Thursday, April 30, 2020

জীবিত ও মৃত


জীবিত ও মৃত
... ঋষি
হঠাৎ দেখা হয়ে গেলো কষ্টের সাথে
এই গল্পটা ঠিক আমার শহরে মিশে থাকা অজস্র আর্তনাদ,
বিকেলের শেষ আলোটা তোমার গাল,কপাল, ঠোঁট ছুঁয়ে
হারিয়ে যেতে চায়
কষ্ট।
কষ্ট কোন পুরুষ হতে পারে, হতে পারে নারী
কি আসে যায় তাতে
গল্পগুলো খুব সাধরণ মিলেমিশে এসময়।
.
বুকের ভিতর এস্রাজের সাজানো সুর বিষন্নতা
ভালোবাসার বয়স কত চলন্তিকা ? 
আমি উল্টো চালানো সাইকেলে চেপে চলে যায় দৃষ্টির বাইরে
সত্যি বলো আমাকে ভালোবাসার কি  বয়স হয় ? 
তোমার নাম কষ্ট হতে পারে চলন্তিকা
আমার নামও কষ্ট হতে পারে,
বোবা মনুমেন্টের মাথায় দাঁড়িয়ে কাগজ কুচিয়ে ছিটিয়ে দিলে
যাদের মাথায় পড়বে, তাদের যে অধিকাংশের নাম কষ্ট ।
.
আমার মাথাটা যন্ত্রনা করছে অসময়
তোমার হয়তো সিজারিয়ান পেইনটা বেড়েই চলেছে,
কোথাই দাঁড়িয়ে আমরা ? 
কলমের আঁচড়ে অবিরত ফেটে বেড়োচ্ছে অসংখ্য সময়ের ক্ষত
সময় বলছে কবি আর মৃত্যু কেন?
পাঠকও ক্লান্ত ডেডবডি, মৃত বরফ ঘর এই সব পড়তে পড়তে
কিন্তু আমি বলতে পারি কই কষ্ট ফুরোচ্ছে না যে,
কিন্তু আমি চিৎকার করতে পারি কই
আমরা সকলেই তো প্রাচীন মৃতদেহ নিজের গভীরে বরফ ঘরে।
.
কেন জানি চলন্তিকা আমি চিৎকার করতে পারি না
 বাথরুমে শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে, একলা রাস্তায় শহরের বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে 
শুধু গড়িয়ে নামে জল অকারণে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমুদ্রের মুখোমুখি।
আমি দাঁড়িয়ে থাকি কষ্টের মুখোমুখি
তুমি দাঁড়িয়ে থাকো কষ্টের মুখোমুখি 
আমরা সকলেই এসে দাঁড়ায় কষ্টের মুখোমুখি দাঁতে দাঁত চেপে অসময়।
গল্পগুলো মিশে যায় আমাদের উনিশ-বিশ
তবু দুরে সমুদ্রের স্বপ্নে আমরা বালির ঘর তৈরি করি 
বারংবার ভেঙে যায়
আবারও চেষ্টা করি
শুধু নোনতা জল ছুঁয়ে যায় বারংবার পায়ের পাতায়।

Wednesday, April 29, 2020

নিরালায় দাঁড়ানো


নিরালায় দাঁড়ানো
...ঋষি
নিরালায় একলা দাঁড়িয়ে নিজের হৃদয়ে
একদিকে গোটা জীবন,উল্টো দিকে একলাই লড়ছি সময়ের সাথে,
আমার ধরনের যারা আছে তাদের মধ্যে উল্লখযোগ্য শুয়োপোকা আর গাছ
পরস্পরের  মধ্যে অদ্ভুত একটা বোঝাপড়া আছে।
জীবনবিজ্ঞান শুধু জীব বিদ্যা নয়
একটা বিদ্যা যা মানুষকে বেঁচে থাকতে বলে।
.
বহুদিন থেকে চোখে জড়ো হচ্ছে স্তব্ধতা,
বহুদিন আজ হৃদয়ের গভীরে যে অরণ্য সেখানে এক  হরিণী আদরের ঘাস খায়,
কিন্তু এখন যে সবুজের বড় অভাব
তাই জীবনের  লাশটা এখন একলা রাখা আছে লাশ ঘরে।
আমি জানি অরণ্য শব্দটা মানুষের ভুমিকায় আজকের দিনে অকাজের
কিন্তু সত্যি এটা হরিণী আজকাল শুধু চিরিয়াখানায় থাকে
আর সময়ের লাশগুলো মানুষ সংক্রমনের কারণে হৃদয়েই রাখে।
.
হৃদয় শব্দটা আজ সময়ের কাছে বড় বেমানান
বড় বেমানান, বড় অসময় হৃদয়ের গভীরে নিজেকে খোঁজা । 
চলন্তিকা জানে   
নির্মম সত্য অনুসন্ধানে সর্বদা শুধুই উঠে আসে সারি দেওয়া মুহুর্ত
আর গভীত যন্ত্রনা।
আমার আটচল্লিশতম প্রেমিকা তার পুরুষের অরণ্যে মাথা রেখে এই মুহুর্তে ,
এই মুহুর্তে ঘাস খাচ্ছে সে আদরের
আর আমি  আজকের  সময় বন্ধক দিতে ঘুরছি মহাজনের দোকানে, দোকানে
দুস্তর ধার যে আমার
ক্ষতবিক্ষত হৃদয়।
কেউ চাইছে না আমাকে, আমার শরীর
কেউ বলতে পারছে না সত্যি
সকলেই বেঁচে  আছে চাল ও কন্ডমের সংমিশ্রণে
আর আমি  চন্ডালী উপবাস করবো বলে শুধুই দেখছি লাশ সময়ের।
.
নিরালায় একলা দাঁড়িয়ে আমার হৃদয়
একদিকে আমার রান্নাঘর আর উল্টোদিকে চলন্তিকা তোমার,
এই যে ধর্ম, পুঁজি, আন্দোলন ও নারী  সবটাই সময়ের জিভে নুনের  স্বাদ
সবই লিখতে পারি আমি।
শুধু পারি না আমি গাছেদের কথা লিখতে
পারি না সালোকসংশ্লেষ আর জীবন বিজ্ঞানের কথা লিখতে। 
কেউ যখন বলে ‘আমি একা’
তার মানে আজকাল যে একা, সে নিরুঙ্কুশ একা, সম্পুর্ণ একা নিজের সাথে
কিন্তু জীব বিদ্যায় হৃদয় বলতে যা বোঝায়
সময়ের কাছে তা শুধু দুরত্ব
আর দুরত্ব শব্দটা সবসময় যন্ত্রণাদায়ক।

Tuesday, April 28, 2020

সময়ের গল্প

স ম য়ে র  গল্প
... ঋষি
খালি শহরের পথে যেন কোন বিষাদ লুকিয়ে
সেই মেয়েটা হেঁটে চলে একা শৈশব, যৌবন, শ্যামের বাঁশী,
ফিরে আসে যোগ্যতায়,
একটা ফ্রক পরা স্বপ্ন দেখা চোখ রাস্তার পাশে খুঁজে নেয় ওষুধের দোকান
মেয়েটা বারংবার চেয়ে থাকে ওষুধের দোকানের গোঁফ না ওঠা ছেলেটার দিকে।
স্বপ্ন উঁকি মারে মেয়েটার পুর্বজন্মে
তারপর শেষ দৃশ্য
আজও মেয়েটা জেগে থাকে প্রতি রাতে নক্ষত্র  চোখে।
.
গল্প ফুরোয় না
আসলে সময়ের গল্পগুলো জীবন্ত সর্বদা কারণ ঘড়ির কাঁটা।
মেয়েটা হেঁটে যায় তার প্রেমিকের হাত ধরে কলেজের ফাঁকে
শ্মশানের মাঠে মেয়েটা চেয়ে থাকে পুরুষের সাহসের আশায়
বিকেল ফুরিয়ে যায়,
শব্দরা সব ফিকে হয়ে আসে
কিন্তু মেয়েটা আজও প্রেমিক খোঁজে, খোঁজে সাহস প্রেমিকের বুকে।
.
শুনেছি অবিবাহিত মেয়েদের  গরীব হওয়া পাপের
কারণ  বিষাক্ত চোখ চিরকাল খোঁজে যুবতীর ছেঁড়া পোশাকের ফাঁকফোঁকড়,
শুনেছি সুন্দরী মেয়েদের কাঁচের চোখ থাকে
দুরবীন দিয়ে তারা দেখতে চায় সময় নিজের স্বপ্ন সাজিয়ে।
অথচ মেয়েটা হেঁটে চলে সময়ের মতে পতির হাত ধরে ধর্মগ্রন্থে
মেয়েটাকে সুন্দরী বলা চলে,
আবার চলেও না
কারণ  শ্বাপদের চোখে ঈশ্বর সর্বদা আবাসিক থেকে যায়।
তারপর  রাত আসে পেঁচার চোখে
সুন্দরী মেয়েটা তখন দুরবীনে দেখে বালিঘরি,
সকাল হয়ে যায়
এই সমাজে বাড়তে থাকা জীবিত ও মৃত স্বপ্নের ভীড়ে
আরেক স্বপ্ন হারিয়ে যায়।
.
আমি ঈশ্বর নই যে সময় গড়তে পারি
তবে আমি লিখতে পারি কবিতায় সেই মেয়েটাকে যে  বালিঘড়ি।
হয়তো সে কোন সাঁওতাল রমণী কিংবা পোড়খাওয়া কোন গৃহস্থ রমণী
হতে পারে কোন সোনাগাছিতে বসা মাংসের শরীর
কিংবা প্রেমিকা
কিংবা মিছিলে সামনে দাঁড়ানো প্রতিবাদ।
সে আমাদের চেনা হতে পারে, হতে পারে অচেনা
কি আসে যায় তাতে
আমার কাজ লেখা আমি লিখছি
আর আপনারা পড়ছেন সময়ের ঘড়িদের গল্প কথা।

Monday, April 27, 2020

খুব সাধারণ আমি

খুব সাধারণ আমি 
.........ঋষি
আমি জাতিস্মর নই
তবে হলফ করে বলতে পারি চলন্তিকা তুমি ছিলে আর থাকবে প্রতিজন্মে।
হিসেব মেলাতে পারি না, তবে হিসেবি আমি
খুব সাধারণ আমি,
জানি তোমাকে ভাবতে আমার তুবড়ি,আল্পস,আখরোট শব্দগুলো আসে
আসে দুরে কোন নাম না জানা শিল্পীর গিটারের শব্দ
এস্রাজে প্রকৃতির পাখির গান,শব্দের ঘোর,ভালোবাসা
আসলে ভালোবাসা শব্দটাই সকলেই অপেক্ষা করে গাছের শরীরে
কিন্তু ভালোবাসা শব্দটা অসম্পুর্ন সর্বদা।
.
ঋতু বদলায়
অদ্ভুত এই আর কি ভালোবাসা শুধুই আকাশের কল্পনায়।
পাখির ডানায় ভর করে জীবনানন্দ লিখে ফেলেন বনলতা
হয়তো মানুষ কল্পনা করে কোনো নারী কিংবা পুরুষ     
আমিও কল্পনা করি তোমায়
চলন্তিকা,
লিখতে থাকি, গড়তে থাকি,
প্রাচীন ভাস্কর্যের শরীর থেকে জন্ম নিতে থাকে তোমার শরীর
হারিয়ে ফেলি নিজেকে
ভালোবাসি বারংবার খুব সাধারণ  আমি। 
.
জানি যে সময়ে আমার জন্ম
সেই সময় আমার নয়,
জানি যে সময় কবিতা জন্মায়
সেই সময় শুধু অতীতকে সাক্ষী রেখে ভবিষ্যতের দিকে হাঁটা।
আমি খুব সাধারণ
খুব সাধারণ আমার বেঁচে থাকা
শুধু আমার  হেঁটে চলা বছর, ঈশ্বর  আর বয়স পেড়িয়ে
অপেক্ষা থেকে তোমার গভীরে।
তোমার বুকের অভিমানগুলো
আমার মাথার পাকা, কাঁচা চুলে লেগে থাকা অভিজ্ঞতা
আর তোমার অভিযোগগুলো সময়ের গায়ে লেগে যাওয়া শেওলা।
আমি মৃত্যুতে বিশ্বাসী নই
শুধু আমার বিশ্বাস প্রতিজন্মে তুমি আমার বুকে প্রাচীন বৃক্ষ
যার ছায়ায়, যার জন্য আমার এই বেঁচে থাকা
শুধু আজ থেকে নয়
প্রতিজন্মে।

