Friday, December 31, 2021

অহংকার

 


অহংকার 

... ঋষি 


আমার কাছে নতুন বছর মানে  ভালো থাকার অপেক্ষা 

আমার কাছে নতুন বছর মানে তোকে ভালো রাখার অপেক্ষা। 

এই শহরে দিন বদলায় রাতের আদলে 

এই শহরের রাতগুলো ল্যাম্পোস্টে ধাক্কা খায় গলি ,নর্দমায় আলো খোঁজে ,

চওড়া পিচ বাঁধানো রাস্তার মোড়কে,বড় বড় শপিং মল আর সাজানি আলোতে  

এই শহর শুধু অহংকারে বাঁচে। 

.

আমি এই শহর থেকে বলছি 

১১৭ বাই ,সৌরভ এভ্যিনিউ ,কলকাতা ১৩৬ থেকে আমি এই শহরটাকে দেখছি 

দেখছি আরেকটা বছর ধাক্কা খেতে খেতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সময়ের দরজায় ,

হিসেবে করে দেখেছি গত হয়ে যাওয়া সময় শুধু হারিয়ে ফেলার 

অসংখ্য ভীত মুখ  ,কালো প্লাস্টিকে মোড়া বডি ,মুখে মাস্ক ,স্যানিটাইজার 

তবে অদ্ভুত হলো এই অহংকারী  শহর হারে নি 

হারি নি আমরা 

ফিরে এসেছি আমরাও  বাঁচার অধিকারে । 

.

আমি জানি না নতুন বছরের ক্যালেন্ডার আমাদের কি দিতে চলেছে 

আমি জানি না নতুন বছর আলো না অন্ধকারের 

তবে এই শহরের নাগরিক হিসাবে আমি জানি 

আমরা আছি ,আমরা থাকবো 

আর থাকবে আমাদের বুকের মাঝে বাঁচতে থাকা এই প্রিয় শহর

প্রিয় মুখ আর প্রিয় মুহূর্তরা । 

আমি চলন্তিকাকে বলেছি সময় বদলাবে সময়ের আদলে 

হয়তো বুকের মাঝে শুয়ে থাকা সময়ের মুহূর্তরা বৃদ্ধ হবে 

কিন্তু বদলাবো না আমি 

কিন্তু বদলাবে না এই শহর ,

আমি বাঁচি আর না বাঁচি তাতে কি 

আগামীতেও আমার মতো কেউ তোকে জড়িয়ে বলবে

হ্যাপি নিউ ইয়ার  ভালো থাকিস তুই,

আপনাদেও অতি নম্রতায় জানাবে হ্যাপি নিউ ইয়ার 

ভালো থাকবেন আপনারা। 

 

 


Monday, December 27, 2021

 


তুমি ভাবতেই পারো সময়ের কবরস্থানে  শুয়ে থাকা কফিন বদ্ধ কবিতারা শুধু তোমার জন্য লেখা ,

কিন্তু বিশ্বাস করো সেই কফিনে শুয়ে থাকা ঈশ্বরেরা জানে, 

সময়ের মৃত্যু সংবাদ বয়ে আনে কবিতা

আর কবি শুধু সেই মৃত সময়ের সাক্ষী। 

.... ঋষি 

আমি এক সময় খুঁজছি

 


আমি এক সময় খুঁজছি 

... ঋষি 


আমি এমন এক সময় খুঁজছি 


যেখানে কোনোদিন কোনো রাজা ছিল না  


যেখানে কোনোদিন পায়ের ছাপ পরে নি কোনো মিলিটারি বুটের 


যেখানে প্রতি সন্ধ্যা উলুধ্বনির সাথে পাল্লা দেয়  আজানের শব্দ 


যেখানে কোনো সর্বহারা নেই ,বাজা  গরু নেই,নেই কোনো বেশ্যা 


যেখানে আজও  চলন্তিকা ফুল তুলতে তুলতে 


তৃষ্ণার্ত  পথিককে এগিয়ে দেয় জলের ঘটি। 


.


আমি এমন এক সময় খুঁজছি যেখানে ধুলোবালি নেই 


যেখানে কোনো উঁচু ইমারত ঢাকতে পারে না স্বাধীন আকাশ 


যেখানে উঁচু নিচু ভেদ শুধু মাত্র জমির চড়াই ,উৎরাইতে থাকে 


যেখানে শীতে নক্সীকাঁথায় মোড়া থাকে ধানের ক্ষেত 


যেখানে  কোনো রেলগাড়ি নেই ,যানবাহন নেই ,নেই কৃষ্ণের বাঁশি 


যেখানে কুরুক্ষেত্র নেই ,ইতিহাস নেই 


যেখানে চলন্তিকা বলে মেয়েটা সবুজ মাঠে ফড়িং ধরতে ধরতে 


হঠাৎ মনে করে না রাত্রির সেই অন্ধকার হাতকে। 


.


আমি খুঁজছি সেই সময়কে 


যেখানে মঞ্চের উপর সংস্কৃতি চর্চা হয় তবে সংস্কৃতির নাম চিৎকার নয়  


যেখানে মানুষ মানুষকে চেনে তার জন্য বিজ্ঞাপনের দরকার নেই 

যেখান যেকোনো ডেটা কার্ড ,কেবল লাইন কিংবা বোকা বাক্স নেই 


যেখাবে বিজ্ঞান আছে শুধু মানুষের উত্তরণের জন্য 


যেখানে পাখি আছে ,পশু আছে কিন্ত মানুষরূপী জন্তু নেই


যেখানে এই কিছুদিন হলো সময়ের ঈশ্বর ছুটি দিয়েছে মন্দিরকে 


যেখানে তরুণ ইমাম আর ছোটে না আল্লার পিছনে 


যেখানে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে 


যেখানে সবাই শিশু 


যেখানে চলন্তিকা বলে মেয়েটা আর ভয় পায় না জন্মাতে 


কারণ তাকে আর ভাবতে হয় না তার কপালে কি আছে।  




 

সমাধান



 সমাধান 

... ঋষি 


আরো সময় পেরিয়ে চলেছে  


বয়সের লোমে লাগছে সাদা সময়ের প্রলেপ ,


এখন অনেকটা সময় পেরিয়ে আমি বুঝতে পারি সময় হচ্ছে 


ক্রমশ নদীতট ভেঙে জল ঢুকছে জনবসতি জীবনে ,


ঢেউয়ের আঘাতে আস্তে আস্তে দুলছে একা নৌকা 


এইবার বোধহয় মিলিয়ে যাওয়ার সময় একলা সমুদ্রে। 


.


এখন আমি ঠিক টের পেয়ে যাই 


অপেক্ষার গল্পগুলো চিরকাল ক্লান্তিকর এবং অনিয়মিত 


এখন আমি ঠিক বুঝতে পারি 


মানুষের হাঁপিয়ে যাওয়াগুলো আসলে এক একটা লোভ 


আর মাংসের বাঁচতে চাওয়াগুলো কোনো অসমাপ্ত গণিতের সমাধান 


আসলে ইনফিনিটি। 


.


আমি জানি ভালোবাসার মানুষ গাছ হয়ে যায় প্রতি রাতে মনের  মাটিতে 


আমি জানি ভালোবাসা কখন যেন দূরে দেখা অন্ধকার আকাশের নক্ষত্র 


আসলে সকলে আশ্রয় খোঁজে এই পৃথিবীতে 


খোঁজে আশ্রয়ের মীমাংসা। 


আমি সময়ের গল্পে সেলাই করে রিপু করে চলি আমার অভিমান 


আমি শাক দিয়ে মাছ ঢেকে বোঝতে চাই আমার রাগ হয় না 


আমার খিদে নেই


আমার জেদ নেই,


কিন্তু সত্যিটা হলো সব মানুষের মতো আমার বাঁচা নেই 


কারণ মানুষ যেটা বেঁচে থাকা বলে সেটা ঈশ্বর না 


ঈশ্বর হলো একটা সম্পূর্ণ সমাধান।   




 

শুধু এতটুকু



 শুধু এতটুকু 

... ঋষি 


তোমাকে রক্ত মাংসে কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে তোমার মন্দবাসা 

আর আমি হতভাগা সময়ের 

তোমার দুর্দিনে তোমার পাশে দাঁড়িয়ে ঈশ্বর ,

যেমন কোনো জলাশয়ে ফুটে চলা তোমার প্রথম দূরত্ব 

সে গোলাপি হোক কিংবা সাদা 

তোমাকে বলা হয় নি কখনো রং দিয়ে সম্পর্ক ঢাকা যায় না। 

.

তুমি আমাকে উন্মাদ করেছো,পড়িয়েছো রাজ্ ভিখিরীর বেশ

আমি উন্মাদনায় পাগল হয়ে আজ ছিঁড়ে চলেছি নিজেকে,

আমি গৃহপালিত মানুষের মতো জানতে চাইনি কখনো 

কোথায় আলো ,কোথায় ঈশ্বর ,কোথায় ভালো থাকা ,

অথচ আমি নিজেকে জেনেছি তোমার মাঝে 

বুঝেছি ভালোবাসা গিঁট বাঁধলে প্রহরী হয়ে যায়। 

 .

আমি ক্রীতদাস নই 

তবুও আমি সময়ের গান গাই 

নিজের জৈবিক চাহিদাকে তোমার মতো ধ্বংস করি রোজ 

গেয়ে চলি ধর্মের গান ,

তুমি যেমন আমি হতে পারি নি 

আমি তেমন তুমি হতে পারো নি 

তবু দোষারোপ নেই 

বরং আমি তো অপেক্ষায় আছি তোমার পাশে দাঁড়িয়ে 

এক মৃত্যু যখন আয়নাকে বলে 

শুধু এতটুকু। 


Saturday, December 25, 2021

আগ্নেয়গিরি

 আগ্নেয়গিরি 

... ঋষি 


তবে সেই কথাই  রইলো 

তোমার সাথে আমার শেষ দেখাটা কোনো আগ্নয়গিরির পাশেই হবে কোনোদিন ,

আসল কথাটা হলো সকলের বুকের ভাঁজেই একটা  আগ্নেয়গিরি লুকিয়ে আছে 

আসলে সকলে পুড়ে চলেছে নিজের সংখ্যা তত্বে ,নিজের গরিমায়। 

অবশ্য জানো তো আগ্নেয়গিরিগুলো সুপ্ত 

সকলেই চিৎকার করতে চাই আমরা 

কিন্তু বিষাক্ততায় চিৎকার হারিয়ে যায় বারংবার এই সময়ের ধুলোয়। 

.

আমার পরিষ্কার মনে আছে সেদিনও আগ্নেয়গিরির ছিল তোমার আমার ভিতর 

কোনো এক একলা দিনে আমি পরিষ্কার দেখেছিলাম তোমার পিঠ বেঁয়ে 

নেমে গেছে আগ্নেয়গিরির লাভা চুলের ধাঁচে ,

তোমার নিঃশ্বাসে ,তোমার বুকের উন্নত লুকোনো আগ্নায়গিরিতে 

সেদিন বোধহয় লাভাস্রোত বইছিল 

প্রথম পুরুষের স্পর্শে 

কিংবা প্রথম শয়তানরুপী ঈশ্বরের। 

.

আমি সেদিন বিলি কেটে দেব বলে আমি বাড়িয়েছিলাম আমার হাত 

আর তুমি আমাকে ভেবেছিলে  ভিখিরী,

আমি বুঝেছি সেদিন মানুষ আর ঈশ্বরের মাঝে তফাৎ 

আর তুমি বুঝেছিলে ঈশ্বর আর শয়তানের। 

বেশ তবে আজ সেই কথাই  রইলো 

তোমার সাথে আমার শেষ দেখাটা কোনো আগ্নয়গিরির পাশেই হবে কোনোদিন

তবে তুমি জেনো সেদিনও আমি বুক পড়াবো কোনো অনামী সিগারেটে 

একলা থাকার সুখে ,

গলগল করে জীবন পোড়ানো ছাই আর লাল রক্ত 

সেদিন বইবে আগ্নেয়গিরি বেয়ে আগের মতো 

আজকের মতো

কালকের মতো 

কিংবা সেদিনের মতো যেদিন আমি বুঝেছিলাম 

প্রতিটা মানুষের বুকে একটা আগ্নয়গিরি থাকে।   


তথাস্তু

 

তথাস্তু 

... ঋষি 


তুমি বরং আরো অনেক দুঃখ দিও আমায় 

আমি সেই দুঃখগুলো দিয়ে হাজারো কবিতা লিখবো আকাশে 

তুমি বরং আরও দূরে রেখো আমায় 

আমি না হয় সেই দূরত্ব দিয়ে হাজারো শব্দদের জন্ম দেব 

ছোট ছোট স্বপ্নগুলো এই সাগরের ছোট ছোট লিলিপুট  জাহাজ 

সে জাহাজগুলো হাজারো দ্বীপুঞ্জ জন্ম দেবে  

তুমি জানো  সেগুলি ভালোবাসার উপনিবেশ। 

.

