়া চুমু ,অপরাধী সঙ্গম 
সব কেমন অসমাপ্ত রয়ে গেলো। 
.
অথচ কত দেশ, কত নদী, কত সমুদ্র, কত ঝর্ণা, কত কুয়াশা
গভীর পর্বতের রহস্য ,কত না পড়া কবিতা ,হাজারো কবি ,সাহিত্য 
বিচিত্র মানুষ ও সংস্কৃতিকে জানাই হল না ,
অনন্ত যৌনতৃষ্ণা ,শৈশবের নিষিদ্ধ ফল আর পাপ 
বাধ্যতামূলক সতীত্ব 
সমোলোচিত সংযম ,সম্মান 
মনোগ্যামিতে কিংবা লুকোছাপা পরকীয়ায় লুকোনো বাঁচা 
সবকেমন অজানা রয়ে গেলো । 
.
আসলে সত্যিটা হলো প্রতিটা জন্মের সামাজিকতা আর হিসেবনিকেশ 
মানুষকে বন্ধনে শিক্ষিত করে ,
ভিতরে সেই বাঁচতে চাওয়া শৈশব নামক বালকটা কিংবা বালিকাকে
শিকল বন্দি করে হিসেবি নিশ্বাস নিতে শেখায় 
পৌনঃপুনিক বাপ্ ঠাকুরদার আফিং খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে বেঁচে থাকাটুকু । 
নিজের দেশে প্রবাসী কিংবা গৃহবন্দী  থাকার মতো 
আমরা বাঁচি 
কিংবা বাঁচতে চেষ্টা করি 
বোঝাপড়ায় নিজের জীবনটুকু বোতল বন্দী  রাখি 
হাসি ঠিক 
আর নিজেকে মিথ্যে শেখায় 
সত্যি বোলো ,
সমাজে সংযমের মতো পবিত্র বস্তু আর কিছু নেই। 
.
বোতল বন্দী 
.. ঋষি

ধর্ষন

ভাবি আর ভাবি 
মাঝে মাঝে নষ্টদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াই 
মাঝে মাঝে গিয়ে দাঁড়ায় সেই নষ্ট মেয়েদের শরীরের কাছে 
মাংসের পাহাড় বেয়ে ঝরিয়ে দি আমার জিভের লোনা, ধারালো দাঁত ।
তারপর প্রতিবারই কবিতার কাছে ফিরে আসি প্রতিবাদ করি ,মাথা ঠুকি
মাথা নিচু করে নিজেকে নিঃসঙ্গ করে ,
নিজের দুহাতে ,মুখে কালি মেখে  
স্বীকার করি আমি নপুংসক,আমি নষ্ট সময়ের অপরাধী । 
.
সময়ের কাছে মাথা নিচু করতে করতে 
আজকাল মাথা খাঁড়া করে দেখতে পাই না উৎসবের বিজ্ঞাপন, 
হাজার কপোত কপোতী হেঁটে যায় তোমার দিকে।
 আমি  চোখ বন্ধ করলেই 
শব্দরা  সব ভালোবাসা খোঁজে এই শহরে 
আর আমি ,
আমি তখন গুন্ডামি করি ,তোমায় খুঁজি এই শহরের অলিতেগলিতে
আমার স্পর্ধা আমি তোমাকে ছুঁই কবিতা জানা স্বত্বেও 
জানা স্বত্বেও ভালোবাসা অপরাধী না ,অপরাধী মানুষ। 
.
লাইক ,কমেন্টস ,প্রতিবাদ মিছিল আর নীতিবাদী কবিতায় যখন কামদুনি ধুঁকতে থাকে 
তখন তার সারা শরীরে আর সারা ভারতবর্ষে লেগে যায় পুরুষের আস্পর্ধা 
সেখানে দাঁড়িয়ে আমি তখন  অপরাধী 
অথচ কি অদ্ভুত আমি বেকসুর ছাড়া পাই,
এই শহর তখন ওয়াইট কলার লাগিয়ে আমাকে বরন করে সময়ের বিবর্ণতায় ।
আমি ভাবি, আমি বুঝি এই তবে কবিতা 
এই তবে শহর 
আমার কষ্ট হয় যারা ভাবে তার পরিচয় শুধুই শরীর  ,তার জন্য 
আমি চিৎকার করে কাঁদতে থাকি নীতিবিরুদ্ধ প্রেমের দরজায় 
এইবার তবে মুক্তি দেও ভালোবাসা 
আমি না হয় সময়ের কবিতায় নষ্ট হয়ে যাই
তারপর না হয় গিয়ে দাঁড়াবো তোমার সামনে
বলবো যে যাই বলুক এইবার তবে মৃত্যু দে আমায়
আমি ধর্ষন করেছি তোকে ।
.
আমি ধর্ষন করেছি তোকে
... ঋষি