ফুলস্টপ


ফুলস্টপ
... ঋষি
.
আমার সাত বছরের ছেলে এক্সক্লামেটরি চিহ্ন চিনতে চিনতে
হঠাৎ খেলার ছলে বললো
 এক্সক্লামেটরির মায়ের নাম কোয়েশ্চেন মার্ক
আর বাবা কিনা ফুলস্টপ।
আশ্চর্য এমন তো ভাবি নি কখনো
বিস্ময়ের মা সত্যি প্রশ্নবোধক সর্বদা আর বাবা চিরতরে মৃত্যু।
.
আমার প্রেমিকা আমাকে বলে আমি নাকি ব্ল্যাক হোল
যার শেষ নেই,
আমি বিস্মিত হয়ে আমার মাকে খুঁজি
খুঁজে পাই অজস্র প্রশ্ন আর বাবার দিকে তাকালেই
আমার মৃত্যু মনে পড়ে।
এমনকি আমার পিতামহ, প্রপিতামহ সকলকেই আমি দেখি মৃত্যুতে
বোধহয় প্রতিটা পুরুষের মৃত্যু কোন নারী মৃত্যুর আগেই ঘটে।
.
০.৩২ বোরের ছয় বুলেটের রিভলভারের সামনে দাঁড়িয়ে
সকল মানুষের  ভয় করে, আমারও করে
চলন্তিকারও করে।
সত্যি বলতে মানুষের ভয়গুলো এক্সক্লামেটরি চিহ্নের  ধরনের
জানি চলন্তিকা আমাদের সত্যি ভাবতে ভয় করে
জানি তোমার সত্যি লিখতে ভয় করে
আসলে সত্যির মুখোমুখি দাঁড়াতে গাছেরাও শুকিয়ে যায়
সেখানে মানুষ ?
শুধু প্রশ্ন চিহ্ন নিয়ে বাঁচে 
শুধুমাত্র ফুলস্টপ এঁকে হাজারো প্রশ্ন শেষ করে
সাজানো হাসি হাসে।
আমিই বা সত্যি বলতে পারলাম কই আমার সাত বছরের ছেলেকে
বললাম এগুলি কি বলছিস বাবু
পরীক্ষায় কি এগুলি লিখবি।
আসলে মানুষ পরীক্ষায় পাশ করার চিন্তায়
জীবন নামক রিভলভারের সামনে দাঁড়িয়ে ফুলস্টপ এঁকেই ফেলে। 


 


জীবন মোহনা


জীবন মোহনা
....ঋষি
মাষ্টার মশাইয়ের কোমড়ের ব্যথাটা বেড়েছে
আমারও সুর্য এখন মধ্য গগনে,
দৌড়চ্ছি দুজনেই।
দৌড়চ্ছি দুজনেই অন্ধকার দুরত্ব ছুঁয়ে সমুদ্রের মোহনার  দিকে
সমুদ্রের এপাশে আমাদের শহর,আমাদের বাড়ি
ওপাশে সমুদ্রের গভীর দুরত্বে শুয়ে বোধহয় শান্তি।
.
এই মুহুর্তে আমি আর মাষ্টার মশাই দুজনে দাঁড়িয়ে নরম বালিতে
হাঁপাচ্ছি আমরা,আমাদের সারা শরীরে ক্লান্তির ঘাম
সন্ধ্যে হবে এখন।
আমরা দুজনেই ফেলে এসেছি চেনা শহর,পরিচয়,মানুষ
ফেলে এসেছি সারি দেওয়া দোকান,চন্দ্রানি পার্লস,স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরী
ফেলি এসেছি শৈশব, হাজারো না পাওয়া,না করা প্রতিবাদ আর হাহাকার।
আসলে আমি আর মাষ্টার মশাই দুজনেই এখন অপেক্ষায়
পাশাপাশি 
আসলে সময়ের সন্ধ্যেগুলোর সকলেই অপেক্ষা করে ক্লান্ত জীবনের পর।
.
আমরা বসলাম নিজেদের অস্তমিত সুর্যের মুখোমুখি
নরম বালিতে বসে হেঁটে যাচ্ছি আমরা এখন কংক্রিটের শহরের পথে।
আমি আর মাষ্টার মশাই, আমরা এখন শুধুই বন্ধু
মাষ্টার মশাই বললেন সারাজীবন উল্টো পাড়ে রয়ে গেলাম বুঝলি
এখন জীবন সমুদ্রে ভীষন একা লাগে ঋষি
তুই আমার মতো হোস না  ।
আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম সমুদ্র
সাতাত্তরে দাঁড়ান বুড়ো ক্লান্ত মানুষটাকে,
আমি বল্লাম চলুন একটা বাড়ি তৈরি করি আমরা সমুদ্রের মোহনায়।
মাষ্টার মশাই বললেন মোহনায় বাড়ি
ভেঙে যাবে ঋষি,সমুদ্রের ঢেউ এসে ভেঙে দেবে।
আমি হাসলাম ঘুমের মধ্যে
বললাম মনে মনে এক জীবনে মানুষ ভাঙে হাজারোবার
কিন্তু গড়েই নেয় আবার ।
ঘুম ভেঙে গেছিল কখন যেন মাঝরাতে
মাষ্টার মশাই বলেছিলেন তুই আমার মতো হোস না ঋষি
আর আমি ভাবছিলাম
মাষ্টার মশাইকে বলা হলো না আমরা সকলেই অপেক্ষায়।
কেউ কারো মতো হয় না
জীবন সমুদ্রে আমরা সকলের নোনা জলের ঢেউ উপর নীচ
আর সকলেই অপেক্ষায় শুধু  জীবন মোহনার।



  

Sunday, April 26, 2020

লালমোহন গাঙ্গুলি


লালমোহন গাঙ্গুলি
... ঋষি
ভাবছি পুরো এপ্রিল মাস কবিতা লিখবো
ভাবছি মে মাসও কবিতা লিখেই কেটে যাবে বুঝলে,
বুঝলে তপসে হাইলি সাসপিসিয়াস  আমার এই ভাবনা
আর বাকিসব জানি না
ভাত থাকবে কিনা, মানুষের  চাকরি থাকবে না, থাকবো কিনা আমি
থাকবে কিনা হোটেলের  পাশের  কার্নিশে দেখা বিড়ালটা
অমিতের মুদির দোকানের সামনে কুকুরগুলো।
.
বুঝলে তপসে আমার ওই নেপালী ছুঁড়িটা মনে হয় না আর দরকার হবে
আত্মরক্ষা শব্দটা এখন শুধু আমাদের চারদেওয়াল,
বাবাকে প্রতিমাসে কিছু টাকা পাঠাবার ছিল মাসের শেষে ওষুধের জন্য
বোনকে হাতখরচ,কলেজের খরচা দেওয়ার ছিল,
কিন্তু আর দরকার হবে না বলে মনে হয়
মনে হয় এজীবনে আর দেশে ফেরা হবে না।
এই রাজস্থান,বালি, উট
আর আমাদের সোনার কেল্লা খোঁজা হবে না।
.
আচ্ছা ফেলুবাবু  মুকুলের কি হবে?
ও কি সত্যি জাতিস্মর?
কাল সারাদিন ছেলেটা সারা রাষ্ট্রময় ওর পুরনো শহরে মহামারী এঁকেছে,
ওকে তো আর বলে বোঝানো যাবে না এখনকার কথা,
কি যে এক রোগ
সকলেই ঘরের ভিতর।
কি বলো তপসে এখন তো আমাদের একটাই কাজ
ভগবান বলে ডাকা,কি ভাবে বাঁচবো তাই ভাবা,
কিন্তু যারা এখন ফুটপাথে আছে,যারা দিন আনে দিন খায়
তারা বাঁচবে কি করে?
গরীবের ভগবান আছে এসব বকয়াজে আমি মোটেও বিশ্বাস করিনা।
জানেন তো ফেলুবাবু শুনছি অবস্থা মোকাবিলায়  সামরিক বাহিনী নামছে
পুলিশ বাহিনী সিল করে দিয়েছে শহরের অনেক গলির মোড়,
আমেরিকা, সোভিয়েত সব বোধহয় এইবার খালি হয়ে গেলো
তবে আমি লালমোহন গাঙ্গুলি ডরাই না মোটেই।
শুনে রাখো তপসে আমি কলম দিয়ে সভ্যতা তৈরি করবো
এপ্রিল, মে কেন আরো অপেক্ষা করবো
কারণ আমার যে এখনো সোনার সময় দেখা বাকি।
কি বলেন ফেলুদা
সত্যজিৎ বাবু থাকলে বোধহয় এখন বলতেন
কি হে ফেলুমিত্তির এত সহজে তুমি হেরে যাবে।
   

Saturday, April 25, 2020

জাগতে রহো

জাগতে রহো
... ঋয়
.
সময় মানুষের ভিতর টাইমবোমা ফিট করে বলে
জাগতে রহো,
যেখানে একশো তিরিশ কোটি ভারতবাসীর পেটে ছুঁচো
সেখানে ঈশ্বররা বলেন বাড়িতে রহো।
যেখানে আগামী ভারতবর্ষ অসহায় শৈশবের মতো নিরুপায়
যেখানে রাষ্ট্র রেশনের কালোবাজারিতে ব্যস্ত
সেখানে আমরা সকলে  দর্শক
শুধুই জনগন।
.
আমি রাজনৈতিক, প্রতিবাদী, বিপ্লবী কিংবা কবি নই
শুধুই জনগন।
আমার নিজের কোন ধর্ম নেই, নেই ধর্ম গ্রন্থ
আমার নিজের কোন বাসস্থান নেই,শুধু রাষ্ট্রর মরজিতে বাঁচি
শুধু কুত্তার মতো বিশ্বাসী
বিশ্বাস করি রাষ্ট্রকে, বিশ্বাস করি সময়কে
একদিন সুদিন আসবে 
একদিন মানুষ বাঁচবে
শুধুই জনগন বা জনবসতি নয় মানুষের  জন্য।
.
আমি যা ভাবি, যা  লিখি তাই আমার ধর্ম,
যেমন তোমাকে লেখা,  পঞ্চরিপুকে লেখা, রাষ্ট্র লেখা আমার ধর্ম।
আমাকে বাজারে জিনিসপত্তের দাম বাড়লে আরো হিসেবে পটু হতে হয়
আমাকে নিজেদের হক বুঝে নিতে পুলিশের মার খেতে হয়,
আমাকে ভোটের সময় রাষ্ট্র পিতাদের বক্তৃতা শুনতে হয়
 আমার জুতো ছিঁড়ে যায়,সংসারে টানাটানি,
 তবু আমি জুয়ো খেলি,মদ খাই,বেশ্যা বাড়ি যাই।
নিজের মাতৃস্থানীয় কারোর যোনিতে নিজেকে ধ্বংস করে 
আমি চিৎকার করি, আমিই জনগন। 
.
হ্যা আমিই জনগন
যে প্রেমের জন্য গলায় দড়ি দেয়, টাকার জন্য  মানুষ  খুন করে
যে মানুষের জন্য রক্ত দান করে,আবার মায়ের জন্য অসুধ কেনে
যে সংসার টানতে  চাকরী ছাড়া বাড়তি টিউশুনি করে
যে খুব সহজে কাঁদে, খুব সহজে হাসে
যে বিশ্বাস করে রাষ্ট্র মানুষ তৈরি করে
রাষ্ট্র পিতারা কেউ চোর নয় শুধু মানুষের সেবক। 

Friday, April 24, 2020

ভালোবাসি তাই


ভালোবাসি তাই
....ঋষি
.
ভালোবাসি তাই,আমার কাছে থাকো
ভালোবাসি তাই,আমায় ভালোবাসা।
.
ভালোবাসি তাই,সময়ের এই জেদ
ভালোবাসি তাই,আমরা কমরেড।
.
ভালোবাসি তাই,উনুনের চোখে জল
ভালোবাসি তাই,সময়ের কোলাহল।
.
ভালোবাসি তাই,একলা দুপুরে মেঘ
ভালোবাসি তাই,আমাদের মতভেদ।
.
ভালোবাসি তাই,রৌদ্র ছুঁয়ে ঢেউ
 ভালোবাসি তাই,ঝগড়া করছে কেউ
.
ভালোবাসি তাই,হিসেবের গড়মিল
ভালোবাসি তাই,সময়ের আকাশে চিল।
.
 ভালোবাসি তাই,পথের নেই কো শেষ
ভালোবাসি তাই,এই তো আছি বেশ।
.
ভালোবাসি তাই,চোখ না বোজা রোগ
ভালোবাসি তাই,যন্ত্রনার সম্ভোগ।
.
ভালোবাসি তাই,আল্পসের মুখে ঠোঁট
ভালোবাসি তাই,ফুল ফুটছে রোজ।
.
ভালোবাসি তাই,তোমার চোখেতে জল
ভালোবাসি তাই,আদমের বিষাক্ত ফল।
.
ভালোবাসি তাই, একলা আকাশে পাখি
ভালোবাসি তাই,তোমাকে যত্নে রাখি।
.
ভালোবাসি তাই,তোমার জন্য বাঁচি
ভালোবাসি তাই,আমরা সময় সাজি।
.
ভালোবাসি তাই,তুমি জুড়ে অসময়
ভালোবাসি তাই,আমাদের হবে জয়।