তুমি না হয় আরেকবার আমাকে ক্রীতদাস জন্ম দিও 

আমি সেই ক্রীতদাস জন্মে নিজের পরিচয়ের জন্ম দেবো যিশুখ্রিস্টের 

তুমি
না হয় বুকের দুধের বদলে আমার মুখে বিষ দিও 

আমি সেই বিষের বাতাসে নীলকণ্ঠ হয়ে তোমাকে সামলে রাখবো। 

আসলে গতজন্মে আমি মিলিত হয়েছিলাম সেই বাউলিনির সঙ্গে 

যার সন্তানেরা দুঃখের মতো কিছু পথচলা 

তাদের অভিশাপে আজ আমি ভাত ভেবে ঈশ্বরকে দোষ দেবো। 

.

তুমি না হয় আরো একলা রেখো আমায় 

তবু জানবো  এই পৃথিবীর নিঃশ্বাসে কেউ লিখছে ভালোবাসা 

তুমি না হয় আরো কবিতায় এসো ভালোবেসে 

আমি জানবো  আমার কবিতারা কেউ বেশ্যার জন্ম  নয়। 

ওগো নারী ,কাকে তুমি পুড়িয়ে ফেলে এলে 

কাকে তুমি রক্তে ভাসিয়ে মানুষ জন্ম দিলে 

তুমি জানো আজ আমি লেলিহান আগুনে চোখের জল পোড়ায় 

তুমি জানো আমার মৃত শরীরে আজও তোমার জন্ম চিন্হ 

তবুও আমি বেঁচে বরফ শরীর নিয়ে 

কোনো একদিন  তুমি আসবে ঠিক 

আমাকে বুকে জড়িয়ে বলবে ভুল ছিল 

   .......... সব ভুল ছিল ,ক্ষমা 

আমি হাসবো সেদিন কনফুসিয়াস হয়ে বলবো 

তথাস্তু। 


ট্রেন



 ট্রেন 

... ঋষি 


মাথার ভিতর ধূসর পাগলামিটা আজকাল মালবাহী ট্রেন  

কেন যে ছুটছে বুঝতে পারি না ,

আজকাল তোমাকে দেখি দূরে কোনো অস্তিত্বের স্টেশনে 

মালভর্তি ট্রেন স্টেশন থেকে স্টেশন ছাড়ে 

যেন এক একটা দিন। 

.

আমি পরিষ্কার দেখি প্রায়শই 

একটা ট্রেন অনেক দূর থেকে ছুটে আসে রাত্রি ভেঙে

তার পিঠে থাকে মানুষের প্রয়োজন ,বিশ্বাস ,নিশ্বাস  ,

ট্রেনটার মাথায় একটা লাল হেডলাইট ,শেষদিকে ট্রেনটা আর দেখা যায় না

শুধু মনে থাকে একটা লাল হেডলাইট 

তোমার কপালের ঠিক মাঝখানে একটা সিঁদুরের টিপ্। 

.

মাথার ভিতর আমার ধূসর পাগলামিটা আজকাল মালবাহী ট্রেন 

আমার ট্রেনের ট্রাকে ফেলে আসি  

জীবনের যত আবর্জনা ,কফ ,মল ,থুথু আর ঘাম,

আমি ট্রেনের গতিতে রেখে আসি 

আমার সমস্ত পাপ ,আমার সমস্ত স্মৃতি। 

আমি শুধু এগিয়ে যেতে চাই অন্ধকার চিড়ে অচেনা ট্রেন রাস্তায় 

পাহাড় ,নদী আর দুঃখ পেরিয়ে 

যদি কখনো স্টেশনে পৌঁছতে পারি 

যদি কখনো জানতে পারি তোমার ঠিকানা ,তোমার নাম।  


শব্দ



 শব্দ 

... ঋষি 


আমি একবার চারিদিকে তাকাই , চারিদিকে এতো শব্দ  


তারপর তাকাই নিজের ভিতর 


নিজের গভীরে কোথাও প্রস্তরযুগ খুলে বসে থাকে ইতিহাস 


সেখানে শব্দ নেই ,সেখানে শুধু পাথরে ভাষা।  


পাথরের পর পাথর ,তারপর আরও 


হাতের নখ দিয়ে আঁচড়ে শিহরিত হয়


এও যে ভাষা। 


.


আমার নখের ডগায় আটকে যাচ্ছে মানুষ থেকে বাইসন 


আমার নখের রক্তে ভেসে যাচ্ছে কাঁটাতার ,পরাধীনতার ভাষা 


মানুষ কত শব্দবহুল ,কত নিঃশব্দ মানুষ। 


আত্মা বলে যদি কিছু থাকে তাও জমাট বেঁধে ফসিল হতে চায় 


প্রাগৈতিহাসিক হিসেবে মানুষ খুঁজছি 


খুঁজছি শব্দ 


শুধু লিখবো বলে মানুষের ইতিহাস। 


.


অনেক অনেক যযাতি শুয়ে থাকে কবিতার রক্তে 


হাজারো মানুষের শব্দ ,প্রকৃতির শব্দ ,কান পেতে শোনো 


অন্ধকারও যে কথা বলে আজকাল 


সে কথায় কেমন প্রশান্তি ,


বিশ্বাস করো  কবিরাই পারে মানুষের শব্দে মানুষ লিখতে 

কবিতাই পারে নিশব্দে মানুষ বলতে। 


কবিরাই পারে সময়ের মানুষের দুঃখে মানুষ লিখতে 


কবিরাই পারে প্রকৃতির শব্দে সঙ্গম লিখতে 


সে যে শব্দ সুর 


শব্দের প্রকান্ড বিশ্বাস ,ঈশ্বরে নিশ্বাস 


আর কবিরাই শব্দকে ইতিহাস করে। 


Friday, December 24, 2021

মেরি ক্রিসমাস


 মেরি ক্রিসমাস 

... ঋষি 


বউটুপি পরে শীত জাকিয়ে বসলো এই শহরে 

এসে পড়লে যিশুখ্রিস্ট যথারীতি নিজের সত্বায় মানুষের খুশি নিয়ে 

সকলে হাসছে ,কেক কাটছে 

দূরে ফার গাছে ,পাইন বনে দুলছে সোনালী ঘন্টা 

আওয়াজ পাচ্ছে সারা শহর 

আজকের উৎসব মুখর দিনরাতে। 

.

সেন্ট নিকোলাসও  বেরিয়ে পড়েছেন ঘোড়ার রথে

ছুটে চলেছেন শিশুদের মনে  নিজের সত্বায়

উনি এসেছেন উপহার নিয়ে 

উনি এসেছেন খুশি নিয়ে এই শহরে ,

সারা শহর আজ খুশির ঝর্ণায় ভেসে  চলেছে আলোতে 

ভালো লাগছে ভাবতে আমিও এদের একজন। 

.

আজ জানতে ইচ্ছে  হচ্ছে কেমন আছে  মানুষ 

আজ জানতে ইচ্ছে করছে কেমন আছে চলন্তিকা 

উৎসবমোহিত এই শহরের প্রতিটা কোনা আজ আলোয় ভাসবে তো 

তোমার মতো আরো চলন্তিকা আজ খুশিতে থাকবে তো ?

খুশিতে থাকবে তো এই শহরের ফুটপাথ ,এই শহরে অধিকারগুলো 

খুশিতে থাকবে ধর্ষিতা মৃত ফরিদার মা ,চাকরি চলে যাওয়া  অম্লান 

কিংবা সেই পাকসার্কাসে দাঁড়ানো বৃদ্ধা ভিখিরিনী ,

প্লিজ আপনারা ভাববেন না 

আমিও ভাববো না 

বরং আমি আপনাদের বলবো মেরি ক্রিসমাস 

পিকনিক করুন ,উদযাপন করুন,ছবি তুলুন 

অবশ্যই স্মৃতি ধরে রাখতে হবে জীবনের সেলফিতে

কিন্তু কি জানেন মানুষ ছাড়া মানুষের সেলফিটা  শুধু স্বার্থের 

সেখানে আনন্দ থাকে না

থাকে শুধু অমানবিকতা ।   


Thursday, December 23, 2021

ম তে মৃত্যু

 


ম তে মৃত্যু 

... ঋষি 


"দ" নিয়ে দরাদরি 

"দ" নিয়ে দরদাম 

মানুষ তো ,"দ" এর আর  কি দোষ তবে ,

"দ" থেকে শুরু সবাই করে ,কিন্তু "দ " এ শেষ ,

বুক চায় ,সুখ চায় ,চায় অচিন আকাশের পাখি 

তবে আমার প্রিয় বর্ণমালার " ম "

কারণ 

" ম"তে মৃত্যু। 

.

হাসছে দেখো শহরের বাইরে দাঁড়িয়ে সেই দিনগুলো 

মোমবাতি নিয়ে হেঁটে আসছে কফিন কাঁধে কিছু লোক 

ওদের তুমি চিনতে পারছো 

হয়তো আমার বন্ধু  ,হয়তো আমার শত্রু ,

তবে কি যেন জানো মৃত্যুর  পরে গল্পগুলো আর লিখতে পারে না কেউ

আর তাদের বইগুলো পরে থাকে কলেজস্ট্রিটের পুরোনো বইয়ের দোকানে। 

.

বিশ্বাস হচ্ছে না তো 

এখানে আমি কোথ্থাও নেই

আছে আমার মতো দেখতে অন্য কেউ 

আমি বলে যে বুকটাতে তুমি " দ "এর মতো শুয়ে ছিলে 

সে তো মরেছে অনেক আগে, 

এখন শুধু সময়ের অহংকার ,অন্য আমিতে প্রবাহিত 

আমি এখন আর তথাস্তু বলি না 

বলি "ম "

কারণ " ম"তে মৃত্যু।   

সাদা ঘোড়া


 

সাদা ঘোড়া 

... ঋষি 


হঠাৎ লিখতে ইচ্ছে করছে 

শ্লোকের বাইরে  জীবন যেন নদীর মতো কিছু 

নদীর এপারে আমি ,এই শহর 

আর ঐপারে দাঁড়িয়ে আছে একটা সাদা ঘোড়া। 

.

সাদা ঘোড়া ছুটছে 

এই শহরের ধুলোবালিতে কালি মাখছে মানুষ 

অথচ ওইপাড়ে তখন ঘোড়ার খুরের  শব্দ 

ফিরে আছে ছোটবেলা 

ফিরে আসছে খোপখোপ গল্পের বইগুলো ,ক্যাপ্টেন হকিংস 

ফেলুদা ,টিনটিন, 

সকলে সৃষ্টি লিখলেন রূপকথায় 

               কিন্তু মানুষ ? 

.

অথচ স্টিফেন হকিংস বললেন ঈশ্বর কণা 

কিন্তু ঈশ্বর ?

গুঁড়ো গুঁড়ো আলো ছড়িয়ে পড়ছে এই শহরে নিজের মতো আনন্দে 

কিন্তু অন্ধকার ?

         দাঁড়িয়ে আছে মানুষের মনে 

আর সাদা ঘোড়াটা আমার মতো সবাই দেখছে 

    ছু 

         ট 

    ছে

আর নদীর জল ঢুকে পড়ছে নোংরা শহরের মনের বস্তিতে । 

ঈশ্বর



 ঈশ্বর 

... ঋষি 


একটু একটু করে নিজের মতো ভাবনা দিয়ে গড়েছি তোমায় 

রোজ প্রতিদিন শব্দের অছিলায় আমি গড়েছি তোমাকে 

সবাই আমাকে বোকা বলেছে ,বলেছে পাগল  

আমি হেসেছি  দেওয়ালের ওপাশ থেকে

মনের মাঝে বলেছি কিছু ভাস্কর্য মানুষ এখনো আবিষ্কার করে নি 

যেমন তোমাকে কেউ আবিষ্কার করতে পারে নি এতদিনেও। 

.

 

আমি বৃষ্টির কাছ থেকে ধার নিয়েছি তোমার চোখের জল 

আমি মেঘের কাছ দিয়ে চেয়ে নিয়েছি তোমার কেশদাম 

আমি দুরন্ত রৌদ্র ছুঁয়ে বানিয়েছি তোমার চোখ 

আমি হরপ্পার সমাধি ছুঁয়ে তোমায় দিয়েছি ঈশ্বরের ধাঁচ 

আমি মিশরের পিরামিড ছুঁয়ে তোমাকে দিয়েছি উন্নত বুক 

সবশেষে বলেছি তথাস্তু 

এইসবটুকুই আমার। 

.