Tuesday, October 10, 2023

উৎসব

উৎসব 
... ঋষি 

ভিখিরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি তোমার দরজায় 
তুমিও হাত জোড়ে দাঁড়িয়ে আমার কাছে ,
মুক্তি চাইছো তুমি 
আর মুক্তিপণ হিসেবে আমাকে দিয়ে যাচ্ছো মৃত্যু ,
আমি শুধু আমার কথা বলি 
অথচ আকাশের স্বপ্নে আজও কাশফুলের ঘরে উৎসব
যেন ছড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসে মৃত্যুর শব্দ 
জানি কষ্ট হচ্ছে তোমার। 
.
তোমার কষ্টের মার্জনা সম্ভব না 
তোমার জীবিত উপার্জনের কান্নাগুলো আমার মৃত্যুর থেকে বড় 
অনেককিছু লিখতে চাইছে কবিতা 
অথচ আমার চোখের কাঁচে জমানো বাষ্প তোমার নিস্তব্ধতায় বোবা
বোবা এই শহরের বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়ানো ,পার্কের বেঞ্চে ,চায়ের দোকানে মুহূর্তগুলো 
গলার কাছে আটকে আছে শব্দগুলো 
প্লিজ একবার ,প্লিজ যদি। ....
.
জানি ভিখিরিদের কোনো বাড়ি থাকে না 
স্মরণে থাকে একটাই শব্দ খিদে 
আমি বুঝিনি তোমার মুহূর্তগুলো আমার খিদের মতো আগামী 
আজ শুধু ভাবনার কাঁচে একটা সড়ক এগিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি গড়ানো যন্ত্রনায়, 
অনেক কিছু লিখতে চাইছে কবিতা 
কিন্তু তোমাকে কেন যে কিছুতেই বলতে পারছে না 
প্লিজ যাস না ,প্লিজ ফিরে আয় 
এখনো কবিতা লেখা বাকি 
শুধু অসময়ের অসতর্কতায় চোখ বেয়ে গড়িয়ে নামছে জল 
খুব বৃষ্টি হচ্ছে শহরে 
অথচ উৎসবের মেজাজে বুঝছে না কেউ।

মৃতদেহ

মৃতদেহ 
... ঋষি 

তোমার হাত ধরে চলন্তিকা কবিতার কাছে থাকা
আমি কেউ নই ,চলন্তিকা তোমার বর্ণ গুলো সব 
বুঝি নি তোমার সাথে থাকা 
আমার কবিতার পথ ,
অগোছালো একটা মানুষ ,একটা জংলী সত্বা চলন্তিকা 
আমি কবিতায় লিখি। 
.
সব কেমন বিধস্ত ,সব কেমন নিস্তব্ধ 
চলন্তিকা তোমার পায়ের শব্দটা আমি শুনতে চাই আমার বুকে 
তোমার বুকের ধুকপুকে আমি যে এবার মরতে চাই 
অথচ আমি যে পাপী ,
আমার পাপ আমার যন্ত্রনাগুলোকে মুখ পুড়িয়ে 
পুড়িয়ে ফেলে তোমায়। 
.
আমি  তোমার মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকি 
কাঁদতে কাঁদতে পৌঁছে যায় কবিতার পুরোনো পাতায় 
যেখানে চলন্তিকা  স্বপ্ন ছিল 
কবিতাগুলো ছিল বুকের দেরাজে রাখা তোমার হাসিমুখ ,
অথচ আমার জঘন্য পাপ  
সময়ের কাছে দাঁড়িয়ে তোমার মৃত্যুর দিন গুনছে 
দিনগুনছে তোমাকে হারানোর। 
জানি চলন্তিকা আর আসবে না আমার কবিতায় 
জানি ক্রমশ আরো দূরে ,আরো দূরে সরে যাবে তোমার পায়ের শব্দ 
আমি ক্রমশ হারিয়ে যাবো পিছনে 
আমার কবিতায় চলন্তিকা আর তার বর্ণগুলো 
আর কবিতা লিখবে না 
লিখবে মৃতদেহ সৎকারের পদ্ধতি 
আর আমার বুকের পাঁজরে চলন্তিকা থুথু ছিটিয়ে বলবে বারংবার 
তুই আদৌ যোগ্য ,আদৌ  .........