  

Thursday, April 23, 2020

অসময়ের বৃষ্টি

অসময়ের বৃষ্টি
..ঋষি
নিরিবিলি শহর ছুঁয়ে যাওয়া শেষ বিকেলের বৃষ্টি
অন্য হাওয়া,
তারপর চাওয়া,পাওয়া।
রাষ্ট্র সময় ঘেঁষে শুয়ে আছে স্থবির ভিখিরির মতো অসহায়
আমরাও নিরুপায়
শেষ বিকেলের বৃষ্টিতে যদিও ভিজে গেলো মানুষের  লুকোনো আদর
গোপন সম্বল
আর মুক্তি নামক শব্দটা। 
.
আমি দেখছি সময় ভিজছে
কারন আমি জানি আমার শহরে আজ বারো মাস বৃষ্টি
আমি দেখছি তুমুল ঝড় এই সময় 
উড়ে যাচ্ছে ভয়, মানুষের বাঁচা আর দৈনন্দিন
তাই আমি খবর শুনি না,কাগজ পড়ি না,টিভি তো নয়
আমার শরীরের ভাষা মৃত আজ বহুদিন।
শুধু আমি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকি
তাকিয়ে থাকি তুমুল দুর্যোগে দাঁড়িয়ে আমার শহরের দিকে ।
.
বৃষ্টি বাড়তে থাকে
বাড়তে থাকে ছটফটানি বুকের ভিতর ক্রমাগত অজস্র খাঁচা।
মনে হয় আর কি দরকার
এই তো বেশ, এই তো আমি শেষ দিনে
তখনি পিছু টানে বিভূতিভূষণের গল্প,রবি ঠাকুরের শেষের কবিতা
জীবনানন্দের বনলতা, সুনীলের নীরা
আর চলন্তিকা তোমায়।
আর তখনি মনে হয় মরতে তো হবে সকলকে একদিন
কারণ মৃত্যুর যে হাজারো নাম এই মুহুর্তে
কোনটা আমেরিকা , কোনটা ইতালি,কোনটা বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান 
কেউ জন, কেউ ইব্রাহিম, কেউ আশুতোষ কিংবা আমি
তাড়া কোথায়?
মনে পরে কত কাজ বাকি এখনও
এখনও সকালের সুর্য দেখি নি আমি ছেলের  হাত ধরে
এখনও তোমার সাথে একপাও হাঁটি নি সমুদ্রের বালিতে।
শুধু বৃষ্টিতে ভিজেছি আমি বারোমাস সময়ের সাথে
একলা দাঁড়িয়ে তোমার মত বৃষ্টির আড়ালে জমিয়েছি অভিমান
শুধুই কান্না, শুধুই বিষন্নত, শুধুই জীবিত
কিন্তু জীবন কই ? 
কিন্তু বাঁচলাম কই ? 


   


Tuesday, April 21, 2020

দুরে কোথাও


দুরে কোথাও
... ঋষি

খুঁড়ছি আর খুঁড়ে চলেছি
একের পর এক অন্ধকার জুড়ে কেটে যাচ্ছে দুরে থাকা,
দুর তোমার থেকে
তোমাদের থেকে, সমাজ থেকে, সময়ের কালভেদ।
ক্রমশ আরো দুর
দুরে কোথাও
রোজকার সুর্য অস্ত যাচ্ছে আরও একটা বিষন্ন দিনের।
.
প্রেম বিলুপ্ত ক্রমশ এই সভ্যতায়
কাছের মানুষগুলো সন্দেহের চোখে তাকিয়ে সম্পর্কের চোখে।
সময় শুদ্ধু লোক এখন শুধু চাইছে আরেকটু বাঁচা
তাই একে অপরকে দোষ দিচ্ছে,নিয়ম করে রাজনীতি করছে
করছে হিসেব দৈনন্দিন বাঁচা মরার।
একবিংশ শতাব্দী সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত বাক্য ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’
আজ কেন জানি ভিতু মানুষের কাছে শব্দগুলো বদলে গেছে,
 আজ কেন জানি এক অজানা আত্নকেন্দ্রীক সময়ের সাক্ষী আমরা
সাক্ষী আমরা রোগগ্রস্থ মৃতদেহগুলোর ধাপায় পোড়ানোর।
.
 তোমার পাশে শুয়ে আছে  রাজস্থান,মুম্বাই,গুজরাট আরও প্রতিবেশী
আমরা দেখছি যুদ্ধ মানুষের বাঁচা মরার,
তোমার কাছে ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জানলা, দরজা আর বাঁচা
আমরা দেখছি মানুষ  বলছে বেঁচে থাকলে আবার হবে দেখা।
এখন শুধু রোগগ্রস্থ আমরা, আপ বাঁচলে বাপের নাম
এখন শুধু সময়ের চোখে দুর্যোগ
এখন শুধু অসময়ের বৃষ্টি আর গরীবের চোখে জল
এখন শুধু বাঁচা মানে অন্ধকার কোলাহল ।
আর তাই
চলো শেষবার মরে যাবার আগে
বুকের ভেতরের বন্ধ  খাঁচাগুলোর দরজা খুলে দি
খুলে দি আলো আসার পথ আমাদের বন্ধ জানলার।
আর ভয় নয়
এসো একবার শেষ চেষ্টা করে দেখি
এসো একবার দুর থেকে আরও দুরে গিয়ে
আরও একলা থেকে দেখি
যদি আরেকবার আমরা ফিরে আসতে পারি
যদি আরেকবার আমরা নিজেদের প্রিয়জনকে বলতে পারি
" ভালোবাসি "।



Monday, April 20, 2020

যীশুর শহর


যীশুর শহর
....ঋষি
উড়ছে সময়,দুর্যোগের ঝড়,সাথে বৃষ্টি
যীশুর শরীর বেয়ে নামছে শান্তি
রূষ্ট প্রকৃতির সাথে ঘর বন্দী দুরত্ব আর অন্ধকার
 দূর থেকে বুক বাজিয়ে  উড়ে যাচ্ছে মানুষের অশিক্ষিত আত্মহত্যা।
 সম্মান নিয়ে ফিরে যাচ্ছে তোমার খোলা অন্তর্বাস আর শরীরের গন্ধ
বৃষ্টি এসে দাঁড়িয়ে আমার দরজায়
লোভ আর অহং উড়িয়ে তুমি খুলছো  নাভির শহর
অন্ধকার রাত,রোগগ্রস্থ আমরা
কিন্তু তুমি একলা থাকতে পারো না জানি।
.
তোমার রঙ খসে পড়ছে,
একলা হচ্ছে আলমারীতে তোলা কারারুদ্ধ জিনস
বিশ্রাম গাছে একলা দাঁড়িয়ে ক্লোরোফিল
মানুষের  ঘরবন্দী  ক্লান্ত শহর।
তোমার বুকে স্থাপত্য,
আমার বুকের পাঁজরে শুনশান একলা শহর
তোমার বুকে লুকিয়ে আশ্রয় নামক গাঁথা।
.
তোমাকে অনেকদিন আদর করতে পারিনা অন্ধকার থেকে আলোতে
আজকাল স্বপ্নে শিষ দেয় লুকোনো পাখি।
আরও  অন্ধকার চারিদিকে
 নীল বৃষ্টি ভেজা আকাশ এইসময় মানুষের কান্নায়
কিন্তু আলতা রাঙা অনুবাদযোগ্য আকাশের কান্না এখন  অসময়ের বৃষ্টি।
বৃষ্টিতে ভিজে এই যে একলা দাঁড়িয়ে গাছ
ঝড়ের সাথে মাথা দুলিয়ে ভাবছে বিদ্যুত যেন একঝলকে তোমায় দেখা।
এখন রাত ১১.১০ মিনিট, এমবুলেন্স এসেছে পাড়ায়
 একজন রোগী তোলা হচ্ছে
আমি জানতাম এতদিন আমিই রোগী শুধু আমার পাড়ায়।
আমি জানি বৃষ্টির ভাষা বোঝা আসলে এক ধরনের প্রেম
 আমি জানি  শারিরীক বা মানসিক ভাষা মানে সময়ের বাঁচা
আর শান্তি
যীশুর ক্রুশটা একলা টানা।
এই অসময়ের বৃষ্টিতে একলা দাঁড়িয়ে শহর সাক্ষী
জেরুজালেম যেন ছুঁয়ে আছে আমার  কলকাতাকে।




Sunday, April 19, 2020

প্রমাণিত

প্রমাণিত
... ঋষি
তোমাকে চিতার থেকে তুলে এনেছি
বুক খুলে দেখাচ্ছি চিতার থেকে চিতরেরর দুরত্ব ভাবনায়,
প্রমাণ করতে পারবো না
কারণ এটা ইতিহাস পরীক্ষার খাতা না।
শুধু জানি
তোমার বুকের ভিতর একটা উপোষী রাষ্ট্র মুখ চাপা দিয়ে কাঁদে।
.
 এখানে মানুষ হাসে, কাঁদে , সহবাস করে
এখানে রাজনীতিবিদরা পাছার কাপড় তুলে দেখে
আদৌ বৈধ কিনা।
 এখানে হাহাকার মানে মানুষের লক ডাউন
আর ঘর বন্দী মানুষের অনটন,
প্রমাণ করতে পারবো না
কারণ আজ অবধি কেউ বুক ঠুকে বলতে পারে নি
হরপ্পা সভ্যতা মাটি চাপা পড়ার কারণ।
.
প্রেমিকা আমার সময় হয়ে গেলো
অথচ আমার ইচ্ছে করে তোমার বুকের পাহাড়ে চোখ বন্ধ করি
বলি টুকি,
 পুরো একটা আস্ত শহর আপাহিজ হয়ে গেলো
কিন্তু প্রশ্ন করতে পারলাম কই
আর কতদিন? কি ভাবে বাঁচবে মানুষ এই ভাবে? 
যেন গতজন্মের পাপ ,
যেন গতজন্মের আমি তুমি আর একুশ শতক
আজ বন্দী চার দেওয়াল।
প্রমাণ করতে পারবো না চারদেওয়াল মানে 
আমার, তোমার বেঁচে থাকা এই সময়
আর
শুধুই অপেক্ষা সুদিনের।

Saturday, April 18, 2020

খিদের কবিতা


খিদের কবিতা
.. ঋষি
.
তালিকাবদ্ধ আমাদের জীবন
আর যাত্রায় লেখা না জানি কত প্রজাপতির স্বপ্ন।
বকেয়া বাকি ইচ্ছেগুলো পৃথিবীকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে বারংবার 
ছিবড়েগুলো পড়ে থাকে অপেক্ষায়,
জানি মাঝে মাঝে চাঁদ, সুর্য অনুপস্থিত থাকবে জীবনে
তাই বলে বেঁচে থাকা ফুরোবে না কখনও।
.
বসন্তের সময় মাত্র কয়েকমাস 
রজনী গন্ধ  শুকোয়
 সময়ের কথা বলছে পরকীয়া কবিতার শব্দরা।
যুগে যুগে নগ্ন হয়েছে প্রেম ,
শুধু মাত্র সমীকরনে বদলায় সময় আর সমাচার
তাই বলে প্রেম ফুরোয় না কখনও।
.
 সময়  ঠিকানা হারায় ,  হাড্ডির ভেতর কথারা নিশ্চুপ
আচ্ছা আমি তো হাজোরবার ভেবেছি তোমায় ছাড়া
কবিতা হয় না কেন ? 
হয় না কেন প্রেম ?
সত্যি করে বলুক তো রাষ্ট্র,  যদি  কোনো নারী স্তনে না থাকে বারুদ
যদি নারী মাংসের উপযোগিতায় ১৪৪ ধারা লাগানো হয়
তবে কি কবিতা আসবে এই শহরে ?
তবুও কি প্রেম থাকবে শহরে?
.
শুনেছি তো প্রেম মানে পুজো,
জানি  তো তোমার সময় মানে আমার প্রেম
তবু কেন সময়ের ব্লাউজের ভেতর  রাধা কৃষ্ণর প্রেম আজও অতৃপ্ত,
তবুও কেন সুখী আয়না বিক্রি যারা করে তাদের আয়নাতে নাটক। 
সময় নিজেদের আয়না পরিষ্কার রাখে সাজিয়ে গুছিয়ে
তবুও জানো সময়ের ঘুমের ওষুধের রোগ
আর আলোর চিৎকার ফুরোয় না।
ফুরোয় না আয়নায় জমা সময়ের মুখ,
শুধু খিদে বেড়ে যায় বেঁচে থাকায়
তাই বলে খিদের কবিতায় আমাদের কথারা ফুরোবে না কখনও।