এখন আমি উদ্ধত সৃষ্টিকর্তার মতো এই পৃথিবীর ঈশ্বর 

এখন ভিসুভিয়াসের আগ্নেয়গিরির মতো তোমার খিদেতে বাঁচি  

এখন আমি শীতের বাতাসে তোমাকে জড়ায় আমার হাড়ে পাঁজরে 

এখন আমি বসন্তের কোকিলের মতো তোমার নাম ধরে ডাকি, 

জানি ইতিহাস বদলাবে না তাতে 

হয়তো আরো মানুষ হাসবে 

কেউ হয়তো আমার গায়ে বমি করে বলবে আমি ইতর 

তাতে কি 

আমি এখন ঈশ্বর 

যে ঈশ্বরের প্রাণভোমরায় বাস করে রাক্ষসপুরী 

সে শুধু অপেক্ষায় প্রাণ প্রতিষ্ঠার 

আর কিছুদিন তারপরে সকলেই চিনবে তোমাকে। 


মানুষ মানে আমরা নই



মানুষ মানে আমরা নই 

... ঋষি 


মানুষ মানে তো শুধু আমি নই 

মানুষ মানে রাতের বাস্ট্যান্ডে প্রবল শীতে শুয়ে থাকা সেই বুড়োটা 

কিংবা মাসে একদিন সমুদ্র থেকে  মাছের গন্ধ নিয়ে ফেরা নুলিয়াটা 

অথবা সেই বরফঘরে শুয়ে থাকা শরীরটা ,

আমি যখন ফিরে যেতে পারছি না সেই অর্ধেক পৃথিবীর দেশে 

তখন সত্যি হলো 

এই নগ্নতার দেশে আমিও ওদেরই একজন। 

.

আমি মানে শুধু কোনোদিন আমি তুমি হতে পারবো না 

আমি মানে সেই গাঁইতি দিয়ে পাথর ভাঙা ঘামে ভেজানো শরীরটা 

তুমি মানে রান্নার কাঠ কুড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে ফেরা সেই আদিবাসী রমণী 

অথবা সেই  আমরা শুধু আমরা নই 

আমরা হলাম একশো ত্রিশ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্নের চোখ 

যা শুধু আজ নিয়মের জেরুজালেমে বন্দী ,

তখন সত্যি হলো 

আমি হলাম ক্রুসের কাঠ আর তুমি হলে রক্তের ফোঁটা। 

.

মানুষ মানে তো শুধু আমি তুমি আর আমরা নই 

আমরা মানে তো শুধু এই সময়ের নষ্টামি আর দেশ নয় 

আমরা মানে একটা ইতিহাস যা রক্তের স্বাদে স্বাধীনতা অর্জন করেছে 

আমরা মানে একটা প্রাচীন দেশ যার পথে পথে সবুজের গন্ধ 

আমরা মানে হলাম আগামী 

অথচ সত্যি হলো এটা 

এই আমি ,তুমি ,আমরা কেউ কোত্থাও নেই 

শুধু রয়ে গেছে কতগুলো শেখানো বুলি ,কিছু নিয়ম 

যেখানে মানুষ হলো নাগরিক

যেখানে আমি আমরা হলাম ঘড়ির কাঁটা  

আর সত্যি হলো ঈশ্বর কখনো  এঁটো চাঁদ নিয়ে কবিতা  লিখতে পারে নি 

শুধু লিখেছে মানুষের যন্ত্রনা আর চিৎকার। 

 

অন্য একটা দিনে

 


অন্য একটা দিনে 

... ঋষি 


আমার হাত ধরেছিলে তাই জানতে পারো নি 

আসলে সময়ের কাছে ঈশ্বর হলো একমাত্র হাস্যকর জোকার 

তাই সেদিন হঠাৎ এই শহরে ধুলো ছুঁয়ে তুমি ফিরে গেছিলে ,

তোমার গঙ্গার পার 

তোমার প্রিয় মানুষ কিংবা সেই শয়তান 

যার জন্য তুমি মরে আছো  এতদিন। 

.

আমার হাত ধরেছিলে তাই জানতে পারো নি 

এই পৃথিবীশুদ্ধ একটা স্টেশন ,যেখানে শুধু ট্রেন আসে যায় 

মানুষের গন্তব্য বদলায় 

 যারা বলে তারা মিথ্যে বলে তোমায় ছাড়া বাঁচা যায় না 

তার থেকে আরো বেশি মিথ্যে বলেছিলে তুমি 

তোকে ছেড়ে আমি কোনদিন যাবো না। 

.

আমার হাত ধরেছিলে তাই বুঝতে পারো নি 

পিছন থেকে কেউ একটা নিঃশব্দে বলেছিলো একটু দাঁড়াও ,

এখনো পশ্চিমের দালানের রৌদ্র আমাকে প্রশ্ন করে বারংবার 

আমি থাকি কিংবা না থাকি কি এসে যায় 

সময় হাসে ,ঈশ্বরের মুখে তখন জোকারের হাসি 

আমি আয়নায় দেখি জোকারের মুখ। 

.

আমার হাত ধরেছিলে তাই জানতে পারো নি 

কখন যেন সেই হাত ছুটে গেছে মানুষের গ্রহে লুকোনো সংবিধানে 

তারপর গতাকুড়ি রাত আমি পুঁতে দিয়েছি তোমার মৃতদেহে 

শরীর থেকে মুছে ফেলেছি তোমার স্পর্শের হিসেবগুলো 

এখন আমি পাখি 

আগামী কোনোদিন তোমার কাছে আমার উষ্ণতার যন্ত্রনা পাঠাবো। 


স্বপ্নের পাখিটাকে

 স্বপ্নের পাখিটাকে 

... ঋষি 


সত্যি প্রতিবাদের দাঁত ,নখ কিছুই নেই 

আছে পরিবর্তনের ভাবনা 

রাইটার্স বিল্ডিং গর্জিয়ে উঠলো সেও এক পরিবর্তন 

ইতিহাস সাক্ষী সেই অমর বিপ্লবীদের সেলাম,

সেলাম যুগে যুগে মানুষের ভাবনার সেই স্বপ্নের পাখিটাকে 

যে আকাশ ছুঁতে চায়। 

.

রৌদ্র ছুঁয়ে বাঁচাটা মানুষের অভ্যেস 

হাওয়ায় গা ভাসিয়ে উড়ে চলা নিজেদের স্বার্থে খুব সাধারণ 

অনবদ্য মানুষ ভাবনায় থাকে তখন বাঁচতে চাওয়া।  

সময়ের  বাঁচতে চাওয়া সবসময় কাঁটাতার মোড়া একটা ইতিহাস 

কিন্তু প্রতিবাদ 

সে যে মানুষের গভীরে রক্তাক্ত একাত্তর। 

.

মানুষ আসলে ঈশ্বর পন্থী নয় 

মানুষ বরাবর স্বার্থন্বেষী একটা জীব ,ঈশ্বর সেখানে একটা স্বার্থ

কিন্তু এই মানুষের মাঝেও কিছু মানুষ থাকে উল্টো হাওয়ায় গা ভাসিয়ে 

এমনও কিছু মানুষ যাদের কাছে প্রতিদিন বেঁচে থাকাটা মৃত্যুসামীল 

তবুও তারা বাঁচে 

তবুও তারা হাসে 

কারণ তাদের বাঁচাগুলো নিজেদের নয় 

শুধুমাত্র সময়ের স্বার্থে।

অন্যেরে  বলে এমন মানুষগুলো সব বোকা 

অথচ সময় জানে জনসাধারণ নাগরিকত্বে বাঁচে 

আর প্রতিবাদ বাঁচে এমন সব মানুষের ভাবনার স্বপ্নের পাখিটাকে ছুঁয়ে

যার জন্য পরিবর্তন  হলো আকাশ ছোঁয়ার লোভ।  

     

Saturday, December 18, 2021

এইসা দিন নেহি রেহেগা

 এইসা দিন নেহি রেহেগা 

... ঋষি 


আমার হৃদপিন্ডে মাটি চাপা দেওয়া প্রেম প্রেতাত্মার মতো 

শহরে ফুটপাথে পরে থাকা ভাঙা চায়ের ভাঁড়ের মতো 

নাড়িছেঁড়া অধিকার ,সময়ের প্রতিবন্ধকতা 

নিয়মের অধিকার 

ক্রাচ ভর করে এক বৃদ্ধ রোজ দাঁড়িয়ে থাকে ফুটপাথের পাশে 

তোমরা তাকে ভিখিরী বলো 

আমি বলি সভ্যতার অভিশাপ। 

.

আমার নেশাসক্ত হৃদয়ের বাতায়নে প্রেম একটা মাদারির বাঁদরের মতো 

আমার শহরের দরজায় সে পরিত্যক্ত সবুজের অভিযান খোঁজে ,

খোঁজে আত্মা ,খোঁজে স্বপ্ন 

ক্রমাগত পরাজয় ,

কত অহংকারী রাজকুমারীর ঘুম ভেঙে যায় স্বপ্নে 

কিন্তু তারাও জানে এই দিয়ে শুধু কবিতা হয় ,নারীজন্ম সার্থক নয় 

শুধু সময়  হাসতে পারে নিজের মতো করে মুখ ভেঙচে এই সময়  

বলতেই পারে সভ্যতার অভিশাপ। 

.

যে বক সময়ের দুয়ারে নেমে এসেছিল সাগরে অনবদ্য খিদেতে 

সেই সিন্ধুসারক 

আজ নিজের অভিমানে অধিকারগ্রস্থ ,

সময়ের অধিকার 

ক্রাচ ভর  করে যে বৃদ্ধ রোজ ফুটপাথে দাঁড়ায় একা 

তাকে কোনো দিন বলা হয় নি 

এইসা দিন নেহি রেহেগা।  

এই সভ্যতার মাকে

 এই সভ্যতার মাকে 

... ঋষি 

আমি আমার ছায়াকে নিয়ে ভালো আছি 

কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে যায় সময়ের কাছে ,সভ্যতার কাছে 

আমাদের কি এমনি হওয়ার কথা ছিল ?

ভরা গ্রীষ্মে একলা উত্তাপে আগুনের সাথে পুড়ে যাওয়ার 

ভরা বর্ষায় পোয়াতি নদীর কাছে একলা ভেজার 

কিংবা শীতের শুকনো পাতার মত একলা রাস্তায় বাঁচতে শেখার। 

.

প্রশ্ন অজস্র 

উত্তর শুধুই একটা রাস্তা,

মাঝে মাঝে মনে হয় মানুষে বেঁচে থাকাটা একটা রাস্তা ,

সে পাহাড়ি ঢালে চা বাগানের মতো হোক কিংবা মরুভূমির ক্যাকটাসের মতো ,

কোথায় জীবন তো কোনোদিন একবারও ভাবে নি  

প্রতিটা ঋতুবদলে সময়ের ধাতে মানুষের সবটা দরকার। 

.

অনবদ্য ছন্দের তালে মানুষের জীবনের ঋতুবদল 

সময়ের তালে মানুষের গভীরে শুয়ে থাকা মানুষের ঘুম ভাঙে 

ঘুম ভাঙে সভ্যতার ভিতে না চাইতে একলা জন্মাতে চাওয়া সন্তানের 

সে কাঁদতে থাকে 

সে খুঁজতে থাকে এই সভ্যতার মাকে ,

সভ্যতার ঠোঁটে তখন বেশ্যার লাল ঠোঁটের হাসি 

মুখে নিয়মের মুখোশ। 

আসলে মানুষের শরীর স্পর্শ খোঁজে 

আর স্পর্শরা খোঁজে মন

আর মন খোঁজে একটা সহজ সরল জীবন নিয়মের শহরে

আর সে মন যদি বিবাগী হয় তবে সে বাউল 

আর যদি ঈশ্বরমুখী তবে তা অপেক্ষার ।  



নিখোঁজ

 


নিখোঁজ 

... ঋষি 


আমার সোনার পাখি হারিয়ে গেছে 

আমার শুধু একার নয় সুনীল ,শক্তি ,নবারুণদারও গেছে 

খুঁজে পেয়েছি আমরা আকাশ সকলে 

তবে পাখিটা নিখোঁজ। 

.

নারী তুমি অন্ধকার আকাশ

মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে অন্যের মতো আমারও 

তুমি কেন অবাধ আকাশ হলে ?

কেনই বা তোমার দিকে বাড়ানো হাত কখনো গভীরতা পায় না ?

কেনই বা সৃষ্টির জন্মান্তরে আকাশি স্তনের কাছে এলে 

সেই সোনার পাখিটা হারিয়ে যায় সবার ?

.

মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে 

নারী তুমি কি শুধু অন্ধকারে রেখে আমাদের 

শধু আলো পেতে চাও ?

নাকি তোমার যোনি জন্মের সর্বত্র রাখা ব্ল্যাকহোল 

আকাশ হারায় 

বাতাস হারায় 

শুধু ভাবনারা ভেসে বেড়ায় বোধয় অন্য কোনো গ্রহে 

সেখানে আমরা কেউ কবি না 

সকলেই নিখোঁজ,

মাঝে মাঝে তাই রাগ হয় তোমার উপর 

তাই আকাশটা গুঁড়িয়ে তোমাকে মানতে ইচ্ছে করে ভালোবাসা 

যা আকাশের মতো গভীর 

অথচ নিখোঁজ সোনার পাখির মতো। 

কিছুই বদলায় নি

 কিছুই বদলায় নি 

... ঋষি 


যেসব নারীর দেহ গলে ,পচে গেছে 

তাদের চাপা কান্নার শব্দ শুনি আজ বহু সভ্যতা ভেদ করে ,

ওদের ফুলে ওঠা মধ্যদেশ ,সারা শরীরে পোকা 

দূরবীনে দিয়ে দেখি 

দেখতে পাই শোভাযাত্রা ,মৃত্যুর মিছিল 

সভ্যতা হাসে 

পুরুষ ভালোবাসে। 

.