কাঁচগুলো

কাঁচগুলো 
... ঋষি 

একটা স্বপ্নের হাত ধরে চলতে চলতে 
হঠাৎ ভুলে গেছি বিস্তীর্ণতা আর সেই মানুষটাকে 
অথচ স্বপ্ন গুলো তার 
বাঁচাগুলো তার,
একটা ভাঙা কাঁচের ভিতর আজকাল একটা অচেনা মানুষ 
চিনতে পারি না নিজেকে। 
.
বড় অনাদরে ,বড় স্বার্থপরতায় রেখেছি তাকে 
আজ তার  পাহাড়ের মতো শোক ,আজ তার অভিমানগুলো বারুদের ঘর 
পুড়ছে সে ,ধ্বংস চাইছে আগামী ,
আকাশের পাখি ,আর তার শৈশবটুকু 
আগলে রাখতে পারি নি 
পুরুষ আমি তার চোখে,আর নিজের চোখে স্বার্থপর মানুষ। 
.
অসম্ভব এই মুহূর্ত 
আগুনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আগুনে তাপটুকু বড় প্রিয় লাগে 
নিজের শরীরে ছুরি আঘাত করা আজ সহজ 
 তার যন্ত্রনার কাছে মৃত্যুবরণ করতে চাই ,
ফিরতে  চাই আগামী জন্মে যদি একবার তাকে ফিরে পাওয়া যায় ,
বুঝি নি তার হাসিটুকু আমার যাপন ছিল 
তার সঙ্গে থাকা আমার জীবন ছিল। 
আজও আমি আছি ,সেও  আছে 
মুখোমুখি 
অথচ আমাদের পায়ের তলায় আমার জমানো পাপ কাঁচের গুঁড়োর মতো ছড়ানো 
আমরা হাঁটছি  ঠিক 
কিন্তু সে আমার থেকে দূরে ,আরও দূরে আমার বিপরীতে 
হা ঈশ্বর ,ক্রমশ হারিয়ে ফেলছি তোকে।

Friday, October 6, 2023

সত্যিটা বলে ফেলুন

যৌন পিপাসা নিরুত্তরে এক অন্ধকার ডাক 
ডাকটা অমান্য করা মুশকিল 
আবার মেনে নেওয়াও মুশকিল জানি 
তবু একবার নিজের বুকে হাত রেখে বলুন তো মিথ্যা কি ?
কেন দেখাচ্ছেন ?
কেন দেখাচ্ছেন আপনারা সুখে থাকার বিজ্ঞাপনী সেলফি 
সত্যি বলতে পারছেন না ,ভয় পাচ্ছেন
মুক্তি নেই ,মুক্তির পথে জটিলতা। 
কি চাইছেন ?
নিয়মের সমাজের অধীনে বোঝাপড়া নামক শব্দের সাথে আলিঙ্গন করে 
এই জীবনটা  কাটিয়ে দেবো এমনি। 
.
কি ভালো আছেন তো মশাই ?
নিজেকে খুশি প্রমাণিত করতে জড়িয়ে আছেন সমাজকে সাপের মতো 
তাজমহলের সামনে সাজানো ফ্যামিলি ফটোফ্রেম  
কাঞ্চনজঙ্ঘার পাহাড়ে বুক চিতিয়ে ছবি ,ভালো আছি ,
দিঘায় সমুদ্রের বালিতে জোড়া কাঁকড়া 
বিশ্বাস করাতে চাইছেন নিজেকে ভালো আছেন 
আমি তো বুঝছি মশাই সবটাই, ভয় পাচ্ছেন ,ডিভোর্স ,সমাজ ,নিয়ম 
থাক আর সত্যি বলবো  না। 
.
আপনাকে বলছি ম্যাডাম 
বেনারসী পরে ,সুট ,টাই পরা সামাজিক  মানুষটার পাশে আপনাকে বেশ লাগছে 
ব্যাংক ব্যালান্স ,জীবন বীমায় পাশাপাশি নাম ,বেশ লাগছে। 
তবু রাতের বিছানা জানে ম্যাডাম আপনার শরীরে আজ বহুদিন লাগে নি 
পুরুষের ঘাম ,বালিশের শহরে নেই কোনো পুরুষালি গন্ধ 
সাজানো গোছানো সংসার, 
সেই বোঝাপড়া। 
আজও জানলার দিকে তাকিয়ে আপনি আকাশ খোঁজেন 
সত্যি বলতে পারছেন না তো 
বাপের বাড়ি ,শশুর বাড়ি ,পাড়া প্রতিবেশী কি বলবে। 
.
কি বলছেন আপনারা ,বড্ড বেশি সত্যি বলছি 
দেখে নেবেন ,
তা দেখে নিন
আমি যে জেনে গেছি ব্যাপারটা 
আমি যে জেনে গেছি বোঝাপড়া করে সময় কাটানো যায় 
কাঁদা যায় একলা নিজের কাঁধে মাথা রেখে 
ফটোফ্রেমে  ফ্যামিলি ফটো সাজিয়ে নিজেকে বোঝানো যায় 
ভালো আছি ,
কিন্তু ভালো থাকতে একটা মানুষ  চাই ,একটাই মানুষ 
শুধুই  শরীর নয় ,শুধুই বন্ধু নয় ,শুধু একটা বিশেষ স্পর্শ 
যার সাথে ভালো থাকা যায়
সুতরাং সময় আছে আর মিথ্যে নয় 
অনুরোধ সত্যিটা বলে ফেলুন।  
.
সত্যিটা বলে ফেলুন 
,,, ঋষি