Friday, April 17, 2020

পর্যটক


পর্যটক 
... ঋষি
সমস্ত নিরুত্তরকে উত্তর করার পর
আমার পকেট থেকে বেড়িয়ে পরেছে কম্পাস,বিন্দু,সরলরেখা,
ইতিহাস বইয়ের পাতা থেকে বেড়িয়ে পরেছে
হিউয়েন সাং আর কলম্বাস।
পথ কে পা দিয়ে মেপে মেপে ভুলে যাওয়া,
এক সময় ঘড়িকেও প্রয়োজন নেই,  আকাশ দরকারী,
দরকার ডুব সাঁতার, দম বাঁচিয়ে রাখার কৌশল।
.
আছি ও নেই
এক সঙ্গে হাত ধরে হাঁটা,
অদ্ভুত আয়নায় একা-বোকার মত দ্রাঘিমাংশে একলা দাঁড়িয়ে।
একলা দাঁড়িয়ে কর্কটক্রান্তি থেকে দেখা সুর্য
তোমার শহর।
.
তুমি সুর্যের মুখোমুখি
তুমি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তোমার সময় ঘেঁষে দাঁড়ানো মৃত শহরে। 
জন্ম থেকে মৃত্যু শব্দ অবধি ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত তুমি
 শেখালে শব্দহীনতার অন্তিম অদৃশ্যে পৌঁছে যাওয়া।
অদৃশ্য সত্যি
স্কুলের বেঞ্চে খোদাই করে রাখা অতৃপ্তি
লুডোর তিন  ছক্কা, পুট
আমাকে বারংবার ঘরছাড়া করেছে তোমার নাম ।
বুকের বোতাম খোলা আনমোনা রৌদ্র
গড়িয়ে নামা তোমার বুকের ঘাম,
তোমার শরীরটা শুধু মাত্র সামাজিক
শুধুমাত্র যান্ত্রিক।
.
এই অসময় শুধু সময়ের জীভের ডগায় পর্যটকের ভীড়
আর আমার কম্পাসে বৃত্তের উপমা।

শেষ সম্রাট


শেষ সম্রাট
.. ঋষি 
মৃত্যুর কাছে গিয়েছি বহুবার
বুভুক্ষু হয়ে ছুঁয়ে দেখেছি তোমার চোখের পাতায় অনন্ত প্রশ্ন।
জীবন যেখানে অজস্র ন বলা প্রশ্ন 
সেখানে দাঁড়িয়ে
তোমার প্রতিদিনকার খেরো খাতায় শ্মশানের আগুন দেখে
বারংবার কমেন্টস বক্সে লিখেছি
দারুন, ক্যায়া বাত।
.
তুমিও লিখেছো আমায়
আমি নাকি মৃত্যুর ভিড়ে একলা দাঁড়ানো সময়ের নাগরিক
কিংবা শেষ সম্রাট।
সাম্রাজ্যের মোহ ছেড়ে আমি নাকি খুব সহজেই হয়ে যেতে পারি
আকাশের পাখি,
যাকে খাঁচায় রাখা যায় না।
আমি নাকি হিসেবের ভীড়ে ব্যাস্ত হয়ে লিখে চলেছি
শেষ না হওয়া আমাার কবিতা,
যার শান্তি মৃত্যুতে।
.
মৃত্যুর কাছে গিয়েছি বহুবার
বহুবার তোমার ঠোঁটে, ঠোঁট রখে খুঁজেছি শেষ না হওয়া পথ।
 শ্মশানের ফার্নেসের আগুনে আমার প্রেম
পুড়তে থাকা আমার বুক
তোমার চুলের অন্ধকার ছুঁয়ে ছেলেমানুষী আগুন
তোমার কথকতা, তোমার চোখের গড়াতে চাওয়া জল,
আমিই সেই  শেষ সম্রাট
যে তার প্রেমিকের চিতা দেখে খুঁজতে থাকে প্রেম
যে ফার্নেসের বাইরে দাঁড়িয়ে ভালোবাসে প্রেমিকার পোড়া গন্ধ
চামড়ার গন্ধ 
পোড়া মাংস
আর খুঁজতে থাকে তার সাম্রাজ্যের অধিকার। 


  

জীবন আমাকে ডাকছে


জীবন আমাকে ডাকছে
... ঋষি
জানি না কে ডাকে আমায় চিরকাল
তবু কান পেতে প্রতি রাতে শুনি নিজের গভীরে ফিসফিস,
ভোর রাতে ফিরে আসি  শহরের রাস্তা
খুঁজে  পাই শুনশান রাস্তায় মানুষের জাগতে চাওয়া ব্যাস্ততার ভীড়।
জীবন আমাকে ডাকছে
জীবন আমাদের ডাকছে।
.
প্রত্যুত্তরে সারা পাই না জীবনের থেকে
ডাক শুনে পিছু ফিরে আমিও তাকাই,
ইতিউতি, এদিক-সেদিক
দরজার চৌকাঠ পেরোতে যাই,পায়ের দিকে চোখ পড়ে,
সেখানে অনেক শিকড়,
শিকড় মানে মায়া
শিকড় মানে জড়িয়ে থাকা সময়ের ভীড়ে অজস্র মুখ।
.
জানি না কে ডাকে আমায় চিরকাল
শহরের ধুলোয়, মানুষের ভীড়ে আমি হেঁটে যেতে দেখি জীবনকে,
রাস্তার লাইটপোস্টের তলায় শুয়ে থাকা আমার ছায়ায়
আমি নিজেকে মরতে দেখি রোজ।
কষ্ট ভোলাতে আমি তোমার কাছে যাই,
তোমার দরজায়
তুমি দেখো তোমার প্রিয় কবি দাঁড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত শব্দদের বুকে নিয়ে।
অনেকটা প্রেমিকের মতো তুমি সেইসময় আমায় জড়িয়ে ধরো
অনেকটা মায়ের মতো তুমি আমার কবিতাদের লালন করো
শব্দরা ব্যাকুল হয়ে সেই মুহুর্তে  কবিতা লিখতে চায়
কিন্তু মুহুর্তরা হারিয়ে যায় জানো।
কারণ প্রতিবার আমার কবিতায় সেই মেয়েটা ফিরে ফিরে আসে
প্রতিবার সেই ঝড়জলের রাতে
শহরের শুনশান রাস্তায় একলা দাঁড়িয়ে থাকে সবকিছু ছেড়ে
শুধু আমার কবিতায়। 

Thursday, April 16, 2020

শ্যোশাল ডিস্টেন্সিং


শ্যোশাল ডিস্টেন্সিং
... ঋষি
এক পা, দু পা করে বৃত্তের ঠিক মাঝখানে
চারিদিকে পর্যাপ্ত স্পেস।
পর্যাপ্ত দুরত্ব মাপকাঠিতে নতুন শেখা শব্দ শ্যোশাল ডিস্টেন্সিং
শব্দ নয়,
ঠান্ডা যুদ্ধ ঘরের ভিতর, বাইরে
আমি, তুমি,আমরা সকলে যোদ্ধা ।
.
ছোটবেলার যুদ্ধ, যুদ্ধ  খেলা
আজকের সময়ের শুধু মুখোশ লাগিয়ে নিজের ভিতর যুদ্ধ।
আমরা সকলেই নাগরিক
আমরা সকলেই সামাজক
তবু বুকের ভিতর শ্যোশাল ডিস্টেন্সিং শব্দটা অচেনা নতুন
তবু ভীষণ চেনা,
আমরা কি কোনদিনও  সত্যি হতে পারবো ?
.
ফিরে আসা বরফের ঘরে
ফিরে আসতে হয় সকলকে নিজেদের গভীরে বরফের ঘরে।
ঠান্ডা ঘর,
বোধহয় শান্তি শব্দটা আপোষকালীন ঠান্ডা ঘর।
বোধহয় শান্তি শব্দটা এই সময়ের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো
 ঘরবন্দী মানুষের অভ্যেসে মৃত মাছের চোখ।
তাই মানুষ একলা হয়ে যায়,
হয়ে যায় অভ্যস্ত  আপোষকালীন নিজেদের বেঁচে থাকায়
হয়ে যায় বরফ ঘরের মাছ।
তাই আমাদের মাছেদের সংসার
তাই আমরা সকলে একোরিয়ামে লাল, নীল মাছ,
আমরা নিয়মিত ভীষণ লাল,নীল পাথর,রঙিন জলে
আমরা শৃঙ্খলিত
কিন্তু মৃত।
আমরা শ্যোশাল ডিস্টেন্সিং এ থেকে সকলেই মৃত মাছ
আমাদের চোখে জলের খোঁজ
সমুদ্র, নদী
কিংবা
বৃত্তের বাইরে খোঁজা  শান্তি।
     

চিনতে পারছিস না


চিনতে পারছিস না
... ঋষি
খুঁজে পাচ্ছি না মেয়েটাকে
বুকের দেরাজে আকন্দ ফুলের গন্ধ,
আচ্ছা ডায়ালক চেঞ্জ, না হয় হলুদ বকফুলের।
কি আসে যায়
কিন্তু পাচ্ছি না খুঁজে সত্যি , বড্ড যন্ত্রনা সত্যি
নকসী কাঁথায় বুনে চলা জীবনযাপন।
.
অনন্ত ইতিহাস
বুক ছিঁড়লে পরে বুকের ভিতর একটা লাশ,
অনেকদিন
বুঝলে অনেকদিন শুধু হাফ হাতা শার্টে,
 শুধু পুরোনো  ইস্কুলের  প্যান্টের পকেটে, স্কুলের বেঞ্চে
পাশাপাশি বসা সেই মেয়েটাকে।
.
বছরের মাঝখানে এসেছিল
ত্রিকোণমিতির খাতায় সেই যে লিখেছিলাম তার নাম
কিছুতেই মনে পড়ছে না।
কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছি না
হারিয়ে যাওয়া সেই হাসিমুখ, টিফিনের পয়সায় কেনা সিনেমা টিকিট
ঝালমুড়ির ঠোঙায় আঁকা উর্মিলা দি
ডাকটিকিটের বইতে লুকোনো শেষ চিঠি।
পুরনো স্মৃতি হাতড়ে মিলে যাওয়া সেই হাসি
শুধু নামটা
খুঁজে পাচ্ছি না আজ কিছুতেই।
বুকের দেরাজে জমে অজস্র মুখ
ফিরে আসা ছেলেবেলা,
 আচ্ছা গল্প শুরু, স্ক্রিপটে একটা নাম কি রে খুঁজে পাচ্ছিস না
সুস্মিতা, চিনতে পারছিস না।

Wednesday, April 15, 2020

চুমু কাব্য


চুমু কাব্য
... ঋষি
মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করছি
সত্যি বলছি চলন্তিকা আমার চুমু পাচ্ছে ভীষণ।
চারদিক থেকে থুথু
চারদিক থেকে শুধু প্রতিবাদ মিছিল, মোমবাতি দর্শন
আপনারা বলুন
চুমু পাওয়াটা কি অপরাধের?
নাকি খাওয়াটা?
.
সত্যি মিথ্যে জানি না
তবে এটা জানি না পাশের পাড়ার সদ্য দুধ গজানো মেয়েটা
এই চুমু খাওয়ার জন্য হারিয়ে গেলো।
বিশ্বাস করবেন না জানি, তবু বলি
শুধুই এই চুমু খাবে বলে
 পঞ্চাশ বছরের গোপাল মুদিওয়ালা পরের বিয়ে করলো।
.
এমন অনেক চুমু অবতার হাওয়াবাতাসে অক্সিজেনের মতো
কানে শুনেছি তারপর বুঝেছি
সারা পৃথিবীর ২২ রকমের চুমু।
কোনটা গালে,কোনটা কপালে, কোনটা ঠোঁট, কোনটা নীচে
কোনটা ঠেকিয়ে
বাকিটা থাক।
তুমি কি এখন বুঝতে পারছো চলন্তিকা
চুমু কাকে বলে?
ওই যে চোখ বন্ধ করে,ওই যে ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকিয়ে
যাতা,যাতা
শুধু কল্পনায় চুমু।
.
বিদ্র ঃ তাও মশাই আপনারা বলছেন অপরাধ। 
  

কবিতা ও ঈশ্বর


কবিতা ও ঈশ্বর
.. ঋষি

চলন্তিকা বলে পাগলামি
আমি বলি শব্দরা দূষিত হলে কবিতা হয়ে যায়।
মঞ্চের উপর কবিতা আবৃত্তি করে সময়
সাধারণ মানুষ হাততালি দেয়
কিন্তু সময় কাঁদে
কারন খুঁজে পায় না তফাৎ ঈশ্বর আর কবিতার মাঝে।
.
আমি হাসি
চলন্তিকা জানে আমার প্রতি হাসির গভীরে লুকিয়ে থাকি আমি,
কারণ আমি কাঁদতে পারি না।
শুধু ঈশ্বর কোন কোন দিন ঘুম থেকে উঠে নদী এঁকে দেয় সময়ের শরীরে
সেদিন তুমি গড়িয়ে নামো আমার মুহুর্তে ঘামের মতো,
সময় ফুরিয়ে যায়
আমি বাড়ি ফিরে আসি শুধু কবিতা হয়ে।
.
চলন্তিকা বলে সময় কবিতা লিখলে আমি নাকি নগ্ন নৃত্য করি
চলন্তিকার বুক থেকে সরে মিথ্যে সমাজ।
আমার উদ্দাম নাচ তখন কোন ঈশ্বর স্পর্শ করে
ঠিক তখনি ভোর হয়
অথচ আমার কলমের নিবে রক্ত।
সাদা কাগজে ছোপ ছোপ আমার বুকের রক্ত সারা বেলায়
পাঠক হাততালি দেয় দারুন কবিতা বলে।
.
তখন আমার মৃত শরীরে সময়ের বিষ
তখন আমার মৃত সময়ে সম্পর্কের ভীড়
আমি মৃত তখন
চলন্তিকা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে শান্ত হ পাগল
আমি বলি আমি যদি  শান্ত হই কবিতা লিখবে কে
আমি বলি আমি যদি  রক্তাক্ত না হই ঈশ্বর লিখবে কে।