আবার যেসব নারী শরীর অবাক  কংকাল

তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নাকে চাপা দিয়ে দেখতে পারো তাদের ধুকপুক

তাদের ধুকপুক ভালোবাসা ,নিঃশব্দ ,

আতশ কাঁচে কেউ যদি দেখে তবে বুঝবে 

সভ্যতার কাপুরুষতা বেয়ে নিবিড় কোনো পুকুর 

সেই পুকুরে ঘোলা জল 

সভ্যতা বলে 

নারী চোখ ,সময়ের শোক। 

.

এই যে এতো শরীর 

এই যে হাজারো চিৎকার নারী মুহূর্তের সাক্ষী 

এগুলি নিয়ে গোপনে কেউ কোনোদিন  লিখে রাখে নি কিছুই 

শুধু ঋতুবদলের গল্পে হাজার চুরাশির মা চিৎকার করেছে 

কিংবা চিৎকার করেছে মনিপুরের মা

সভ্যতা চুপ থেকেছে 

কিন্তু বদলায়নি কিছুই 

কারণ শাড়ির তলার শরীরটা আজও সভ্যতার কাছে সস্তা 

শুধু বিজ্ঞপ্তির বিশ্লেষণটা বদলেছে 

কিন্তু বিজ্ঞাপনে আজও আমি দেখতে পাই মৃত ,পচা ,গলা শরীরগুলো 

আর তাদের ভয়ংকর চিৎকারে সভ্যতা হাসে পুরুষের ভূমিকায়।    

ছায়ামানবী

 ছায়ামানবী 

... ঋষি 

.

এই যে আমি তোমাকে যেমন ছুঁয়ে আছি 

ঠিক যেন তুমি মাটি ,

তেমনি মাটি আবার ছুঁয়ে আছে শিকড় এক বোধি বৃক্ষ 

সেই বৃক্ষে আবার কত প্রজাপতি ,কত স্বপ্ন ,কত ফল 

আর সময় সে নদীর জল। 

.

এইভাবে আমরা ছুঁয়ে আছি একে অপরকে 

প্রতিদিন আমি এই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরি 

প্রতিদিন সেই ল্যাম্পপোস্টটা আমাকে বলে আমি আলো 

অথচ আমি আলো বলতে আমি চিনি 

আমার ছায়ামানবী 

আমি যে পথে হাঁটি তুমিও যেন হাঁটো আমার পাশে পাশে। 

.

এই পথে হেঁটে গেছে গৌতম বুদ্ধ ,কনফুসিয়াস 

আজকাল আর সেই সব আলোকে আর দেখতে পাই না আমি, 

শুধু দেখি দেখি আলোর পথ 

ক্রমশ দূরে ,আরো দূরে অজস্র রশ্মি 

আমি হাঁটতে থাকি 

কখন যেন অজান্তে আমি মিশে যেতে থাকি তোমার সাথে ,

আমি হাসতে থাকি 

নিন্দুকে বলে আমি নাকি এক গম্ভীর কবি হয়ে উঠছি 

কেউ কেউ বলে আমি পাগল 

কিন্তু আমি বোঝাতে পারি না কাউকে 

আমি আসলে মিশে যাচ্ছি আলোর  সাথে।

ছায়ামানবী এই শহরে ,এই সময়ে একা হওয়াটা বোকামি 

কিন্তু আমার মনে হয় নিজের সাথে একা হওয়াটা এক আলোর দিশা

আর তুমি তো কখনো ছেড়ে যাওনি আমায় । 


Tuesday, December 14, 2021

শীতের শহর

 শীতের শহর 

... ঋষি 


তুমি যতটা ভাবতে পারো দূরে 

আমি তার থেকে আরও দূরে ,আরও দূরে ,

যেখানে বোবা কুয়াশা জানিয়ে দেয় একলা শীতের আভাস 

সেখানে এই কবিতায় তুমি ছুঁয়ে থাকো 

বলো ,এই তো এলি। 

.

তোমার সাড়া পাওয়ার সব স্মৃতিচিন্হ আজ বোবা শহরের কথা বলে 

কথা বলে পুতুলখেলা ,একলা বেলা ,

আমি তো আর বলতে পারি নি বরফের ঘর থেকে 

আমি আছি ,সেখানে চলে আয় 

বরং বলি 

বেলা যায় ,ঠিক যেমন সময় চলে যায়। 

.

আমি তো বলতে পারি বরফ সাহেবের মেয়ে 

এটা গির্জা পাড়া না ,এটা সেই ঘড়ি না ,এটা  সেই আলিঙ্গন কিংবা চুমু না 

বরং আমি বলি 

বুক দিয়ে ঘষতে থাকা সরীসৃপ আমি। 

আমি সেই নোয়ার জাহাজের যাত্রী 

যার ভাবনায় শুরুরা সব পিছন থেকে আমাকে ঠেলে ফেলে দেয় 

কানে কানে বলে 

আমি ইতিহাস ভালোবাসি 

তবে ভালোবাসি না এই শীতের শহর। 


লাফিং বুদ্ধ হাসে

 লাফিং বুদ্ধ হাসে 

... ঋষি 


জীবন আর জীবনের গল্পের সাথে 

সময়ের বুককেসে বসে লাফিং বুদ্ধ হাসে। 

.

আমি বিলকুল একটা কবিতার সাথে মাতন  করছি 

আমার পাশে শহর বইছে ,আগুনের ভাষায় 

আমার শব্দরা তবু মানুষ কুড়োচ্ছে ফুটপাথে আর রাস্তায় 

হাজারো ব্যস্ততায় 

ভীড় ,ধুলো ,পুরোনো ট্রামলাইন ,পুরোনো গির্জার ঘড়িতে পায়রা 

সব শিখছি আমি 

কারণ এদের পাশ দিয়ে তুমি এগিয়ে যাচ্ছো চলন্তিকা 

সরে যাচ্ছো এই শহরের ব্যস্ততার ভীড়ে। 

.

ফেরার রাস্তারা সব বন্ধ 

অনেকদিন ওয়ানওয়ে এই শহরের প্রতিশ্রুতি 

জেব্রাক্রসিং এ দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় আমার মতো চুল কোঁচকানো ছেলেটা 

ক্রমশ দমবন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছে 

জানি ওষুধের দোকান আছে ,আছে সুগার ,কোলেস্টরল ,স্ট্রেস 

তবুও লাফিং বুদ্ধ হাসছে 

শহরের সব দোকানে ভীড় বাড়ছে তাকে কেনার। 

.

আজ এক একলা বিকেলে কবিতারা হয়ে যাক আকাশের পাখি 

আমি সবার মতো বুকের সেলফে লাফিং বুদ্ধ ঝুলিয়ে রাখি।  


মুক্তির শব্দগুলো

 মুক্তির শব্দগুলো 

... ঋষি 


আসলে এ কবিতা আমি লিখতে চাই নি 

সারাজীবন কবিতাকে ভেবেছিলাম জন্মের মতো পবিত্র 

আর মৃত্যুর মতো মুক্তির ,

কবিতাকে ভেবেছিলাম ঠিক তোমার মতো এক ফালি লিপস্টিক 

অলিভ গ্রিন চুড়িদার ,কাঁধে শান্তিনিকেতনি ব্যাগে গীতবিতান 

অথচ মুখ ফিরিয়ে দেখি সব কেমন বদলানো। 

.

সেই কুয়োতলা ,সেই রফিকদার দোকান ,সেই আজম চাচার পায়রা 

রফিকুলদার সাইকেল ,ইমরান ভাবীর সিমুই 

এ কে -৪৭,পাশে কাঁটা তার ,বালির লঞ্চার ,হ্যান্ড গ্রেনেড 

সীমানা পেরোনো মানুষ 

নামহীন গোত্র ,দেশ ,প্রচলিত স্বপ্ন 

সব কেন ভাংচুর।

 

.

আসলে এ কবিতা আমি লিখতে চাই নি 

লিখতে চেয়েছিলাম চেনা মানুষের টিনের তলোয়ারের গল্প 

অথচ আমি লিখতেও  পারেনি 

শুধু বুকের কাছে শব্দগুলো আকুলহয়ে আজও কাঁদছে 

কিন্তু তুমি হাসছো জানি 

আমি হতে পারলাম কি অপু ,ফটিক কিংবা  ক্রিস্টোফার

সেজন্য নয় 

তুমি হাসছো কারণ 

আমার বুকে ,আমার মতো মানুষগুলোকে তুমি ছোট করে 

দেশ হতে চেয়েছো।  


দূরে কোথায় দূরে দূরে


 দূরে কোথায় দূরে দূরে

... ঋষি 

.

সব সম্পর্ক দুমড়ে মুচড়ে ছুড়ে ফেলো দেবো 

সব দীর্ঘশ্বাস ,সব গন্ধ ,সব স্মৃতি ,মিথ্যে বিশ্বাস 

বিনিময়ে চাইবো একটা সত্যি কবিতা ,

পাগল যেমন আকাশের চাঁদকে গালাগাল দিয়ে খুঁজতে চায়  স্পর্শ 

তেমন আমি বুক ফাটিয়ে চিৎকার করবো 

মিথ্যা। ....মিথ্যা। ......মিথ্যা। 

.

এদিকে নতুন গজিয়ে ওঠা জনবসতি ,মানুষজন 

তাদের কাছে শীতের শুকনো নর্দমা কুঁড়িয়ে বিক্রি করে  দেব সব সম্পর্ক ,

সব ইচ্ছা ,

সেতু ভাঙার শব্দে ঘুম ভাঙিয়ে যাবে মাথার ভিতর চলতে থাকা রেলগাড়ি

আমি প্রতিরাত  জাগবো  

কোথাও দূর থেকে শুনতে পাবো রবিঠাকুরের গান  কণিকার কণ্ঠে 

" দূরে কোথায় দূরে দূরে"

অসহ্য যন্ত্রনা প্রতিবার ভালোবাসার মৃত্যুর পরে। 

.

কোনো রেহাই নেই এই মিথ্যা পৃথিবীর সম্পর্ক আর সময় থেকে  

তাই অভিনয়ের দাঁড়িপালাতে পাড়ি দেব আমি সময়ের বিছানায় 

ঠিক সময় করে তার বিনিময়ের কিনে নেবো কিছু চিতাকাঠ 

আরও কিছু আগুন 

তোমাকে জানতেই হবে আমার মতন মানুষগুলো নিজেকে সৎকার করে 

অন্যকে নয়। 

জানি বর্তমান লিখিত কবিতা শেষ করতে নেই 

শেষ করতে নেই আগুনে লেখা আমার পুড়ে যাওয়া 

প্রশ্ন থাকবে আগামী প্রজন্মের কাছে 

মেঘ ফুড়ে খাগের কলমে লিখে যাবো সম্পর্ক বিক্রেতাদের কথা 

প্রশ্ন থাকলো তবে সময়ে কাছে 

আমি কি সত্যি তবে মিথ্যে ছিলাম ?


Monday, December 13, 2021

একটা দিনের কবিতা

 একটা দিনের কবিতা 

... ঋষি 


শহরে ব্যস্ততা ,শহরের অলিগলি ,শহরের চিৎকার 

অথচ আমি খুঁজছি তোমায় ,

কবিতা ভাবনার   ধরণ রোজ বদলাচ্ছে নিজের মতো করে এই দুনিয়ায়

অথচ আমি দাঁড়িয়ে আছি ছেঁড়া চটি পায়ে ,

সেই সেখানে 

যেখানে তুমি কথা দিয়েছিলে ছেড়ে যাবে না কোনোদিন। 

.

সিনেমাহলের ছেঁড়া সিট্ ,কোনো দুপুরে মেয়েদের স্কুলের গেটে 

তোমাকে দেখেছি ,তোমাকে পড়েছি আজ ,কাল পরশুর গল্পে 

তবুও তোমায় খুঁজে পাই নি ,

তোমাকে লিখেছি রোজ ,দেখেছি কাঁচের চুরির দোকানে 

অচেনা জেব্রাক্রসিঙ পেরিয়ে বারংবার ছুটে গেছি তোমার দিকে 

কিছু পাই নি 

শুধু মনে আছে তুমি বলছিলে ভগ্নাংশের জীবন শুধু এতটুকু। 

.