তোমার অনুভবে

তোমাকে অনুভব করে বুঝেছি
আকশের চাঁদে যেমন দাগ আছে তেমনি তোমার সারা শরীরে মনে পোড়া দাগ, 
একটা মধ্যাহ্নের ধুকতে থাকা আগুন তুমি
যার স্নানের ঘরে জলের ধারার আড়ালে লোকানো আছে একান্ত গোপন শোক।
অজস্র পুরুষের মৃত প্রতিশ্রুতি তোমার হাসির ঝিলিকে ঘুমিয়ে পড়ে ঠিক
কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ জেগে ওঠে শয়তানের মতো মধ্য রাতে তোমাকে কাঁন্নাতে। 
.
তোমাকে যারা বলেছিল কালো হরিণী চোখ 
তোমাকে যারা বলেছিল ভালোবাসি 
তারা সকলেই আজ ব্যাস্ত আজ নিজের সংসারে
আর তুমি ব্যস্ত কাটানো সময়ের যোগফলের ক্রুস কাঁটায় দু:খের সোয়াটার বুনতে, 
আমি বুঝি, আমি জানি
শুধু জানি না নিরন্তর এই যোগ বিয়োগের শহরে
তোমার প্রেমিকরা সব যোগ না বিয়োগ। 
.
আমি জানি তুমি মাঝে মাথা ঠোঁকো দেওয়ালে
ভাবো কবে? 
তোমার মধ্যবিত্ত অহংকার, নিলজ্জ এক সাজানো সংসার 
তুমি দাঁড়িয়ে থাকো ভাবনার বারান্দায় 
মনে মনে ভাবো 
এই সাজানো নাটকের পোড়া শহরে কি একটাও কি পুরুষ  নেই 
যে হাত ধরে তোমার পাশে দাঁড়াবে
তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলবে আমি আছি, আমি থাকবো, 
অতীত জানতে চাই না 
শুধু আজ আর ভবিষ্যতে তোমাকে ভালোবেসে
শুধু তোমার হয়ে
কিংবা নেই কোন নিলজ্জ ধর্ষক 
যে নিতান্ত আসুরিক কামের পরব স্বীকার করবে
হ্যা আমি তোমারই ধর্ষক। 
.
তোমার অনুভবে
.. ঋষি 