আগডুম,বাগডুম

আগডুম,বাগডুম
... ঋষি
চুরি হয়ে যাচ্ছে অক্ষর বলিনি কখনো
শুধু একোরিয়ামের গোল্ডফিসগুলো হঠাৎ বৈশিষ্ট্য ছেড়ে দিচ্ছে
দিনের পর দিন হয়ে যাচ্ছে দামাল ঘোড়া।
ঘোড়া ছুটছে আকাশের গায়ে
চারপাশে অন্ধকার,
ঘোড়া ছুটছে চাঁদেতে থাকা বোকা বুড়ির গল্পে।
.
চলন্তিকা চুরি হয়ে যাচ্ছে
চুরি হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র নামক বোবা দেশলাই কাঠি।
কাঠুরে খুঁজে পাচ্ছে না তার লোহার কুঠার
ঈশ্বর এগিয়ে  দিচ্ছেন একের পর  এক প্রশ্ন,
উত্তর জানি আমরা সবাই
তবু ভোকাট্টা আমার শব্দরা আকাশের গায়ে শুধু অনিয়ম
নিয়ম করে ধৈর্য্য বেড়ে যাচ্ছে।
.
ঝগড়া হচ্ছে নিজের সাথে
ঝগড়া করছি আমি নিয়ম করে চাঁদের বুড়ির সাথে।
বুড়িটা একমনে চরকা ঘোরাচ্ছে
আর দামাক ঘোড়া কেমন যেন বোকার মত চেয়ে আছে
ঈশ্বরের অপেক্ষায়।
জানি ভাবনারা সব ফুরিয়ে গেলে অপেক্ষা বেড়ে যাবে
বেড়ে যাবে চাঁদের বুড়িকে যুবতী দেখার লোভ।
জানি আমার অক্ষররা চুরি হয়ে গেলে কিছু যাই আসবে না
শুধু চাঁদের বুড়ির চরকা থেমে যাবে,
চাঁদ তখন ক্লান্ত হয়ে ঘোড়ার পিঠে বসে কবিতা লিখতে থাকবে
লিখবে আরো আগডুম, বাগডুম
লিখে ফেলবে আমার মৃত অক্ষরগুলো অন্য কবিতায়।

আকাশী শৈশব

 আকাশী শৈশব
...ঋষি
আইনস্টাইন লাল আপেল নামিয়ে এনেছিল আকাশ থেকে
শুধু পৃথিবী  রং বদলালো।
আয়নার গুঁড়োগুঁড়ো কাঁচে  শৈশবের দাঁত উঠে গেলো।
কাগজের নৌকা ভেসে গেলো নর্দমার জলে ,
হৃদয়ে আঁকা সেই আমার শৈশব
আজ কমিক্সের বইগুলো ছেড়ে
 রুপকথার ফ্যান্টম ছাপোষা এক ভীতু মানুষ হয়ে গেলো।
.
আজ সত্যির ঝড় উঠলে ভয় করে
আজ সত্যি সময়ের বিরুদ্ধে একলা দাঁড়াতে ভয় করে,
বুকের পাঁজরে কারণ অকারণে কাঁদতে থাকে,
আমার সাত বছরের ছেলে।
সময়ের ঝড়ে উড়ে যাওয়া অভিমানগুলো শুকনোপাতা আজ
তবু সেই অভিমানগুলো পুড়িয়ে দিতে ভয় করে।
.
সময় দায়িত্ব নিতে শেখায়
সময় শেখায় সার্কাসের দড়ির উপর দাঁড়িয়ে দৈনন্দিন পারাপার।
সময় একলা হতে শেখায়
শেখায় শৈশবে শেখা মিথ্যেগুলো সত্যি করে বলতে।
আমার ছোটবেলার ফরিদ কাকার কথা মনে পড়ে
যে আকাশে কবুতর উড়িয়ে বলতো
খোকন তুই এমন করে নীল  আকাশে উড়তে পারবি ?
কিন্তু ফরিদ কাকা মরে গেলো তাকে উত্তর দেওয়ার আগে,
তাকে বলার ছিল
আকাশে ওড়ার যোগ্যতা শুধুই পাখির
কারণ পাখির জন্য নীল আকাশ থাকে
থাকে শৈশব আকাশী রঙের গভীর আকাশে ।

স মী ক র ন



সমীকরন
..ঋষি
.
প্রতিটা মৃত্যু থেকে যায় বুকে
যেন নদীর শব্দ, নিরিবিলি স্তব্ধতাই ফিরে যায় রৌদ্র,
বৃষ্টি এসে পরে।
.
ভাঙা অধিকার নিয়ে সামাজিক পরিচয় কাঁদায় মানুষকে
মিছে কথা কাটাকাটি,
মানুষ বোঝে ভালো মৃত্যুর থেকে সহজ সমীকরন কিছু নেই,
তবু বেঁচে থাকা
নিরন্তর যুদ্ধ নিজের সাথে,
আদুরে বেড়ালের মতো মাথা ঘষে সময়ের সাথে সন্ধি করে।
.
যন্ত্রণায় কোন শব্দ হয় না 
যন্ত্রনার মানেটা বুঝতে হয়তো আমাকে হেঁটে যেতে হবে কয়েকশো যুগ।
ভাঙা গুড়োগুড়ো কাঁচের সম্পর্কে দাঁড়িয়ে
হয়তো হাজার বছর পরে
আমাকেও নিজের সন্তানকে বলতে হবে আর পারছি না বাবু
এবার কোল থেকে নাম বাবা
আর পারছি না।
হয়তো কয়েকশো সফর পরে আমি বেকার কোন পাশের চরিত্র
সাজানো সংসার থেকে সরে দাঁড়াতে হবে,
সকলকেই দাঁড়াতে হয় সময় করে নিজের প্রিয় সময়ের মৃত ছবির পাশে।
তবু অপেক্ষা থাকে
কারণ এইভাবে বেঁচে থাকাটা দমবন্ধ সময়ের সামাজিক সংস্করণ,
হিসেবি আমরা
আর বেহিসাবি কারণ , 
কারণ মানুষের বেঁচে থাকাটা সত্যি
বাকিসব মিথ্যে।
.
অথচ সময় ক্রমশ পা বাড়াতে থাকে হারানোর দিকে ।


   

Tuesday, April 14, 2020

অপেক্ষা এখন


অপেক্ষা এখন
.. ঋষি
এক শতাব্দী পর সুর্য উঠবে কিনা জানি না
আমার অফিসের জুতো আবার কবে ঘুম থেকে উঠে বলবে
রেডি আমি,
কবে আবার আমার ঘুম ভাঙবে আমার শহরের
আমি জানি না,
জানি না কবে আবার জেগে উঠবে আমার আমাদের বেঁচে থাকা
নিয়মিত সাজে।
.
শুধু জানি
অপেক্ষা করতে হবে আমাদের দশ বাই দশ খুপড়িতে থেকে,
শুধু আমি  জানি চলন্তিকা
প্রতিদিন মাঝরাতে নিয়ম করে নড়েচড়ে বসবে আমাদের স্মৃতির শহর
 পলাতক চোখ খুঁজে ফিরবে আমাদের পুরোনো বাঁচা।
এখন পাপ্তি সাময়িকী যোগ বিয়োগ ছেড়ে
আমাদের অপেক্ষা করতে হবে প্রাচীন বটের ঝুড়িতে
তোমার বাড়ির জানলা দিয়ে  দেখা পাখির বাসায়
আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
.
তুমি জানো চলন্তিকা
যতগুলো রাত অপেক্ষা আর অনিশ্চয়তায় নিদ্রাহীন আমরা
আমাদের শহর,
গুনে গুনে ঠিক ততোগুলো নক্ষত্রের বুকে লেখা আছে
আমাদের আগামী ।
ঠিক যেভাবে আকাশ আসমানী নীল থেকে আমাদের সম্ভাবনা
আস্তে আস্তে গাঢ় নীলে পরিণত হয়েছে
ঠিক যেভাবে সময়ের  আর্তনাদ আমরা কান পেতে শুনছি
ঠিক এমনি বাঁচতে হবে এখন
আমাদের এখন ঘরবন্দী থাকতে হবে।
বিশ্বাস করো তোমাকে ভালো না বাসলে বুঝতেই পারতাম না
পৃথিবীর বুকে এখনো অলৌকিক কিছু আছে
আছে অপেক্ষা।

শুভ নববর্ষ ১৪২৭

শুভ নববর্ষ   ১৪২৭
... ঋষি
নতুন সময় চাইছে জীবন
ক্যালেন্ডারের পাতায় খুব সহজে ছিঁড়ে ফেলছে পুরোনো হিসেব,
চলন্তিকা, আমি, তুমি, নতুন বছর
সব গৃহবন্দী এইসময়।
শুধু স্মৃতির পাতা ছিঁড়ে খুঁজে আনা হিসেব
কি পেলাম আর কি হারালাম।

গৃহবন্দী শহর জানলার ভিতরে দাঁড়িয়ে খুঁজছে মুক্তি   
মুক্তি শব্দটা চিরকালীন গল্প, উপন্যাসে মানায়,
আর মানায় স্বপ্নে।
কেউ কি আদৌ ভাঙতে পারে শিকল ?
কেউ কি সত্যি বদলাতে পারে সময় ?
নাকি শুধু অপেক্ষা
নিজের আকাশে স্বপ্ন বোনা সোনালী আকাশের কবিতা।
.
চলন্তিকা তোমার মন খারাপ
আর মনখারাপ আমার হৃদয়ের দেওয়ালে একটা অন্ধকার ছবি,
জানি তুমি খুঁজছো অপেক্ষা
আর সময় খুঁজছে শরীর, সংসার আর একলা থাকা দিন।
.
আমরা তো সকলে বেঁচে,
নিজেদের গভীরে বলবিয়ারিং ভাঙা পুরোনো  সাইকেলের প্যাডেলে পা দিয়ে
আমরা তো আছি বেঁচে,
মাথার ভিতর ক্রমাগত সাইকেলের পুরনো হাড় পাঁজড়ের শব্দ
তবু পুরনো ঘন্টি বাজছে নিয়মমাফিক, ক্রিং ক্রিং
দরজা খুলছি সকলে, বন্ধ করছি।
দেখো না আজ বাঁচতে, বাঁচতে ১৪২৬ শেষ করে নতুন বছরে
অথচ ঝগড়া থামছে নিজের সাথে, তোমার সাথে
এতো শোরগোল, এত মৃত্যু নিজেদের
তোমাকে জানাতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু বলতে পারছি কই
" শুভ নববর্ষ   ১৪২৭ "
ভালো থেকো চলন্তিকা।

  

Monday, April 13, 2020

কেন লিখবো কবিতা?