আজ কাল সময়ের মুখে মাস্ক ,স্কুল কলেজ বন্ধ 

তুমি কথা বলো 

কিন্তু আমি জানি তুমি কথা বলো না আমার সাথে 

তুমি চুপ থাকো 

সহ্য করো ,

আমি বলি তুমি মনে করে ওষুধটা খেয়ো 

তবু জানি সময়ের যন্ত্রনা কমাতে ওষুধ যথেষ্ট নয় 

জানি প্রতিদিন নিয়ম করে অন্ধকার নামে  একলা টিলার উপর 

তুমিও খুঁজতে থাকো আলোর রশ্মি 

আর আমি খুঁজতে থাকি  একটা দিন যেদিন ভাত ডাল ডাকবে না আর 

ডাকবে না স্বার্থ কোনো যুক্তির ভূমিকায় 

সেদিন যেনো তোমাকে প্রশ্ন করবো আমি  

বলো তো জীবন কেমন আছো ? কেমন কাটালে এত দিন ?  

একটা খুনি কবিতা

 


একটা খুনি কবিতা 

... ঋষি 


আমি সেই পাগলটাকে খুন করবো 

খুন করবোই ,

যার কান্নার সাক্ষী থাকে পড়শি শহরের বাড়তে থাকা সন্ত্রাশ 

সেই মরা অশ্বথ্থ পেরিয়ে ,রেললাইনের ধারে যাকে পুঁতে দিয়ে এসেছি 

তার সাক্ষী সেই পাগল 

সে ভিতর দিয়ে বলেছিল অন্যায় ,আমি পাত্তা দি নি। 

.

আজ নাই নাই করে বেশ কিছু বছর 

গল্পটা হারিয়েছে 

অথচ তারপর থেকে সে কাঁদতে থাকে ,গুমড়োতে থাকে ভিতরে ,

আমি কলম খুঁচিয়ে দেখি অনেকটা পচে গেছে তার হৃদয় 

তার কান্নার সাক্ষী থাকে 

নীরব এই নদীকূলের শহর আর ফেরিঘাট। 

.

বইমেলার ধুলোয় সেই পাগল প্রতিবছর কাঁদতে থাকে 

কাঁদতে থাকে প্রতিদিন আমার খুনের জন্য ,

আমি কবিতা লিখলে সেই পাগল কাঁদে 

আমি বাঁচতে চাইলে সেই পাগল কাঁদে 

সে পাগল কাঁদে কর্কটক্রান্তি ঘেঁষা অন্য শহরের গল্পে ,

আমি জানতে চাই না 

অথচ জানি সে কেন কাঁদে 

এখনো দুর্ঘটনায় প্রতিদিন মারা যায় আমার সব কবিতা 

এখন প্রেম গলার কাছে আটকে থাকে কান্নার মতো 

এখনো আমার চিৎকার করতে ইচ্ছে করে 

আমি কবিতার দিব্বি বলছি 

আমি সেই পাগলটাকে খুন করবোই 

না হলে সে আমাকে বাঁচতে দেবে না। 


Sunday, December 12, 2021

বালিশহর

 বালিশহর 

... ঋষি 


শুধু দূর থেকে তাকিয়ে দেখবো পিরামিড 

দেখবো ইতিহাস হয়তো শুয়ে আছে এই বালিশহরের বালিঘড়িতে 

তাই ফিরতি পথে আমি চড়ে বসবো বালি জাহাজে 

পেরিয়ে যাবো কোপারনিকাসের দূরবীন 

পথের পাশে কসাইখানায় তখন দুরন্ত রৌদ্র 

আমিও কামুক হবো ,লোলুপ চোখে তাকাবো পিরামিডের দিকে 

কিনে নেবো বেশ কিছু শরীরে মাংস। 

.

পিরামিডের আশে পাশে ধূলিঝড় 

সময়ের ঘর 

সেখানে বাজার দোকান ,রাজনীতি নিয়ে হাজারো মোদো মাতালের বাস

আমিও না হয় মাতাল হবো

তোমার দুরন্ত পিরামিড হাত রেখে বলবো 

এই জমি আমার 

তুমি বলবে ,শান্ত হ ,পৃথিবীকে এইভাবে বদলানো যায় না। 

.

এটা কোনো ফ্যারাওর কবিতা নয় 

এই কবিতায়  শুয়ে নেই কোনো দেব শিশু কিংবা বলিপ্রদত্ত ঈশ্বর ,

শুধু এক বিষাক্ত বাতাস আমার লাল চোখে 

তাই আমি মাংস খুঁজছি মিশরের পথে ,ঘাটে ,এই কবিতায় 

খুঁজছি ক্রীতদাসী শুধু ফ্যারাও হবো বলে 

মেরুদন্ড আর সমাজের মাঝে সাঁকোটা শক্ত করার জন্য 

সওদা করছি 

বিষাক্ত হিরোগ্লিফিকে লিখতে চাইছি বালি শহর 

আজকের মানুষ আর মাংসের গল্প।  

 

একটা চেনা গল্প

 একটা চেনা গল্প 

... ঋষি 

.

চলন্তিকা রাত এখন অনেক বাকি 

আরেকটা গল্প বোলো আমি শুনি ,তোমার ঠোঁট দুটো নড়ুক 

আমি দেখি 

আমি শুধু মাত্র ঘুমিয়ে এই জীবনের স্বপ্ন দেখবো না 

যদি মনে হয় এবার রাজপুত্র মরলেই ভালো হয় 

কিংবা এইবার তবে রাজকন্যার অকাল বৈধব্য 

তবে আর শুনতে চাইবো না। 

.

তবে আমি জানি এই রাতের মতো ,তোমার গল্পটা বাকি 

আমি জানি স্মৃতির দেবতা কিভাবে সঙ্গম করে 

আমি জানি কিভাবে তোমার বলতে ইচ্ছে হয় আর না ,এইবার 

কিভাবে তোমার চোখ লাল হয় 

কিভাবে প্রতিটা গল্পের শেষে তোমার ছেলেমানুষি চেপে ধরে। 

.

এ গল্প অচেনা ছিল আমি ছাড়া 

হ্যা আমি ঋষি 

এই গল্পের নায়ক হঠাৎ কুকুরের মতো ঝাঁপিয়ে পরে না কবিতা বলতে বলতে 

এই গল্পের নায়ক সমদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে প্রেমিকার বুকে 

পাঠকগণ প্লিস ঘাবড়াবেন না 

এই গল্পটা শেষ চাইছে জানি 

কিন্তু আমার অচেনা গল্পে নায়িকা আপনাদের চেনা 

ঠিক ধরেছেন আমার কবিতা 

                          ..... চলন্তিকা 

তাকে আপনারা সকলে চিনলেও 

                      ও নাম মুখে নেবেন না ,

কারণ ভালোবাসলে নারীরা সব কবিতার মতো সরল 

আর নিজের ভালোবাসা অন্যের মুখে ভালো লাগে না। 

এখন শুধু শব্দ আর কবিতা

 


এখন শুধু শব্দ আর কবিতা 

... ঋষি 


আমি জানি সেই একমাত্র ঠোঁট 

     যার কল্পনায় আমার ঘুম নেই ,নেই বিন্যাস। 

বাকিসব কবিতার নামে বাজারি কিছু  আবাসন 

বাংলা ম্যাগাজিনের পাতায় ঝালমুড়ি আর সিঙাড়া 

লিখছে প্রতিদিন হাজারো 

পড়ছে কারা ?

.

আমি খুঁজছি সেই একমাত্র ঠোঁট 

     যদি কদাচ ,কখনো ঘুম ভাঙে জেগে ওঠে সেই ঠোঁট 

তবে নবারুণের শব্দ ,সুনীলের প্রেম ,বিনয়দার চাকা ,জীবানন্দের প্রেম 

সব কম্প্যাক্ট একটা বিপ্লব ,একটা অগ্ন্যুপাত কবিতার শব্দে 

জানি তখন, জানি মৃত্যু আসবে এই শ্মশানে 

শুধু বুকের ভিতর তখন সেই  ঠোঁট গুলো নড়তে থাকবে  

শুধু জন্ম 

                শুধু জন্ম 

হাজারো ভাবনা ,হাজারো স্বপ্ন ,হাজারো কবিতা 

মানুষের কষ্টগুলো এই শহরে কবিতা হবে। 

.

ভাবি যদি কখনো কবিতা লিখতে লিখতে  মরে যাই 

ভাবি যদি সত্যি দেখা দেয় সেই স্বপ্নের ঠোঁট 

জানি সবাই ছেড়ে যাবে আমাকে 

যেমন পাগলকে ছেড়ে যায়  পাগলাগারদে

যেমন বিপ্লবী সত্যিকে ছেড়ে যায় সময় 

যেমন পুরোনো পোশাক ছেড়ে যায় মানুষ 

ঠিক তেমনি সকলে ছেড়ে যাবে আমায় 

তাতে কি 

তবুও আমি চাই সেই আশ্চর্য বিপ্লবী ঠোঁট একবার কেঁপে উঠুক 

আমাকে ছুঁয়ে বলুক 

সময় এইবার তোমার খেলা শেষ 

         ..... এখন শুধু শব্দ আর কবিতা। 

একটা নিয়মের কবিতা

 একটা নিয়মের কবিতা 

... ঋষি 


আমার অস্তিত্বের বাইরে পড়িয়েছ অচেনা তাবিজ 

অস্তিত্বের দরজা খুলি নজরে পরে ,দরজার বাইরে লেবু লংকা 

নজর দিয়ে রেখেছো আমি হাওয়া খাচ্ছি কিনা 

কিন্তু কেউ একবারও জানতে চাইছো না আমি বেঁচে আছি কিনা ,

জানি বেঁচে থাকাটা একটা নিয়ম 

কিন্তু সবাই তো আর নিয়মিত হবে এমন কথা নেই। 

.

আগুন জ্বালিয়ে রেখেছি তাই নিজের অস্তিত্বে ,নিজের রাস্তায় 

পুড়ছি  রোজ নিজের মতো করে 

তুমি খুঁজছো অফিস থেকে ফেরার পর আমার জামায় দাগ 

কিংবা গন্ধ ,কিংবা চুল 

কিন্তু তুমি কিছুতেই বুঝতে চাইছো না 

আমার আগুনে রাস্তায় আমার গায়ে চাপ চাপ পোড়া দাগ 

সেখানে সুবাস ?

.

আমার অস্তিত্বের কাছে তোমার  দাবি

উইকেন্ড টুর ,রেস্টুরেন্ট হপিং ,নিয়মিত হাসতে হবে আমায় 

অথচ তুমি ঠিক বুঝতেই পারছো না 

আমার পৃথিবীতে নিশ্বাস কমছে ক্রমশ 

ক্রমশ আমি ঢুকে পড়ছি একটা ব্ল্যাকহোলে। 

তুমি নিয়ম করে সার্ফ এক্সেলে সম্পর্কের গ্রন্থিগুলো ধুতে চেষ্টা করছো 

আমি করছি চেষ্টা বাঁচার ,

তোমাকে বোঝানো যাবে না আমি কোনো ম্যাজিক জানি না 

জানি বেঁচে থাকা মানে একটা নিয়ম না 

বেঁচে থাকা মানে নিশ্বাস 

কিন্তু কিছুতেই তুমি  তোমার সিঁদুরের শব্দে  

তোমার ঠোঁটের লিপস্টিকে ,তোমার পায়ের আলতায় 

আমাকে খুঁজে পাচ্ছো না। 

ফিরতি পথে

 ফিরতি পথে 

... ঋষি 


এই ফিরে যাচ্ছি নিজের ভিতরে 

তুমি ডাক দিলে 

তবুও ফিরছি আমি ডুয়ার্সের অন্ধকার পথে পাহাড়ের ঢালে 

তবুও ফিরছি আমি সেই ভুটানি মেয়েটার চোখে ,কপালে 

ফিরে যাচ্ছি হাসিমারা ডাহুকের ডাকে 

সময় থেকে দুর্বলতায়। 

.

আমার ফিরে যাওয়ায় অন্ধকার ছিল 

তবুও পিছন ফিরে তাকালাম দেখি তুমি দাঁড়িয়ে 

তোমার চোখে জল 

বুক ভিজছে আমার কুয়াশা ভরা শীতের কবিতায় ,

শেষ ট্রেন চলে গেছে বহুদিন 

তবুও স্টেশনের অপেক্ষা। 

.

আবারো ফিরছি আমি নিজের ভিতর 

পাহাড়ি ঢাল বেয়ে সেই মেয়েটার কাছে যাকে বলা হয়নি 

তোমার চোখটা সুন্দর ,

আবারো ফিরছি কোনো নদীর স্রোতের সাথে অদম্য বুকে সেই যৌবনে 

যেখানে তোমাকে বলার ছিল 

আমি তোমার শরীরে বৌদ্ধ ধর্মের গন্ধ পাই ,

ফিরে যাচ্ছি খরখরে রাস্তা দিয়ে আমার বার্ধক্যের পাশে তোমাকে ছুঁয়ে 

তোমার চশমার কাঁচে লেগে থাকা আতংক 

আমি বাঁচবো কিনা ?