তুমি ও আমরা চারজন প্রেমিক

 
আমরা চারজন তোমার প্রেমিক 
আমরা প্রত্যেকে  তোমাকে ভালোবেসেছি নিজের মতো করে
আমরা প্রত্যেকে ফিদা হয়েছি তোমার হাসির ছটায়, তোমার শারীরিক ওঠানামায়, তোমার শাড়ির আঁচলে
আমরা প্রত্যেকে তোমাকে পুজো করেছি নিজের মতো করে 
তোমাকে ছুঁয়েছি 
কিন্তু ছুঁয়েছি কতটা? 
.
আমরা প্রত্যেকে এসেছি তোমার জীবনে নির্দিষ্ট ছন্দে
নিয়ম করে তোমার আরাধনায়  ধুপ ধুনো জ্বেলেছি 
তোমার অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়েছি,উড়িয়েছি প্যাকেট প্যাকেট সিগারেট 
কিংবা বৃষ্টিদিনে তুমুল নেশায় হস্তমৈথুনে তোমাকে জড়িয়ে এই শুকনো শহরে কুড়িয়ে নিয়েছি নিজেদের যোগফল কিংবা বিয়োগ। 
.
আজ এতগুলো বছর পরেও আমরা প্রত্যেকে দাঁড়িয়ে তোমার বারান্দার নিচে
আমরা প্রত্যেকে একবার দেখতে চাইছি তোমায়, 
আসলে আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতে মুখরা দজ্জাল বৌ
ন্যালাক্ষেপা  কিছু ইকিরমিকির সন্তান
নুন আনতে পান্তা ফুরোনো অভিশাপে আমরা প্রত্যেকেই তোমার পাপী। 
প্রত্যেকের দিনান্তে ফুরোনো সপ্নের মাঝে হঠাৎ ফুটে ওঠে তোমার প্রতিমার মতো মুখ,
আমাদের মধ্যে কেউ তোমার স্বামী, কেউ বন্ধু, কেউ প্রতিবেশী, কেউ প্রেমিক 
অথচ আমরা সকলেই একই ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ভিখিরীর মতো
আমাদের নিজেদের মাঝে কোন দ্বন্দ নেই
আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই
আমরা সকলেই পুরুষ ও তোমার প্রেমিক 
অথচ আমাদের সকলের একই অভিশাপ
আমরা তোমাকে ছুঁলেও 
তোমাকে ছুঁতে পারি নি। 
.
তুমি ও আমরা চারজন প্রেমিক
.. ঋষি 

তোমার হবে না

জানি তোমাকে কখনো পাওয়া হবে না
কারণ তোমার কবিতার ঈশ্বর কোন বইমেলায় 
একলা দাঁড়িয়ে নিজের বই বিক্রি করে নি,
কখনও কোন দিন বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় বিখ্যাত মুখের পাশে তোমাকে দেখা যায় নি, 
তুমি কেন বোঝো না
তোমার কোন জাহির নেই,নেই কোন কবিতার বাবা
শুধু আছে নিসঙ্গতা আর কবিতা। 
.
সবাই যখন হাওয়ার সাথে সন্ধি করে কবিতার পালায় ছুঁটছে
তখন তোমার রক্তাক্ত বর্ণমালা কবিতার ভাবনা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে,
তুমি জানো এই ক্ষুদার্ত, আশ্র‍য়হীন  মানুষগুলোর কোন গতি নেই 
নেই কোন দামামা,নেই কোন কবিতার উৎসব
আছে শুধু কষ্ট
তুমি জানো এদের কোন মঞ্চ নেই, নেই সেল্ফির বাহুল্য
অথচ  তুমি এই গরীব মানুষগুলোর জন্য কবিতা লিখে যাচ্ছো। 
.
সুতরাং তোমার কিছু হবে না
দিল্লি কিংবা কলকাতার পুরষ্কার কবি প্যানেলে তোমার নাম নেই 
তোমার কোন সম্পাদক কিংবা প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ নেই
কোন আবৃত্তিকার তোমার তৈলাক্ত দাদা বা বোন হয় না
আসলে তোমার কবিতারা প্রমোশন চায় না
চায় না সময়ের সাথে সন্ধি করতে। 
তোমার কবিতারা শুধু শহর লিখতে জানে
ফসল বুনতে জানে মানুষের দৈনতা আর কষ্টের চাষাভুষা মাঠে
আসলে তোমার কবিতারা সত্যি বলতে জানে
তাই বেশ্যার মাটিতে প্রতিমা গড়ার উৎসবে
তুমি থাকবে কবিতার জন্য 
কিন্তু কবিতার মাটিতে তোমার প্রতিমা গড়া হবে না। 
.
তোমার হবে না 
.. ঋষি 