কেন লিখবো কবিতা ?
... ঋষি

কি লিখছি ?
কেন লিখছি ?
পেট কি ভরবে কবিতায়,সত্যি কি দিন বদলাবে কবিতায়।
কলমের দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে দেওয়া যাবে মানুষের নিলজ্জ যন্ত্রনাকে
লিখে দেওয়া যাবে চলন্তিকা তোমাকে সত্যিগুলো,
কুকুরের মতো মরতে থাকা মানুষগুলোকে কি বাঁচানো যাবে?
.
স্তব্দ রাজপথ
বাইরে অন্ধকার ফুটপাতে কারা যেন খালি পেটে ভুতের মতো ঘুমিয়ে,
আমার চোখে ঘুম নেই
আমার পেটে সভ্যতার খিদেয় যেন গুলিয়ে উঠছে শরীর।
আমিও নিস্তব্ধ,বমি পাচ্ছে খিদেতে
আমিও দেখতে পাচ্ছি নিজেকে রাস্তায় আগামী দিনে।
ওই তো ওই নিস্তব্ধ ক্ষুদার্থ শরীরগুলোর মাঝে আমি শুয়ে
ওই তো খালি পেট থেকে উঠে আসছে আমার গতজন্মের পাপ
সময়ের আর মানুষের অজস্র পাপ
বমি
আজ নষ্ট করছে  সভ্যতা।
.
কি হবে দোষ দিয়ে
কি হবে চিৎকার করে এই সময়ের বুদ্ধিমান মানুষের প্রতি, বুদ্ধিমান রাষ্ট্রের প্রতি।
এর পরও রাস্তায়, রাস্তায় গাড়ি বেড়ে যাবে
এর পরও আমাদের বিলাস যাত্রায় বেড়ে যাবে ফ্রিজ, টিভি আর ওয়াশিংমেশিন
এর পরও রাষ্ট্র কিনবে বোমা, বারুদ, মৃত্যু সরঞ্জাম
এর পরও আরো গাছ কাটা হবে,আরো স্কাইস্ক্যাওয়ার বাড়বে, বাড়বে শহর
এর পরও হয়তো সভ্যতার মানুষ আরও নকল মানুষ তৈরি করবে মৃত মানুষের ভিড়ে।
কিন্তু বিশ্বাস করো মানুষ আর থাকবে না
কিন্তু বিশ্বাস করো মানুষ আর বাঁচবে না।
মৃত মানুষের ঢিপির উপর দাঁড়িয়ে আমরা দেখবো নকল মানুষ
যারা শুধু লাভ বুঝবে
যারা শুধু ধ্বংস বুঝবে
যারা শুধু আধিপত্য বুঝবে
যারা শুধু তৈরি করবে আজকের মতো মৃত মানুষের দেশ,
তাদের কোনো অনুভব নেই, নেই মন
তবে কেন লিখবো আমি কবিতা ?
কেন লিখবো সময় মৃত মানুষের জন্য ?



Sunday, April 12, 2020

নষ্ট এই সময়


নষ্ট এই সময়
... ঋষি
গোটা এগারোবার নিজেকে নষ্ট করার পর
নিজেকে দেখলাম ক্রাচে ভর করে দাঁড়িয়ে রোগের পৃথিবীতে।
শব্দ করার ইচ্ছে মরে গেলে মানুষগুলো মৃত হয়ে যায়
বুঝলাম, ভয় পেলাম।
আর পেলাম
অনেকগুলো ফ্ল্যাশব্যাক অভিযোগ নিজের গভীরে।
.
দোষ দি না চলন্তিকা
শুধু শব্দ মন্ডলীর হিসেব মিলিয়ে ঘর বন্দী বাউন্ডুলে আমি
আজ শুধু মৃত্যু দেখলাম মুহুর্ত ধরে।
চলন্তিকা তোর মিষ্টির হাঁড়িতে স্বাধীনতা হেঁটে গেলো 
হেঁটে গেলো তোর বোদের সুগন্ধে পিঁপড়ে জীবন,
আমার মাথার ভিতর পিঁপড়েগুলো আজ রোগগ্রস্থ
রোগগ্রস্থ আমার শহরে ডিপ্রেশন।
.
গোটা এগারোবার নিজেকে নষ্ট করার পর
আমার পাগুলো পচে গেছে, আমার হাতগুলো অন্ধকারে রাখা।
এখন তোর রঙিন জীবনে মিষ্টি মুখ
এখন তোর নীল আকাশে অবাধ্য ঘুড়ি
এখন তোর পুরুষের মুখে ফিরে পাওয়ার হাসি
এখন আমি দাঁড়িয়ে শহরের একপাশে শব্দহীন নীরব কবিতার হয়ে।
.
কবিতা
আমি মুগ্ধ চিরকাল
তুই জানিস আমার হৃদয়ে রাখা চলন্তিকার পা।
আমি জন্মগত খোঁড়া এই জীবনে
আমি জন্মগত হারিয়েছি আমার পরিচয় বারংবার,
বারংবার আমি দাঁড়িয়েছি সময়ের দরজায় খালি হাতে।
আজ এসে দাঁড়ালাম শুনশান ফাঁকা রাস্তায়
সাথে আমার হাজারো কবিতা
সাথে আমার হাজারো না বলা কথা,
ফ্ল্যাশব্যাকে ফুটে উঠলো তোর মুখ, তোর আখরোট ঠোঁট
ঠোঁটের কোনে হাসি,
আমি মুগ্ধ আবার
ক্রাচ ছেড়ে একটা সময় হেঁটে চলে গেলো তোর হাত ধরে।
আমি দাঁড়িয়ে
নষ্ট এই সময়। 

     
   

Saturday, April 11, 2020

বাজারী ম্যানিকুইন


বাজারী ম্যানিকুইন
... ঋষি
আমাকে ছেঁড়বার জন্য কোন কম্পিটিশন দরকার নেই
দরকার নেই আকাশের গায়ে থুথু ছিটিয়ে
হাতের ছুঁড়ি দিয়ে আমার হৃদপিন্ড কাটার।
তোমার ইনবক্সে জমে থাকা প্রেমিক পুরুষের ডিসপ্লে
অজস্র অনুরনন বলে দেয় তুমি সুন্দরী
তাই বলে এই পৃথিবীতে তুমি যে একমাত্র এমন তো নয়।
.
সত্যি পুরুষ, কুকুর নয়
আসলে পুরুষ শব্দটা পাহাড়ের মতো কঠিন
আসলে পুরুষ শব্দটা নারী নদীর কাছে একটা আশ্রয়, একটা অধিকার।
সত্যি বলতে কি এটা অধিকার হারানোর গল্প নয়
গল্প একটা না পাওয়ার,
একটা অশ্রাব্য জীবন যখন বাজারী হয়ে যায়
তখন তার অনুভুতির সবটাই বিক্রি হয় বাজারে ।
.
মিস প্রিয়াংবদা তোমার কবিতার নাম
যার বাগানে অজস্র মধুসূদন শুধুমাত্র নিজের পরিচয় খুঁজতে থাকে,
তোমার প্রজাপতি ডানায় ভর করে
স্বপ্ন দেখতে পারে,
কিন্তু নিশ্চিত তাদের মৃত্যু তোলা তোমার রাক্ষসী চোখের ইংগিতে
তোমার সাজানো শরীরের লুকোনো বাসনায়। 
একবার আয়নায় চোখ রেখে দেখো
তোমার প্রাচীন স্তনের ডগায়  অজস্র কুকুরের দাগ।
প্লিজ নিজেকে এইভাবে পণ্য করো না
প্লিজ এইভাবে ডিসপ্লে করো না নিজের বাজারী নাম,
তুমি সুন্দরী হতে পারো,
কিন্তু নারী হিসেবে তুমি দাঁড়িয়ে আমার কবিতায়
শুধু মাত্র বাজারী ম্যানিকুইন সেজে।
  

জিনা এহা মরনা এহা


জিনা এহা মরনা এহা
..ঋষি
কান্নাকাটির গল্পরা শেষ হয় না
শেষ হয় না আমার মৃত শরীরের পাশে শুয়ে শব গোনা,
ক্রমশ আকাশ গুছিয়ে যায় প্রতিদিন নিয়ম করে অন্ধকারে
আর আমি অন্ধকার থেকে তুলে আনতে থাকি স্বপ্ন জীবন।
শহরের রাস্তার পাশে অন্ধ কানাই গান গায় অবিরত
" জিনা এহা মরনা এহা "।
.
আমি আড়াল থেকে শুনি টেলিভিশনের খবরে  দেশ বন্দী জীবন
আমি সময় থেকে বুঝতে পারি  অন্ধ কানাইয়ের কষ্ট।
শুধু বুঝতে পারি না আজও নেশার সময় মানুষ কেন বাঁচতে চায়,
আজও মানুষ মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে কেন  স্বপ্ন  বোনে
"এয়সা দিন নেহি রহেগা",
কি বদলালো এত সময়ে, কি বদলানো যায় ?
আজও খিদের ডেফিনেশন বদলালো কি ?
আজও কি সাংবিধানিক বাঁচায় মানুষগুলো বদলালো ?
.
প্রতিবাদ শব্দটা তো আজও তো স্ট্রেচারে শুয়ে
প্রতিরোধ শব্দটাও আজ উপস্থিত শুধু মানুষের কন্ডোমে। 
অন্ধ কানাই কি শুধুই কি একাই বোঝে
" জিনা এহা মরনা এহা " গানটার মানে।
নাকি একটা নাটক
একটা মুখোশের সভ্যতায় আমরা সব মৃত নাগরীক,
এই মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে
এই সময় আমরা সকলেই  শুধু অপেক্ষায় অন্য এক মৃত দিনের।
আমি, তুমি, প্রতিটা গাছ,প্রতিটা নদী,প্রতিটা জীবিত
সত্যি কি নিজেদের আয়নায় আমরা দেখি নিজেদের মুখ
নাকি গালে, কপালে, সারামুখে রং লাগিয়ে, ঠোঁটে লিপস্টিক ঘষে
সময় সার্কাসে একলা দাঁড়িয়ে
 অন্ধ কানাইয়ের লিপে নিজেদের গভীরে গাই,
নিজেদের নগ্নতায় গাই
নিজেদের সত্যিতে গাই
নিজেকে বোঝাতে
" জিনা এহা মরনা এহা "।



       

Friday, April 10, 2020

পাথর ভাঙার শব্দ


পাথর ভাঙার শব্দ
... ঋষি
পাথর ভাঙছি
ভেঙে ফেলছি একের পর এক জনবহুল শব্দ সময়ের সাথে,
ব্যস্ত জীবন,তোমার বারান্দার রেলিং বেয়ে একলা রাত।
তুমি ভাঙছো আকাশের চাঁদ
কিংবা দুরের  গ্রহের বাঁচতে থাকা অন্য একটা প্ল্যানেটে
বাঁচার নিঃশ্বাস।
.
শুধু পাতা ঝরে পরার শব্দ,
শুধু বুকের নিঃশ্বাসে আমাদের বুকের লাবডুব শব্দ,
শুনতে পারছো পাথর ভাঙা হচ্ছে
শুনতে পারছো পাথুরে সময়ে ঠোঁট ঘষে একলা থাকার ভীড়,
ক্ষতবিক্ষত রাত,ভাঙা চাঁদ
চাঁদের গায়ে উঁচুনিচু পাথুরে পথ, তোমার শাওয়ারে ভেজা আমার স্পর্শ
ঠিক যেন আমি মৃত হৃদস্পন্দন চাঁদের গায়ে।
.
চাঁদের দিকে দেখো না এখন
আমি হারিয়ে যাবো এই সময়ে ভাসতে থাকা কাগজের উড়োজাহাজে,
একলা রাত ঘুমিয়ে পড়ো চলন্তিকা, মৃত শরীরে এখন চ্যাট চ্যাটে ঘাম।
ঘুম আসছে না জানি
জানি তোমার বুকের ভিতর এখন পাথর ভাঙার শব্দ,
জব্দ আমি।
তুমি বলেছো আমায় তোমার সময় এখন শুধু বেঁচে থাকা
আমি জেনেছি গুপ্তচরের কাছে তোমার শরীর পাথর এখন
শুধু নাটকে লেগে আছে মৃত নিঃশ্বাস।
আর
পাথর ভাঙার শব্দ, মৃত আমরা
এই সময় সাক্ষী শুধু পাহাড়ের নিয়মে গভীরে গোপন খনিজ।


Thursday, April 9, 2020

উই শ্যাল ওভার কাম


উই শ্যাল ওভার কাম
... ঋষি
খড়কুটো আঁকড়ে  বেঁচে আছি
স্পন্দনে লেগে আছে রোগ যাযাবর।
বারান্দায় টবে লাগানো শব্দ গুলো রৌদ্র খোঁজে
খোঁজে স্পর্শ মনের কোনে বৃষ্টি ভেজা দিন।
এই শহর বদলায় রোজ
খবর রাখে না আবহাওয়া দপ্তর বদলাচ্ছে দিন।
.
 জানি তোমার সাজানো বাগান আজ রোগগ্রস্থ আমারি মতো
আমি সভ্যতা ব্যাকুল পৃথিবী,
শুধু বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি সময়ে বাড়তে থাকা রোগ।
অনাহারে কাঁদছে শিশু নিরুপায়, কাঁদছে সময়,
তোমার চোখের কোনায় জল
নিরুপায় আমি শব্দ জব্দ আর কবিতায় কোলাহল।
.
রৌদ্র ছকে বেছেছিলাম জীবন
বেজে উঠেছিল গান "  উই শ্যাল ওভার কাম ",
মানে বুঝি নি সেদিন
আজ বুঝি ঘরবন্দী, কোয়ারিন্টামে থাকা মানুষ
আর করো- নার অজানা নাম।
.
জানি আমার পৃথিবীতে " তুমি " আছো
আছে তোমার, আমার ধরনের হাজারো একলা জীব।
জানি আমাদের পৃথিবীতে শব্দ আছে
আছে কবিতা,আছে জন্ম
কিন্তু মৃত্যু নেই , আসলে মৃত্যু বাঁচতে পারে না এখানে
শুধু নিস্তব্ধতা আছে।
আর শুধু আছে এক সুইসাইড নোট
আমরা বাঁঁচবো
আর সেই গানটা " উই শ্যাল ওভার কাম "। 