তোমাকে বলা হয়নি ,বলতে চেয়েছি বারংবার 

বাঁচতে তো চাই 

একটা জীবন কিন্তু বাঁচতে পারি কই। 


Saturday, December 11, 2021

অহংকারী



 অহংকারী 

... ঋষি 


জানি না কিসের অহংকার 

কোনো শীতের কুয়াশা ভরা সকালে মেয়েটার শরীরটা পাওয়া গেলো ঝুলন্ত অবস্থায় 

আমি তার পা দুটো দেখেছি 

তার পায়ে  গৃহস্থ আলতা,সুখের নুপুর  ,সুখের বিনিময় সময়ের সুখ 

তবে মেয়েটার মুখে তখন এক স্নিগ্ধ হাসি। 

.

জানি না কিসের  অহংকার

আমি না চাইতেও লিখে ফেলছি এই কবিতায়  অদ্ভুত দুঃখে 

ঠিক সেই সময় অন্য একটা মেয়ে নেতাজী সুভাষ বন্দর থেকে ইউরোপের ফ্লাইট ধরে ,

এই মেয়েটা আর সেই মেয়েটার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই 

তবে লক্ষ্য করে দেখেছি 

এর পরনে জিন্স ,গেঞ্জি ,মুখে  সেই স্মিত হাসি। 

.

প্লেনটা সকালের কুয়াশা ছেড়ে মিশে যাচ্ছে 

আমি অবাক হচ্ছি  জীবন আর মরণের তফাতে 

আমি অবাক হচ্ছি একই সকাল ,একই দিন ,একই গতি পৃথিবীর 

কিন্তু সময়ের যাত্রাগুলো কত আলাদা ,

কেউ দুঃখ ছুঁয়ে অহংকারী 

কেউ সুখ ছুঁয়ে 

অথচ জীবন শব্দটা ঝুলন্ত মৃতদেহের মতো নিরুত্তর 

কি 

কেন 

এই কারণগুলো বড় চঞ্চল মেয়েগুলোর হাসির কাছে। 


ভালো আছো তাই

 


ভালো আছো তাই 

,,,, ঋষি 


আমার অনেক কিছু তোমার পছন্দের নয়

কিন্তু কেউ ভাবে নি  

মানুষের পছন্দের সবটুকু যদি মিলে যেত 

তবে দুটো মানুষ কি থাকতো ?

.

 তোমার হাতে যদি কাঁটা চামচ থাকতো 

তবে বেশ হতো 

পছন্দটুকু মুখে তুলে ভরা অনুষ্ঠান বাড়িতে বাকিটুকু ফেলে দিতে 

কিন্তু তুমি জানতে না 

আমিও বলতাম না কাউকে 

যেটুকু তুমি ফেলে দিতে সেটুকু ডাস্টবিনেও তোমারি থাকতো। 

.

আমার অনেক কিছু অনেকেরই ভালো লাগে না 

আমার অনেক কথা তুমি বুঝতে পারো না 

তবুও চুপ থাকো 

কারন তুমি ফেলতে পারো না কিছুই ,

বুঝি ,আমার ক্রোধ ,জন্ম ,হিংসা ,লোভ ,আমার নুনটুকু 

সব তোমার পছন্দের নয় 

তবু তুমি সহ্য  করো ,

আমি বলি কি তুমি শুধু ভালোটুকু নিও 

বাকিটুকু কেরোসিন তেল ঢেলে নষ্ট মনে করে জ্বালিয়ে দিও 

দেখো আমি কষ্ট পাবো না 

শুধু বুঝবো তুমি ভালো আছো তাই । 

ব্ল্যাকবোর্ড

 


ব্ল্যাকবোর্ড 

... ঋষি 


আমি যেখানে আছি ,সেখানেই আছি 

তোমরা বসে আছো প্রথম ,দ্বিতীয় ,তৃতীয় বেঞ্চে 

কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মতো আমার  অসম্ভব দুর্বলতা আবিষ্কারের 

নিত্য নতুন আবিষ্কার করছি মানুষ। 

.

চরিত্র আর সংলাপের মাঝখানে একটা ফারাক 

চিরকাল একটা দৃশ্যের পর একটা সমকালীন দৃশ্য 

বরফের ইগ্নুতে যাদের ঘর 

তাদের কি আর বরফ শরীর ,

আসলে প্রত্যেক মৃত্যুর পরে নর্থপোলে বরফ পরে না 

ঠান্ডা হয়ে যায় শরীর বরফ শহরে। 

.

আমি যেখানে বসে আছি ,সেখানেই আছি 

বেশ একটা মজাদার গল্প 

চরিত্ররা দৌড়োচ্ছে ,হাসছে ,কাঁদছে,মারামারি করছে 

সবাই চিৎকার করছে 

আমি দুঃখ পাচ্ছি কতদিন হাতে নিয়ে দেখি নি কাঁটা কম্পাস 

লসাগু ,গসাগু ,থ্রী মাস্কেটিয়াস বলে বইটা 

আমি বুঝতে পারছি 

কেউ বুঝছে না

আমি ক্রমশ পিছোতে চাইছি সকলের থেকে 

আর সামনের ব্ল্যাকবোর্ডে ফুটে উঠছে কতগুলো শব্দ 

যার মানে জীবন।  

 


আমি চুপ

 


আমি চুপ 

.... ঋষি 

.

এই তুমি উঠে এলে সদ্য স্নান সেরে 

তোমার ভিজে বুকের কাপড়ে ঢেকে দিলে আমার মুখ 

বললে চুপ ,

.

তুমি এগিয়ে গেলে একফালি হেসে সাদা বকের মতো 

উজ্বল থেকে আরো উজ্জ্বল তুমি 

আমি পুড়ছি জানো 

আমি নেই তোমার সাথে ?

তোমার চারপাশে সুশীল মেঘে ,মেঘেদের বালক 

মোহন বাঁশি 

তুমি ঈশ্বরী বোধহয়। 

.

আবার তুমি ফিরে আসছো 

তোমার চুলে মাতাল করা শব্দরা আমাকে কবি বলছে পৃথিবীতে 

অথচ আমি কাউকে বলতে পারি না 

তুমি ফিরে আসো 

কারণ তুমি আবার চলে যাবে বলে। 

.

আমি চুপ 

সদ্য ভেজা তোমার হৃদয়ের গন্ধটুকু আমার উপহার 

বাকি সবটুকু 

না সত্যি বলতে নেই। 

পোড়াবাড়ি

 



পোড়াবাড়ি 

... ঋষি 


অনেক রহস্য জমানো থাকে 

পোড়াবাড়ি দেওয়ালের ইটে হাজার বছরের যন্ত্রনা ,

তুমি বলেছিলে কবি বছর কুড়ি পর হয়তো 

অথচ আমি পোড়াবাড়ির জানলায় দাঁড়িয়ে ভাবছি

আমার মতো কেউ দাঁড়িয়ে এখানে ভেবেছিলো 

ভালোবাসা শব্দটা ভীষণ স্বার্থপর 

         কেউ ভালোবেসে অন্যের জন্য বাঁচে নি কোনোদিন। 

.

তুমি খুব সহজে আমার ভাগেরটুকু ভগ্নাংশ বলতে পারো 

সেই তো , কতগুলো টুকরো 

অথচ সব টুকরোগুলোতে আমার থাকার সাধ্য হয়নি কোনোদিনই। 

এই পোড়াবাড়িতে বৃষ্টিতে ভিজেছে হাজারোবার 

হাজারোবার তার শিহরণ 

                   হাজারো তার উপলব্ধি 

        অথচ এই বাড়িটার আমার ছিল না কোনোদিনই। 

.

আমার উর্বর জমি ,আমার কয়েককাটা মাকান 

আমি আটকে গেলাম এক পলকে 

                    মানুষ কত সহজে মিথ্যে বলতে পারে। 

অনেক রহস্য গোপনে থেকে গেলো ,সময়ের গভীরে কাঁটা 

               থামতে পারলো কই ?

জানি আমার এই সত্যিগুলো এক পাগলের প্রলাপ তোমার কাছে  

হয়তো তোমার কাছে দোষারোপ 

হয়তো সময়ের রোগ 

অথচ আমাকে ভাবতেই হবে তুমি আমাকে ভালোবাসো 

তাই বোধহয় তুমি  আঘাত করো 

আমাকে বুঝতেই হবে আমার ভগ্নাংশটুকু আসলে আমার বাঁচা 

না হলে মরে যাবো যে ,

এই পুরোনো একলা দাঁড়ানো বাড়িটার মতো 

তখন  হয়তো তুমি সত্যি বলবে আমাকে 

তোর জন্য আমি অন্ধকার হয়ে যাচ্ছি ,

                     ..........তাই ছেড়ে  দিলাম তোকে  । 


Friday, December 10, 2021

নিরুত্তর

 নিরুত্তর 

... ঋষি 


পাতিপুকুর পাগলা গারোদের জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছে 

আজ সারাদিন শীতের রৌদ্র শুকিয়ে দিচ্ছে সময় 

শুকনো মাটি 

পাগলটা দেখেছ জানলার ওপাশে গাছতলায় বিচ্ছিরি নোংরা ভিখারিনীটাকে

কুচো কুচো শুকনো পাতা ছড়িয়ে চারিপাশে 

পাগলটা হাসছে ,পাগলটা চিৎকার করছে হঠাৎ। 

.

আমি দেখছি 

অনবদ্য ছন্দে বইতে থাকা জীবন 

পাগলাগারদের ভিতরে ,বাইরে ফুটপাথে বিগতযৌবনা ভিখিরিনীর মধ্যে ,

যৌবন বড় উত্তেজক শব্দ 

কিন্তু তার বাইরেও দৃষ্টিগুলো পাগলের হতে পারে 

কারণ সব দর্শন আর দৃষ্টি শুধুমাত্র সামাজিক না । 

.

আজ সারাদিন প্রখর রৌদ্র সময়ের গায়ে 

ক্লান্ত ভিখিরিনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে পাগলটার দিকে তাকিয়ে 

তার মরদ 

তার সংসার 

যৌবন হয়তো মরে যায় না খেতে পেয়ে বহুদিন 

কিন্তু আশ্চর্য সম্পর্ক। 

আমার ভয় করছে ওরা হয়তো অপেক্ষা করতে করতে মরে যাবে

ওরা হয়তো সময়ের কৃপণতার কান্নায় ডুবে যাবে 

ওরা হয়তো একে ওপরের নগ্ন বুকের আমেজ পাবে না কোনো 

শীত ফুরোবে 

ওদের যৌবন ,ওদের সময় ,ওদের মুহূর্তরা 

একইভাবে বেঁচে থাকার অপেক্ষা করবে

আর আমি হয়তো সম্পর্কের টানে ওই বৃদ্ধ পাগলের চিৎকারে 

নিজেকে খুঁজবো 

প্রশ্ন করবো নিজেকে ,সম্পর্কের মানে।  

 


 

Thursday, December 9, 2021

পুনরাবৃত্তি

 


পুনরাবৃত্তি

... ঋষি 


যুদ্ধটা অন্ধকারের বিরুদ্ধে হোক 

অথচ ,এ তো মহাভারতের পুনারাবৃত্তি সময়ের আঙ্গিকে ,

কে যুধিষ্ঠির ,কে কর্ণ ,কে অর্জুন ,কে ধৃতরাষ্ট্র ,কে শকুনি 

কে দ্রৌপদী ,কে কুন্তী ,কে আমি ,কে তুমি ,

এ যে একধরণের নিজেকে হত্যা। 

.

হত্যাকারী আমি 

নিজের ভিতর বাস করা মুখোশগুলোকে দোষ দিতে পারি না 

তাই চরম বিপর্যয়ে তোমাকে হত্যা করি ,

অথচ আমার কোনো অস্ত্র নেই ,আমার কোন জন্ম নেই 

আমার কোনো বয়স নেই 

এমনকি আমার জীবনের পর্বগুলো অতি  সাধারণ। 

.

যুদ্ধটা শুভ শব্দের হোক 

অথচ বোকার মতো আমি মহাভারত অনুসরণ করে কুরুক্ষেত্রে ,

কি চেয়েছি ?

আর কি পেয়েছি? 

তোমার  চোখে প্রতি অশ্রুবিন্দুতে অভিশপ্ত আমি  

তোমার শরীরের কোষে জমতে থাকা বদরক্ত আমি, 

আমি সেই মহাবীর কর্ণ 

যে নিজের অভিমানে সময়কে ধ্বংস করি 

অথচ কি অদ্ভুতভাবে সময়ের হাতে তুলে দি মৃত্যু।

আমার প্রতিটা মৃত্যুতে ঈশ্বর আশীর্বাদ করেন বটে 

বাইরে তখন বড় অদ্ভুত ভাবে  অসময়ের বৃষ্টি পরে 

নিজেকে কেন  বড়ো একলা মনে হয় জানি না  

'অথচ সময় বলে কবি তুমি অভিমানী আর বোকা  

অথচ আমার কোন মৃত্যুতেই  মহাভারত বদলায় না। 

মূর্খ বোকামি

সব প্রশ্নের উত্তরে জেদ চলে আসে 

সব উত্তরের আগে নিয়ম ,অনিয়ম আছে 

তবু জানি আমি 

সব তেল নয় জাপানী। 

.