Wednesday, October 4, 2023

অপাঙক্তেয়

তাড়া খেতে খেতে সময় বদল করেছি 
হাতের তালুতে ছুঁয়ে আছে খুনি রক্ত,
সময়ের পায়ে গামবুট, তার ফোঁকলা দাঁতে লেগে আছে অনেকটা পথ, 
বাইরের পৃথিবীতে তখন বেহায়া বৃষ্টি
৷ ৷৷৷৷ মন কেমনের বৃষ্টি।।।।। 
কান্না পাচ্ছে অকারণে । 
.
জানি আমার কবিতারা অপাঙক্তেয় তোমার কাছে
জানি দু:খী নদী যেদিকে বয়, পিঠ থাপড়ায় সকলে 
জলের  তরলতা সকলে বোঝে,বুঝতে চায়
কিন্তু জলের গভীরে কষ্ট ? 
শুধু বেওয়ারিশ জানে
এই রহস্যময় শহরের জানলায় লুকোনো একটা জঙ্গল 
কতগুলো হলদেটে চোখ তাড়া করে। 
    অপরাধ  ? 
.
আমি ছুটতে থাকি খালি পায়ে, খালি গায়ে তুমুল বৃষ্টিতে
শহরের পানশালাতে তখন  ভরে ওঠে অবধারিত মাতলামিতে 
ওয়েটার এসে দাঁড়ায় আমার কবিতার পাশে 
আমি তাকে বোকার মতো প্রশ্ন করি তুমি আসবে কিনা ? 
ওয়েটার হাসতে থাকে 
বলে বাবু অনেক রাত 
বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে শহরে,
আমি কাঁদতে থাকি, কারণ জানি আমার কবিতারা  অপাঙক্তেয় তোমার কাছে। 
.
অপাঙক্তেয়
... ঋষি 


Tuesday, October 3, 2023

মনের মানুষ

বেশ কিছুদিন এই শহরটাতে উৎসব খুঁজছি 
খুঁজছি ভালোবাসা 
অথচ শহরের পথঘাট ,নালা নর্দমা ,বাস ট্রাম জুড়ে শুধু মানুষ 
আর ক্লান্ত মানুষ। 
অবাক হচ্ছি রোজ ,চিৎকার করছি 
থামুক ওরা 
মাথা দিয়ে না ,একবার মন দিয়ে কারণ ছাড়া ভালোবাসুক 
ভালোবাসুক মনের মানুষ। 
.
বেশ কিছুদিন বসে আছি সবার পিছনে 
আমার সামনে বসে উঁচু উঁচু সব দানবাকার কারণগুলো 
তাদের চওড়া বুক  ,ব্যাক ম্যাসল ,বাইসেপ ,ট্রাই সেপ 
এমন সব প্রতিভার মাঝে 
জানি তুমি লক্ষ করো নি আমাকে কিংবা আমাদের । 
আসলে আমি আর আমার মতো এই শহরে অনেকে  
কখনো ,কোনো দিনই কোনো  উৎসবের উপযুক্ত ছিল না 
কারণ আমরা কোয়ান্টাম থিওরি বুঝি না ,বুঝি না পিথাগোরাস 
আমরা গোর্কি কিংবা রবীন্দ্রনাথ পড়ি নি 
আমরা উৎসবের শেষের আশায় আগের থেকেই ভয় পাই ,
তাই দৌড়োই  
আর তাকিয়ে দেখি তোমার সিল্কের শাড়ি ঢাকা ৩৬,৪৮ আর ৩৯ 
আরো ভয় পাই 
তোমার হৃদপিন্ড ,তোমার ফুসফুস ,তোমার যন্ত্রনা ,তোমার অভিমানে 
তারপর মুখ থুবড়ে পরি 
আফ্ৰিকার একলা জঙ্গলে 
আর শুধু খুঁজে পাই খিদে
আর সেখানে উৎসব শব্দটা একটা বাহুল্য । 
.
মনের মানুষ 
......... ঋষি

অনবদ্য কবিতা

আমরা কেউই অনবদ্য কবিতা নই আমরা সাধারণ যারা তারা শুধু বেঁচে আছি বেঁচে থাকবো বলে, আমাদের কবিতারা আকাশে উড়তে পারে না শুধু ডানা ঝাপটায়, হঠাৎ  অব...