এটাও একটা গল্প


এটাও একটা গল্প
... ঋষি
আলাদা আলাদা শেডে দিনলিপি আঁকা
না না আমি হিসেব কষছি না,
গত কয়েকদিনে আমি প্রায় দেড়শো গল্প প ড়ে ফেল্লাম।
পাতার পর পাতা চরিত্র,জীবন, যাপন
প্রেম, হিংসা,চুমু,বিচ্ছেদ, অফিসের টেবিল, চায়ের কাপ,মৃত্যু
কিছু বাদ ছিল না
শুধু বাদ গেছে আমার জীবন,তোমার জীবন, তোমাদের জীবন
কি যেন এক অসুখ
সব স্তব্ধ হয়ে থেমে গেছে।
.
তবু কবির কল্পনা
কখন যেন সময়ের বস্ত্র হরণ করে,পাশের ঘোষ বাড়ির বারান্দা ছাড়িয়ে
আমার ছেলের আঁকার খাতা পাতা ছেড়ে,রান্নার উনুনের আগুন ঘেঁটে
জল্লাদ এসে দাঁড়িয়ে সকলের বাড়ির দরজায়,
বাড়ির বাইরে বেড়োনো নিষেধ
বেড়োলেই ঘচাং ফু
মাথা উড়ে যাবে,উড়ে যাবে বাঁচাটুকু নিয়ম থেকে।
.
অদ্ভুত না
কে বা কারা জানি?
কি একটা অসুখ জানি?
জানি না কি হবে,রাষ্ট্র কি পয়সা দেবে বেঁচে থাকার আমাদের।
জানি না আগামীতে ভিখিরিটোলার কুষ্ঠ আক্রান্ত হরিপদ
ভাত পাবে কিনা?
 বাঁচার খিদে বুকে করে মেদিনীপুর থেকে আসা নিতাই মিস্ত্রি
আর কাজ পাবে কিনা ভবিষ্যতে।
এমন হাজারো প্রশ্ন একলা এখন
একলা এখন চলন্তিকা টিভি পর্দাতে তাকিয়ে প্রহর গুনছে বেঁচে থাকার
প্রহর গুনছে পুরোন স্মৃতি থেকে উঠে আসা ছবির এলবামে,
আমি, তুমি কিংবা আমরা সাক্ষী
আমাদের সময়ের চরিত্রগুলো হয়তো আগামীতে বদলাবে সুদিনে
কিংবা
আমাদের নিয়ে তৈরি হবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি মন্বন্তর ছিয়াত্তর,
না না ভয় পাবেন না
ভাবুন এটাও একটা গল্প, যেটা আমি লিখছি শুধু ভবিষ্যতকে ভেবে।


Wednesday, April 8, 2020

দূরের মানুষ


দূরের মানুষ
... ঋষি

মুশকিল হলো আমি এখনো একা বাঁচতে শিখি নি
তোর মতো হয়ে যেতে পারি নি দূরের মানুষ।
মুশকিল হলো আমি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সাক্ষী নই
শুধু সময়ের ঘরে  একলা হতে চাই,
পায়ে পায়ে মিলিয়ে সময়ের পাশে দাঁড়িয়ে তোকে বলতে চাই
আমি আছি কারণ তুই আছিস তাই।
.
তাই আপাতত এখন  আমি তোর ভাবনায় স্মৃতি
 জানি স্মৃতি শুধু মাছের গোডাউনে মৃত মাছের চোখে জল,
জানি এখন সময় শান্ত,
নীরব কোলাহল।
.
জানি শহরের পথে এখন একলা থাকার ভীড়
ভীড় তোর চোখের পাতায় অজস্র মৃত মানুষ আর স্মৃতি
কিন্তু মুশকিল হলো 
আমার মতো মৃত যারা, তাদের একলা থাকাই রিতী।
.
এমন হাজারো মুশকিল,এমন হাজারো প্রশ্ন
কিন্তু উত্তর একটাই বেঁচে আছি৷
আসলে আমি তোর মতো ভাবতে পারি না রাষ্ট্র , সময় আর শহর
আসলে আমি তোর মতো ভাসতে পারি না মিথ্যে অভিমানী সুখে
সত্যি এটাও তোকে আমি বলতে পারি না " ভালোবাসি "।
কারণ ভালোবাসি বলার ছিল না কোনকালে
শুধু বলার ছিল আমি আছি তুই আছিস তাই। 
তাই শুধু মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে
নিজের জন্য
তোর জন্য
কেমন আছিস?
ঠিক কতটা বেঁচে?



Monday, April 6, 2020

মুগ্ধতা


মুগ্ধতা
.. ঋষি
.
সময় পেড়িয়ে গেছে বহুযুগ
কাতিল সময় শরীরে টেনে দিয়ে গেছে ব্লেড দিয়ে চেঁড়া অজস্র ক্ষত,
আমি হাসি তবু।
মাথার আধপাকা অগোছায় চুলে হাত বোলালে, তোমার উষ্ণ নিস্তব্ধতায়
চলন্তিকা নিজেকে মৃত মনে হয়
মনে হয় আর বাঁচা কেন, এই শেষ মুগ্ধতা।
.
ফরেন্সিক রিপোর্টে আমার মৃতদেহ থেকে উঠে আসে
আমার স ম য়। আমার রাষ্ট্র।
আমি ঘুম থেকে উঠে বসি রাষ্ট্রর কথা ভেবে
এইবার  যুতসই ত্রানশিবির,বৃক্ষরোপণ, রক্তদান লিখতে হবে আমায়,
লিখতে হবে হিমোগ্লোবিন সমৃদ্ধ মা,কর্ম হীনতা মুক্ত পৃথিবী
পৌরুষের সাথে পুরুষ, ভিটামিন সমৃদ্ধ শৈশব 
সমস্ত ভন্ডামি সরিয়ে এক শিক্ষিত সমাজ।
.
আমি মুখ ধুয়ে চায়ের কাপে ঠোঁট পুড়িয়ে ভাবি
এইবার সমস্ত মুখোস ছিঁড়ে প্রতিটা মানুষ মুখোমুখি সত্যির সাথে,
এইবার মানুষগুলো সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে মুক্ত পৃথিবীতে
এখন মানুষের মুক্তি, এখন মানুষের শান্ত। 
ঠিক এইসময় বেজে ওঠে আমার সাতশো স্কোয়ারফিটের কলিংবেল
দরজা খুলে দেখি আমার কাজের মেয়েটা দাঁড়িয়ে,
আমি প্রশ্ন করি, কেমন আছেন তোমার বাবা?
মেয়েটা ডুকরে কেঁদে ওঠে বলে বাবা আর নেই।
আমি অবাক হই,
কিছুই বদলালো না তবে, পৃথিবীতে কিছুই বদলানো গেলো না।
আমি কবিতা লিখতে বসলাম
 খস খস করে লিখে ফেল্লাম আট, দশ লাইন প্রেমের কাব্য,
আমার খাতার উপর আছড়ে পরতে লাগলো আমার বিন্দু বিন্দু রক্ত।
আবার আমি  মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে
এখন মুখোমুখি আমার তুমি
আমি কান্না ভুলে গেলাম,ভুলে গেলাম রাষ্ট্র
লিখে ফেল্লাম এই কবিতা আমার রক্তে শুধু তোমার মুগ্ধতায়।



  

নির্জনতা- ৩

নির্জনতা - ৩
... ঋষি
খুলে বসেছি শেষ কয়েকদিনের হিসেবনিকেষ
হারিয়ে ফেলা সময়ে আমার চারপাশে ওষুধের দোকান,
আমার অসুখ
অসুখ সময়ের গায়ে চুরি করে বাঁচতে চাওয়া অধিকার।
.
চারদিকে রিমেকি শব্দ
আসলে সবটাই বড্ড কৃত্রিম, বড্ড নকল এখানে
 কিছুটা তোমার ওই রঙীন শহরটার মতো
তোমার হাসি, তোমার চোখ
 বাইরে থেকে আলো ঝলমল কিন্তু ভেতরটা বড় অন্ধকার।
.
ছেঁড়া উপন্যাসের পাতায় মতো হারিয়ে যায় প্রতিটা পৃথিবী
কিছুটা এগিয়ে গেলে একটা একটা করে চরিত্র ক্রমশ ঝাপসায় কুয়াশায়,
তুমি লুডো খেলতে চাও
কিন্তু এখন সময়ের অসুখ।
তাই আস্তে আস্তে যোগাযোগ কমতে থাকে আমাদের
আস্তে আস্তে কথার তাল কাটতে থাকে
প্রায় নিঃশেষিত মৃত ব্যাকুলতা  অসমর্থ হয় শব্দ জোগান দিতে।
.
প্রতিদিন একটু একটু করে রেশম সুতোর রোঁয়া উঠে যায়
প্রতিদিন একটু একটু করে অসুখ বাড়তে থাকে শহরে,
ঠেলাঠেলি ভীড়, পাওয়া যায় না লুডোর ঘুটি।
সময় ছিঁড়তে থাকে
ভীত ঘরগুলো এখন অন্ধকারে ভুতের মতো  কাঁপতে থাকে
 সূর্যাস্তের রং লাগা এক একটা দিন সরতে থাকে বেঁচে থাকায়,
শরীরটা থেকে যায়, শুধু আত্মাটা মরে যায়।
.


খুলে রাখা অধ্যায়টা শেষ হয় না
কোনোদিন,
শুধু নির্জনতায় বাড়তে থাকে মানুষের মনের অসুখ
আর কমতে থাকে পৃথিবীর সাথে মানুষের সংযোগ।

Sunday, April 5, 2020

লেডিস ফিগার


লেডিস ফিগার
.. ঋষি
.
আলকোহলে নেশা হয়
কিন্তু মেয়ে মানুষের নেশা,
সমাজ বলছে লেডিস ফিগার, লেডিস ফিগার
উপছে উঠছে স্নেহ,
আমি ঈশ্বর মানি, পাড়ার জ্যেঠু মানে না
জড়িয়ে ধরছে স্নেহ।
.
 প্রকৃতি কামড়ে খেলে ব্ল্যাকআউট হয়
হাত ধরে পথ হাঁটছে আমার ছেলে পাশের বাড়ির মোনার সাথে,
আমার ঈশ্বর সাক্ষী আমি দেখছি না
কিন্তু চিন্ময় দেখছে, পলিথিনে ভরে যাচ্ছে বোবা পৃথিবী
চিন্ময় প্লাস্টিকে বীজ ফেলছে,
মোনা ফুঁপোচ্ছে।
.
 ভ্যানগগের কান কামড়ানো
আমার চোখে শুঁয়াপোকা ঘুরছে,প্রজাপতি হবে।
 যাদের ব্যাগে অপরাধী কন্ডোম
না না ভালো বাচ্চা,
খারাপ হলো ওরা যাদের জরায়ু আছে,আছে ফ্যাক্টরী।
সারা পৃথিবীতে ম্যারিজুয়ানা চাষ করছে
সিগারেটের পেট চুষে বেড়িয়ে আসছে তামাক
নেশা
কারা যেন লেদিস ফিগার খুঁজছে।
মেয়েদের অশান্তি ওই শরীর
মা হওয়ার আগে মা হচ্ছে কেন ওরা,
বলতে পারে
ব্লাউজ নামিয়ে দুধ বার করে " এটা বুক "
অথচ পোজে দাঁড়িয়ে মুদ্রা হয়ে যাচ্ছে।
.
মোনা একলা শুয়ে রক্ত ভাসাচ্ছে
মা বলছে চিৎকার করতে না,
চিন্ময় তীর, ধনুক খেলছে, তীর মারছে মোনার জরায়ুতে
ফেটে বেরোচ্ছে প্লাস্টিক,
চিন্ময় ভাবছে আজকাল আর কন্ডোমে বিশ্বাস করতে নেই।




ঘুনপোকা



ঘুনপোকা
... ঋষি

ব্যাক্তিগত খুঁজছি,
আমার বাইরে ব্যাক্তিগত কিছু নেই,যা আছে ভিতরে
ইট, পাথর, পায়রার বাকবুকুম
খোলা আকাশ
আর চারটে দেওয়াল মানে নয়  ঘর।

ঘর বল্লে আমার কারখানার কথা মনে পরে
একটা মেশিন ক্রমাগত প্রোডাকশন নিয়ে ব্যাস্ত,
সন্তান,পেট ফোলা গরু, বোধহয় বাচ্চা হবে,
সংসারে বাচ্চা না থাকলে
দুধ হবে না মেয়েদের।

  সবাই আমার দিকে আঙুল তুললো বলছে উড়োনচন্ডী
প্রেম, কবিতা আর পেশা নিয়ে বাঁচা।
পিছনের পায়খানার ট্যাংকের উপর ঘাস হয়েছে
এর পর গভীর শিকড়
পাথর চাপা দিতে হবে সবুজ ঘাস।

আয়নার সামনে থেকে সরে এলাম
না আমার মুখ নেই, নেই আলোটুকু,
যাকে নিজের ভাবা যায় এমন সত্যি বলতে নেই
আর যা বলতে হয় আমি বলতে চাই না,
কি অভাব?