প্রশ্ন উত্তর থাকে বরং তুমি চরকা খোঁজ চর্বিত চর্বনে 

আমার বলে তবু কিছু আছে ,তুমি বরং নিজেরটা বোঝ। 


ইতি 

মূর্খ বোকামি 

Monday, December 6, 2021

বাজার

 


বাজার 

... ঋষি 


কে বলেছে তুমি রাজপুরুষ ?


                            তুমি সাধারণ ,জনগণ , ,


তোমার সোনার চাকা লাগানো ঘোড়া নেই 


নেই তোমার চাকচিক্য 


তোমাকে কেউ কিছু ফ্রীতে কিছুই দেবে না 


এ জগতে ফ্রীতে পায় একমাত্র রাজপুরুষ কিংবা ব্যবসায়ী। 


.


তুমি থলে নিয়ে বাজারে 


চেয়ে আছো মাংসের দোকানে মুরগির দিকে 


ভাবলে একবার 


পেঁয়াজের দাম ,লংকা ,মশলা ,তেল ,উরিব্বাবা 


আজ থাক


              মাসের শেষ। 


.


এইবার তুমি বাজারের মাঝখানে 


তোমার পৃথিবীতে যদিও  এইবার ভালো বৃষ্টি ,ভালো ফসল 


কিন্তু কেউ যেন তোমার চোখদুটো  বেঁধে দিলো 


কেউ তোমার ডানা দুটো চেপে ধরলো 


চোখের সামনে অন্ধকার 


এইবার শুধু একটা পোঁচ ,তারপর আবার 


পথ ,ঘাট ,রাস্তা সব ভেসে যাচ্ছে রক্তে 


অথচ অফিসের দেরী হচ্ছে 


                        ফিরতে হবে 


তুমি খুব সামান্য আনাচ কুঁড়িয়ে বাড়ি ফিরলে 

দুঃখ পেয়ো না তুমি বা তোমরা  

 কাল আবারও  তুমি বাজারে যাবে,আরেকবার বাঁচতে ভয় পাবে । 

একদিন অন্যদিন

 

 

একদিন অন্যদিন 

... ঋষি 

এত কিছুর পর হঠাৎ মনে হয় 

একদিন খারাপ থাকলে মন্দ হবে না ,

এ 

ক 

দি 

এই পাশবিক সমাজের বিকারে নারী জঠরে নষ্ট ভ্রুন। 

.

সামনে তাকিয়ে দেখি এই তো গড়িয়াহাট 

         হঠাৎ পাশবিক চিন্তার ধাক্কায় ছিটকে গেল এক মুটে ,

অথচ বিকেলের রেশমি হাওয়া ছুঁয়ে দিচ্ছে 

        কপোতকপোতির ভিড়। 

হিংসা না 

তবে একদিন হঠাৎ সবকিছু ধ্বংস হয়ে গেলে ভালোই হয়। 

.

আমার হাতে কবিতার বই 

অপেক্ষায় 

একমনে ডুবে যাওয়ার চেষ্টা করছি কবির শব্দে 

আহা প্রেম ,বাহা প্রেম 

মন বসছে না 

তুমি আসছো না। .. আমি অপেক্ষায়,

সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাক। 

ওইতো তুমি আসছো অলিভ গ্রিন শাড়ি ,সেই হাসি 

ভিড় গুলো হালকা হয়ে যাচ্ছে 

কেউ নেই চারিপাশে 

আজকের দিনটা বাদ যাক 

পৃথিবী ধ্বংস হবে জানি আজ না ,,,অন্যদিন।

একটা কবিতার জন্য

 


একটা  কবিতার জন্য 

... ঋষি 


ভেবেছিলাম তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবো 


এমন এক কবিতা যা লেখে নি কেউ কোনোদিনই  


এমন এক কবিতা যা কেউ পড়বে না ,যা শুধুই  আমার একমাত্র 


এমন এক কবিতা যা আগুন ছুঁয়ে বলে দেবে এই তো তুমি 


এমন এক কবিতা যা এই শহরের বাতাসে এক ফুঁয়ে ব্যস্ততা মুছে দেবে 


মুছে দেবে মানুষের চোখের  কালি। 


.


সে এক গোপন কবিতা 


যে কবিতা কেউ  যদি ভুল করে  পড়ে ফেলে 


তবে লোকে বলবে আমি পাগল 


                   .... না হলে কি করে ভাবি গাছেদের সঙ্গম ,


না হলে কি করে ভাবি 


তুমি ঈশ্বরের আয়নায় ধরা দেওয়া প্রেম। 


.


আমি নিতান্ত এক কবি 


যার নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যাওয়া  সংসার ,


তবে বিশ্বাস করো আমি ঠিক লিখবো একদিন যা শুধু তোমাকে নিয়েই হবে ,


তাপর আমি আকাশের বুকে মেলে দেব দুটো হাত 


তারপর আমি পাখি হবো 


এই ব্যস্ততা ,এই খুচরো জীবন ,এই ফুটপাথ সব ছেড়ে 


আমি উঠে যাবে বাতাসে ভর করে তোমার ভিতরে 


আর সেদিনও  থাকবে আমার সেই গোপন কবিতা আমার সাথে  


শুধু 

              তুমি 


       তুমি 


তুমি। 

সুবাস



 সুবাস 

... ঋষি 


সমস্ত বৃষ্টি ফোঁটায় আজ কেমন যেন তোমার গন্ধ 

শেষ বিকেলে এমন সুবাস 

                 ..... কবে পেয়েছি শেষ !

প্রথম যেদিন ভাবনাজুড়ে নারী তখন বোধহয় সাপ লুডো

নাকি যেদিন প্রথম ধর্মতলার মোড় ,গড়ের মাঠ 

তোমার হাতের আঙুলে হাত। 

.

বাঁশপাতা ঝরে যাচ্ছে আমার ভিতর 

এক জাদুকর যেন অনবরত আমার কলমে তুমি ছুঁয়ে যাচ্ছো ,

কবে শেষ এমন সুবাস ,

বুকের ভিতর 

বুকের বাড়ির ভিতর 

ভিজে যাওয়া নোনা দেওয়াল আর নোনতা তুমি। 

.

কবিতা ছেড়ে ফিরছি ,ফিরছি সাপ লুডো ছেড়ে 

চোখের পাতায় জীবনটা উল্টো ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইটে 

তুমি হাসছো যে ?

আমি কলম ফেলে হাতে তুলে নেবো গিটার 

পুরনো সন্দেহে খুলে ফেলবো মহাভারতের মহাযজ্ঞ 

আমি দেখতে পাচ্ছি দ্রৌপদীকে 

তবু হাত রাখছি তোমার হাতে 

গন্ধটা চেনা  খুব 

                  ........সেই সুবাস। 

Sunday, December 5, 2021

অভিশাপ

 


অভিশাপ 

... ঋষি 


হুহু করে আসছে এই পৃথিবীতে মানুষ 

    ভাবি কার - অভিশাপ !

হু হু করে কমে যাচ্চে শৈশব রোজ একটু একটু করে 

ভাবি কার জন্য ?

রোজ তো আর এক শালিখ দেখি নি আমি 

রোজ তো আর আমার হাতের তালুতে অন্ধকার ভর  করে না। 

.

ভাবি একবার রাজসূয় যজ্ঞ করবো 

ভাবি একবার হোম ,বেদপাঠ ,শান্তি ,সামগান ,উপনিষদ করাবো ,

ভাবি কিসের জন্য বেড়ে চলেছে পৃথিবীতে পাপ 

কিসের জন্য মানুষের থেকে ক্রমশ বাড়ছে সম্পর্কের দূরত্ব ,

খুলে ফেলি হিসেবের খাতা 

দেখি খাতার প্রতি পাতায় কাটাকুটি ,,,,শুধুই কারণ। 

.

হুহু করে আমি তিলেতিলে এগিয়ে চলেছি মৃত্যুর দিকে 

        ভাবি কার দোষ  ?

চারিদিকে আজকাল মধ্যবয়সী অকালবার্ধক্যের ভিড় 

কাশফুল নেই 

        তাই অপুদুর্গার চোখে লেগে নেই দুরন্ত খোঁজ ,

কোনো লজ্জা নেই এই পৃথিবীতে 

         তাই শৈশবের কাছে কোনো দরজা নেই। 

শিশু আনতে হবে 

শৈশব ফিরিয়ে আনতে হবে 

টেস্টটিউব কিংবা ফ্যালোপিয়ানে ,কিন্তু কে হবে পিতা ?

কে হবে মাতা ?

পৃথিবীর সংবিধানে সত্যি এমন কোনো মানুষ নেই। 

  


শুকনো মালা

 


শুকনো মালা 

... ঋষি 


তোমার ছবিতে ঝোলানো মালাটা শুকোয় না কিছুতেই 

আজ প্রায় গত তিনবছর 

এ যেন এক অনিয়মের ভিতর থেকে তুমি ডেকে  ওঠো 

বুনু বাবা,তুই ভালো আছিস ?

আমি বুঝি এ এক রসিকতা আমার সাথে  

আমি কি খাচ্ছি ,আমি কিভাবে বাঁচছি তুমি একবারও জানতে চাও না 

অথচ বুকের ভিতর টাঙানো শুকনো মালার ফটোটা থেকে জানতে চাও 

ভালো আছি কিনা। 

.

আসলে সবটাই রসিকতা 

এখনো সম্পর্কের ওপারে দাঁড়িয়ে আমি ভাবি তুমি ভালো আছো ,

সেই আটপৌরে শাড়ি তোমার গায়ে 

তুমি বাবার দিকে তাকিয়ে বলছো শুনছো বুনুর খুব জ্বর 

অথচ এখন আমার দৈন্দিন জ্বরে তোমার গন্ধ খুঁজি 

তুমি ছবির ভিতর থেকে মিচকে হাসো। 

.

অনেকেই বলে এইবার বদলে দে মালাটা -শুকিয়ে গেছে 

অথচ আমি প্রতিদিন ঘুম  থেকে উঠে তাকিয়ে খুঁজি তোমাকে তোমার ছবির ভিতর  

বুঝতে চেষ্টা করি সত্যি কি ছিল সেদিন 

যেদিন তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে তুই একদিন অনেক বড়ো কবি হবি 

সেও কি ছিল তোমার রসিকতা। 

কবি সে কি মানুষে হয় ?

কবি সে কি সুখে হয় ?

কবি সে কি বেঁচে থাকলে হয় ?

 .

তুমি  আমার কাছে বেঁচে নেই আজ বহুদিন 

অথচ তুমি কিভাবে যে বেঁচে রইলে আমার ভিতর 

শুকনো মালাটা বিশ্বাস করো আমি বদলাবো না কোনোদিন 

ঠিক একদিন ঝুলে পড়বো আমি তোমার পাশে 

একই মালার ভিতর। 

বলা না বলা

 


বলা না বলা 

... ঋষি 


বলেছিলাম আবার দেখা হবে 

দেখা হবে সেই কাক ভেজা বিকেলের শেষ আলোর র্রশ্মিতে

বলেছিলাম সময়ের কবলে বন্দি এই শহরটাকে 

একদিন মুক্তি দেব 

সেই মুক্তিতে কোনো কান্না থাকবে না ,থাকবে না অভিযোগ 

শুধু বেঁচে থাকা টুকু থেকে যাবে । 

.

সেই সন্ধ্যা ,সেই চোখ ,সেই ছুঁয়ে থাকা ,সেই অতলপুরী 

পাশাপাশি মিশে থাকা শরীরগুলোর এক প্রাণ ,এক ভাবনা 

মিশে যাবো ,কাছে যাবো ,আরও কাছে 

যেখান থেকে শুধুই আমরাই বেঁচে,

সত্যি কবিতার  মতো একটা জীবন তোমার হাসিতে 

আমিও হাসবো বলবো চলন্তিকা এই বোধহয় আমাদের শুরু। 

.

বলেছিলাম একদিন কাছে যাবো 

বলেছিলাম একদিন পাশাপাশি আমরা হেঁটে যাবো সমান্তরাল ,

ফিরে দেখবে শহরের মানুষ 

হয়তো কেউ হাসবে ,কেউ কাঁদবে ,কেউ বলবে আদিখ্যেতা 

আর সেই সময় তুমি আমার দিকে তাকাবে 

কানে কানে বলবে মুক্তি। 

সব গল্পের সত্যিটুকু উপন্যাসের শেষ পাতায় অপেক্ষা করে 

আমি বলেছিলাম আমার অপেক্ষারা  উপন্যাস হবে 

আমাদের ভালোবাসার স্পর্শটুকু ইতিহাস হবে 

তুমি বললে  

এতো উপন্যাস লিখলে,এতো ইতিহাস ভাবলে আমাকে ভালোবাসবে কে 

তারপর ঝাঁপিয়ে পড়লে আমার বুকে 

আমার আর বলার কিছু রইলো না। 

 

   

সেই নারী



 সেই নারী 

... ঋষি 

সেই নারীর খোঁজ আমার 

খোঁজ আমার সেই ন্যাড়ামাথা শিশুর 

যারা দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেদিন চিতোরের আগুনে। 

সেই  নারীর খোঁজ আমার 

যে  যোদ্ধা  জন্ম দেওয়ার আনন্দে জেগে ছিল পরাধীনতার মাটিতে। 

.