অভাব বলতে মনে পড়লো
তোকে একটা চুমু খাবো, তার আগে মরবো না,
তুই বলছিস ছোটলোক।
তোকে বলা হয় নি, বহুবার আমি বড় হতে চেয়েছি,
পারি নি
কারণ বাঁচতে চাই নি কখনো।

প্যারাডক্স এক অদ্ভুত নেশা জাগায়
কষ্ট আর চেতনার মাঝখানে এক ফালি জায়গা,
চেতনা ছাড়া কষ্ট কই আর?
 খুনসুটি ব্যাকরণ হারিয়ে আমার এই অনুগুলো মিথ্যা
না মানছি না
ঘুনপোকা বোধহয়।

  

একা রাত্রি আর আমি

একা রাত্রি আর আমি
.. ঋষি
.
আমি রাত্রির বন্ধু হতে পারি নি
কিংবা রাত্রি কখনো আমার কল্পনায় সুন্দর হতে পারে নি,
 অদ্ভুত এক যোগবিয়োগ খেলা রাত্রির সাথে।
সারা শহর যখন ঘুমোয়
শহরের ম্যানহোলে লোকানো তখন আমার ইচ্ছারা ঘুমোতে চায়
অথচ ঘুমোতে পারে না অস্তিত্ব  , 
নিয়মের বুলেটপ্রুফ পোশাকে আটকে যায় বারুদের আগুন
বিপ্লব আসতে পারে না।
.
শতাধিক ক্রোধ তখন আমার শরীর হাতড়াতে থাকে
পাশবিক কোন অধিকার বোধ আমার হাত বেঁধে রাখে,
আমি পালাতে পারি না,আমি নড়াচড়া করতে পারি না।
কোন এক অদম্য লালসা  সেই মুহূর্তে আমার শরীর চুষতে থাকে
নামতে থাকে শরীরের গভীরে
আমি ঈশ্বরকে খুঁজতে থাকি মুক্তির আশায়।
.
আমি রাত্রির বন্ধু হতে পারি নি
তাই রোজরাতে নিয়ম করে জড়িয়ে ধরি আমি  আমার কোলবালিশ,
বুকের কাছে পিষে ধরে ফুরোতে চাই এই অন্ধকার।
তখন  না ফুরোনো আক্রোশে যেন কোন দানবিক মোমবাতি হয়ে  ঢুকে যায় সময়ে
ভালো থাকা অধিকার খোঁজে রাষ্ট্রে
 চিৎকার করে
প্রতিহত করতে চায় বেঁচে থাকার কারণগুলো,
কারণ ফুরোতে থাকে
ফুরোতে থাকে রাত্রি।
.
সকালের ঘুমন্ত চোখে আমি তখন নগ্ন এই রাষ্ট্র
আমার ন্যাংটো শরীরটা খুঁজে পাওয়া যায়
এই শহরের অন্য বিছানায়,
আধখাওয়া কোন ভারতবর্ষ
আমার মত
অন্য কোন শরীরে উপলব্ধির আড়ালে রাত্রির সাথে  ।

Saturday, April 4, 2020

আকাশ ছাড়া জীবন


আকাশ ছাড়া জীবন
.. ঋষি
.
বহুদিন হলো সভ্যতা লিখিনি
লিখিনি সভ্যতার পাথুরে দেওয়াল ভেঙে বেড়িয়ে আসা আত্মাগুলোকে।
বহুদিন হলো চেয়ে থাকা হয় নি খোলা আকাশের দিকে
খোলা আকাশের বুকে মাদুর পেতে তাকিয়ে থাকি নি তোমার দিকে।
আকাশ ভরা নক্ষত্রদের সাথে চুপি চুপি কথা বলি নি
কথা বলি নি বুকের অলিন্দে লোকানো তোমার ধুকপুকের সাথে।
.
সব কেমন বাউন্ডুলে হয়ে যাচ্ছে
ভালোবেসে কেউ হারিয়ে ফেলছে তাকিয়ে দেখা শহরের একলা রাস্তায়,
কেউ আবার ব্যস্ত ইউটিউবে শোনা ক্রমাগত একলা প্রেমের সাথে।
কেউ বা শিখে ফেলছে লিখতে কবিতা,কেউ বা করছে রান্না
মনের সাথে ক্রমাগত করে ফেলছে সন্ধি
সত্যি বলতে কি ভালোবাসা বন্দী
জানলার লোহার গরাদের ওপারে লুকোনো একলা আকাশ।
.
খবরের সংসার
শুনশান রাস্তাগুলো দেশলাই বাক্সে আটকানো আমার শহরে,
গরম ভাত,বেগুন ভাজা , ঘি নিয়ম মাফিক
কিন্তু আজ বহুদিন হলো আমি সময়ের বিছানায় নিয়ম ভাংচুর করি নি,
করি নি চিৎকার মাছের বাজারে।
আজ বহুদিন হলো আমি হেঁটে যাই নি পাশাপাশি আকাশের সাথে
শুধু মাঝরাতে আজকাল আমি আকাশে একটা নদী দেখি
দেখি নদীর ধারে একটা শুকনো গাছ,
আমি হাত বাড়িয়ে নদীর জল ছিটিয়ে দি গাছটাকে বাঁচাবার আশায়
আর তখনি ঘুম  ভেঙে যায়।
আর তখনি সভ্যতার পাথুরে দেয়াল ভেঙে বেড়িয়ে আসে আত্মাগুলো
চিৎকার করে বলতে চায় বাঁচতে চাই,
ঠিক তখনি পাশের বাড়ির খবরের  হেডলাইনে আমি শুনতে পাই
লকডাউন চলছে,
আর আমাদের কাটাতে হবে আকাশ ছাড়া জীবন।






তবু্ও আমি বোকা


তবুও আমি বোকা
...ঋষি
.
বলতে চেয়েছি,বলতে পারলাম কই
শুধু দিনযাপন, শুধুই ব্যাস্ততা, শুধু কেটে যাওয়া অজস্র তুমি।
শহরের দিনযাপনের গল্পে শেষ পাতাটা আর লেখা হলো না
আক্ষেপ শুধু পুরনো ডাকঘরের একলা চিঠিগুলো
একলা রয়ে গেলো সময়ের দিন বদলে।
.
বাতাস এসে বলে গেলো মরে যাবো
রেডিও, টেলিভিশ, খাঁচায় বন্দী জীবন একই কথা বলছে
মরে যাবো,
মরে যাবে তুমি,আমাদের সন্তান, আমাদের বেঁচে থাকা।
একলা পরে থাকবে পুরোনো বিছানা,জানলার গরাদ,পুরনো রাস্তা,
ছেঁড়া লেপ, বালিশে একলা কষ্টের দাগ,পুরোনো ফ্যামিলি আলবাম।
লম্বা দীর্ঘ নিস্তব্ধতায় অন্ধকারে তাকিয়ে দেখছি সবকিছু ভীষন শান্ত
যেমন আসন্ন মৃত্যু মানুষকে শান্ত থাকতে বলে।
.
ঘরে টেলিভিশন গুলো এখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরেছে
ঘুমিয়ে পরেছে তোমার জানলা দিয়ে দেখা আকাশটা খাঁচার ভিতর।
 তোমার থেকে আমি জেনেছি বাঁচার মানে
চিনতে শিখেছি পলাশ আর রজনীগন্ধার তফাৎ,
তাই তো ছুটে গেছি বারংবার তোমার পাড়ায়
তোমার গলিতে,
হাত দিয়ে ছুঁতে চেয়েছি তোমার বানানো গ্লাস পেইন্টিং,
তোমার শালোয়ার কিংবা শাড়িতে জীবন রঙের খুশি।
জানি সময়ে পিছনে ফিরে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই
জানি রাস্তাগুলো শুধু নিয়মের পিচ ঢালা আদিখ্যেতা,
তবুও আমি বোকা
তবু আমি চেয়ে থাকি দুরে কোন অচেনা শহরে।
এই শহর আমার না,এই সময়ও না
শুধু কোন এক দিন বহুযুগ পরে
আমার এই কবিতা পড়ে কোন এক পাঠক
খুঁজবে আমার কবিতায় নিস্তব্ধতার মানে,
কিন্তু বুঝবে কি ?
আমি কার কাছে শিখেছিলাম খোলা আকাশের মানে
তোমাকে চিনবে তো সে চলন্তিকা, আমার অক্ষরে।




Wednesday, April 1, 2020

আমাদের মা

আমাদের মা
... ঋষি
.
এমন গল্পগুলো পুরোনো হয় না
হয় না এমন অনেক কিছু যা শাস্ত্রে লেখা থাকে।
সময় শুধু ইতিহাস লেখে বাদশা,রানী আর গোলাম
সেখানে প্রায়শই উল্লেখ থাকে না খানদানী বাদী,
যুদ্ধ, সফর সভ্যতায়
সত্যিগুলো শুধু মাটি চাপা দেওয়া এক একটা কবর।
.
আমি সত্যি সেই  কবর খুঁড়ছি
জানি আমি তুলে আনছি মরা পচা গন্ধ,আর কিছু বিষাক্ততা।
 জানি আমি মিথ্যে করে সত্যি লিখছি
লিখছি সেই মায়ের কথা,
যাকে আমরা প্রতিদিন দেখি নিজের বাড়িতে, পাশের বাড়িতে
নিজের শৈশবে কিংবা তোমাদের রক্তের প্রতিটা রক্তকনায়।
.
উনুনে নিজের  মুখাগ্নি করে উঠে দাঁড়ালো তোমার মা
কিংবা আমারও হতে পারে।
বাইরে তখন তুমুল জলসা, ঝলমলে রাত, হাইফাই পাটি
তোমার স্ত্রী কিংবা আমার স্ত্রী সাজগোজ করে তখন রানী
আর  তুমি বাদশা কিংবা আমি ব্যস্ত খোস গল্পে।
তোমার হাতে মদের গ্লাস কিংবা আমার হাতে
তোমার স্ত্রী বললো কিংবা আমার
কি হলো বুড়িটাকে ডাকো না,বলো না ডিনার দিতে।
তোমার লজ্জা হলো মা বলতে কিংবা আমার
হাইফাই সোসাইট, তুমি ডাকলে " কানে কথা যাচ্ছে না
খেতে দেও এবার আমাদের "।
.
তোমার মা কিংবা আমার মা,
সরি সেই খানদানী বাদীটা এখন ডিনার সারভ করছে তোমার জলসায়।
তোমার কিংবা আমার মায়ের গায়ে একটা ময়লা, ছেঁড়া শাড়ী
তুমি শুনছো কিংবা আমি ,
জলসার কেউ তোমার কিংবা আমার মাকে বলছে
" নতুন দেখছি, তোমাদের নতুন চাকরাণী "।
.
তোমার স্ত্রী কিংবা আমার উত্তরে বললো
নতুন এসেছে গ্রাম থেকে, ওর তো সাতকুলে কেউ নেই।
তুমি শুনলে,আমি শুনলাম
শুনলো আমার, তোমার সারা জলসা,
কিন্তু সত্যিটা জানলো না কেউ।
.
তোমার কিংবা আমার বাবা, সরি গোলাম মারা গেলেন আমাদের গ্রামে
কিন্তু তোমার কিংবা আমার মার সাতকুলে সত্যি কেউ নেই এখন
শুধু তুমি।
সেজন্য এইসময় তোমার কিংবা আমার মা এখানে,
তোমাকে কিংবা আমাকে বলছে " বাবু তোকে বড় রোগা লাগছে
ভালো করে খাওয়া দাওয়া কর "।
তুমি কিংবা আমি ঝাঁঝানি দিলাম ভয়ে " যদি কেউ শুনে ফেলে,
বললাম যাও ভেতরে যাও,তোমার কি কোনো কাজ নেই।
.
এখন আমাদের  মা কাঁদছে
এখন আমাদের  মা কাঁদছে মুখে শাড়ী দিয়ে
দেওয়ালে মাথা ঠুকছে
মৃত্যু ভিক্ষা করছে ঈশ্বরের কাছে,
কেন ?
শুধু কি আমাদের দেওয়া দুটো ভাতের জন্য
নাকি
কবরে শুয়ে থাকা আমাদের মৃত্যুর দিকে তাকিয়ে,
যদিও আমরা জানি এই গল্পটা সত্যি না হলেও মিথ্যা না।


কবিতার শোক

লিখতে পারাটা একটা অসুখ  ভীষণ কষ্ট ,ভীষণ আনন্দ ,প্রেম প্রবাহ ,অসংখ্য শোক,শহর ,মানুষ   সব কেমন সাদা পাতায় সংসার বুনতে থাকে  শব্দদের ঘুণপোকার স...