সেই  নারীর খোঁজ আমার 

যাদের স্ফিত কলসীর মতো নিতম্ব ,বুকের স্তনে পাথর গুঁড়ো দুধ 

যার শরীরে আগুন

যার  ঝাঁসির রানীর রত্নখচিত শরীর ,

যার কাছে পুরুষ মানে  হৃদয়ের আশ্রয় ,প্রেম 

আর শিরদাঁড়ার মানে দেশ। 

.

আমি সভ্যতা খুঁড়ে পেয়েছি হাজারো কামুক নারী 

আমি সভ্যতার গন্ধে আজকাল হোটেলের বিছানায় দেখি বিবস্ত্র নারী 

আমি দেওয়ালে ,বিজ্ঞপনে ,টিভিতে ,কলমে

শুধু দেখি শরীর। 

আমি খুঁজেছি সেই নারীকে যে দ্রোপদীর পঞ্চ সঙ্গমের ইতিহাস 

আমি খুঁজেছি সে নারীকে যে হরপ্পার পোড়ামাটিতে তৈরী 

আমি খুঁজেছি মাতঙ্গিনী হাজরা নারী শরীর 

আমি খুঁজেছি ধৃতরাষ্ট্রের স্ত্রী আত্মত্যাগ 

আমি খুঁজেছি নারীর মাঝে সম্মান 

আমি খুঁজেছি নারীর কাছে  মাতৃত্বের গর্ব 

আমি খুঁজেছি সেই নারীকে 

যে খুব অনায়াসে বলে আমি তোমার সন্তানের মা 

কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি 

আমার বাঁচার জন্য তোমাকে দরকার 

কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য না। 

      

 


দেশ মানে শরীরের রক্ত




 দেশ মানে শরীরের রক্ত 

... ঋষি 


আজীবন পূর্ণতা 

হে দরিদ্র ভারতবর্ষ আমার বুকে তুমি এঁকে দিও অশোকস্তম্ভের মানে 

সহস্র প্রতিবাদের আগুন চিতোর থেকে জালিয়ানাবাগ

আসাম। গুজরাট , অনবদ্যতা 

সময়ের সুরে  সারে জাহাসে আচ্ছা শুনতে চাই 

সেই সন্তানহারা ভারতবর্ষের মুখে। 

.

চারিদিকে তাকাও 

আগুন জ্বলছে 

শুধু আগুনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মানুষ অভ্যেসে ব্যস্ত পুড়ে যাওয়ার ,

আমি শুনতে চাই আগুনের শব্দে সেই সময়টাকে 

আমি দেখতে চাই সেই মেয়েটাকে 

যে সশব্দে ট্রিগারের বোতাম টিপে চিৎকার করে বলুক 

আমি শরীর না ,আমি যোনি না আমি ভারতবর্ষ। 

.

চারিপাশে বেকারত্ব ,বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতি ,জনসংকটে খিদে 

মানুষগুলো ধীরে ধীরে মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে নিজেদের কাছে ,

নিজের কাছে মানুষগুলো মিথ্যে বলছে 

বেঁচে আছি ,

আমি আশা করি  সেই  ট্যাক্সিড্রাইভারের মুখে ,সেই সবজিওয়ালার মুখে 

শুধু মুনাফা না ,শুধু বাঁচা না 

কিছুটা অন্য মানুষ । 

আমি চাই  উন্নয়ন ছাপিয়ে যাক উন্নয়নের নামে চুরি যাওয়া মিথ্যা 

আমি চাই জনসংযোজ ,চাই বুদ্ধিজীবীর সত্যি 

শুধু হিজিবিজি ,আমি ,তুমি ,প্রেমের কবিতা না 

কিছু সময়ের সৃষ্টির 

যাকে পাথেয় করে মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়ে বলুক 

রাজা তুই চোর ,রাজা তুই রক্তচোষা 

আয় তোকে খতম করি সেই সদ্য জন্মানো সন্তানের জন্য

একটা নতুন সকালের জন্য 

যখন মানুষ আবারও বুঝবে দেশ মানে বোঝাপড়া না 

দেশ মানে শরীরে রক্ত।  


রিক্রিয়েশন

 


রিক্রিয়েশন 

... ঋষি 


সমস্ত মাথা খাঁড়া করে দাঁড়নো সময়ের কাছে 

আমি মাথা নিচু ,

সবাই শুধু বলতে চাই আমি ,আমি ,আমি 

আর আমিই বোকা 

চিরকাল শুধু হাজারোবার বললাম 

তুমি ,তুমি ,তুমি। 

.

সত্যি কখনো ভাবা হয়নি তেমন করে আজও কেন সূর্য ওঠে 

সত্যি ভাবা হয় নি এই পৃথিবীতে কি রাখা ,

যার ভূমিকায় 

মানুষের বেঁচে থাকাগুলো এতই দরকারি। 

শুধু দেখি আমি আমার চারিপাশে নিয়ম ,সাজানো মুখ 

আর আমি যে এক বোকা মানুষ। 

.

মাঝে মাঝে ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করে সময়ের পাথর 

মাঝে মাঝে  জেদ করতে ইচ্ছে করে 

মাঝে মাঝে বাড়ির পোষা ম্যাকাওর মতো আমারও বলতে ইচ্ছে করে 

আমি 

       আমি 

               আমি.....আমিও আছি ।

তারপর হঠাৎ কেমন অন্ধকার হয়ে যায় 

একটা অন্ধকার ছাতার তলায় দাঁড়িয়েও আমি বৃষ্টিতে ভিজি 

লোকে বলে ডিপ্রেশন 

আমি বলি 

আমি সকলের 

রিক্রিয়েশন। 



শেষ কবিতা

 


শেষ কবিতা 

,,,, ঋষি 


মুহূর্ত খানেক ইতস্ততার পর কবি সময়টাকে ছাড়ে 

বুকের খাঁচায় পাখিটা চিৎকার করে 

ছটফট করে খাঁচার ভিতর ,

হঠাৎ সারা শহর চিৎকার করে বলতে থালে  তুমি কোথাও নেই  কবি 

তুমি কোথাও ছিলে না 

ছিল শুধু তোমার ব্যর্থতা  আর তোমার মৃত্যু 

কবিকেও বিশ্বাস করতে হয় কবির মৃতদেহ শুয়ে শুধু শব্দ জড়িয়ে 

আসলে কবির একটাও কবিতা পড়ে নি কেউ কোনোদিনও। 

.

কবির মৃত্যুর দিনে মনে পরে সেই মেয়েটার মুখ 

কবি জন্মের দিনে যাকে সে  ডেকেছিল মা বলে ,

কবির মনে পরে তার প্রেমিকার ঠোঁটে লেগে থাকা তাচ্ছিল্যের  শব্দগুলো 

যেগুলো হয়তো কোনো বৃষ্টির দিনে কবি লিখেছিল তার শেষের পাতায় ,

কবির মনে পরে শহরটাকে ,শহরের মানুষগুলোকে 

যাদের জন্য কবি লিখে দিতে  চেয়েছিল একটা রৌদ্রজ্বল দিন। 

.

ফিরে আসি কবির কবিতার পাতায় 

যেখানে কিছু স্পর্শে সাড়া দেয় মন, কিছু স্পর্শে চক্র আবর্তন

যেখানে বৃষ্টি এলে কবির মন খারাপ হয়

যেখানে শীত এলে কবির মনে পরে চিনে বাদাম ,গড়ের মাঠ 

আর মাটির ভাঁড়ে  একটা শহর আর এক কাপ চা ।    

আর মুহূর্তখানেক কবি সময়ে 

কবি তার অসুস্থতায় হাত বুলিয়ে নেয় তার প্রিয় কলমের গায়ে 

কবি তার ভালোবাসায় শেষ বার ছবি  আঁকে তার প্রেমিকার 

তারপর শেষবারের মতো সে ছুঁতে চায় সাদা পাতা   

যেন কবি বলতে চায় 

এখনো আরও অনেক লেখার ছিল তার। 

Friday, December 3, 2021

আকাশী

 আকাশী 

.... ঋষি 


কিছু একটা সংকেত থাকে 

তুমি আমাকে ছুঁয়ে যাও যখন তখন কবিতার মতো ,

আজ সেই দিন নয় 

যেদিন ধর্মতলার মোড়ে হলুদ সালোয়ার আর সাদা ছাতা মাথায় তুমি 

আজ সেই দেন যেদিন 

হঠাৎ দমকা হাওয়ায় বুঝিয়ে দেয় তুমিও আছো। 

.

বছর শুধু মাত্র একটা সংখ্যা 

বয়স শুধুমাত্র একটা হিসেবে 

সময় সে তো কাল ,আজ আর পরশু 

শুধু একটা ব্যাপার আমাকে চমক দেয় বারংবার 

তোমার গলার স্বরটা আজও হঠাৎ আমাকে ছুঁয়ে যায় 

বলে মনে রাখবি তো আমায়। 

.

আজ সকালে তোমার আভাস পেলাম 

দৌড়ে ছুটে গেলাম সদর দরজা অবধি 

কিন্তু দরজার ওপারে খোলা রাস্তা অসীম কোনো অবস্থা 

তুমি ছিলে না 

শুধু তোমার গন্ধটা ছুঁয়ে গেলো শীতল বাতাসে ,

হয়তো এগুলো আমার আবোলতাবোল ভাবনা 

হয়তো এগুলো আমার নতুন শীতের সোয়েটার 

তবু সোয়েটারের উলের রংটা তোমার পছন্দের 

আকাশি রঙের 

মনে আছে তোমার। 

দিয়োগোর প্রেমিকা

 



দিয়োগোর প্রেমিকা 

.... ঋষি 


দিয়োগোর প্রেমিকা  আমাকে বলেছিল 

সে নাকি এইবার একটা এসপার উসপার করে ছাড়বে ,

আমি ভাবুক মানুষ 

আমি বলেছিলাম আমি কোনোদিন সোজা হয়ে শুয়ে চাঁদ দেখি নি 

চাঁদ দেখতে আমাকে পাশ ফিরে শুতে হয়েছে চিরকাল। 

.

আজ এতগুলো বছর আমি যে পাড়ায় থাকি 

সে পাড়ায় লোডশেডিং হয় বারংবার 

তাই আমার সাথে দিয়োগোর প্রেমিকার মতো কেউ শোয় না ,

কেউ ঘুম থেকে ওঠার  পর আমাকে গলা জড়িয়ে বলে না ডার্লিং সুপ্রভাত 

শুধু রাতে লোডশেডিং হলে ঘুম আসে না 

 তাই তখন ছাদে যাই আকাশের চাঁদের কাছে। 

.

দিয়োগো বলেছিল ওর প্রেমিকা নাকি ভীষণ খোলামেলা 

সেই খোলামেলায় কোনো অন্ধকার ধার ধরে না ,

সে নাকি আকাশের চাঁদের মতো হাসে ,অগ্ন্যুপাতের মতো গলে 

আর অন্ধকার শীতে বুকের তুলোতে জড়ায় ,

আমি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু বলতে পারি নি 

দিয়োগো আমার মতো গরিবের কোনো শীত থাকে না 

থাকে শুধু আকাশের চাঁদ 

থাকে চাঁদের মতো স্বপ্ন। 

আজ দিয়োগোর প্রেমিকা আত্মহত্যা করলো 

দিয়োগো কফিনের উপর বুক থাপড়ে কাঁদছে ,

দিয়োগোর প্রেমিকা আমার প্রেমিকা ছিল না 

আমি এই কবিতা লিখতে চায় নি 

কিন্তু সত্যি হলো 

আমি দিয়োগোর প্রেমিকার মতো একটা প্রেমিকা চাইতাম।     

Thursday, December 2, 2021

ক্লারিফিকেশন

 ক্লারিফিকেশন 

... ঋষি 


খুব স্নিগ্ধতায় ছুঁয়ে দিয়েছি সত্যিগুলো মিথ্যে করে 

খুব আদরে খুন করেছি মিথ্যেগুলো সত্যির মতো। 

আমার এক হাত আজ কাটা গেছে বহুদিন দিন 

তবুও দেখা আছে 

যে হাতে আছে তুমি মুষ্টিবদ্ধ অভিমান। 

.

ছুঁয়ে শেষ পাতার আয়নায় মিলে সুর মেরা তুমহারা 

ছুঁয়ে শেষ রৌদ্রে অছিলায় আগুন লাগানো প্রাণে 

রবীন্দ্রসংগীত নয় 

এই দেশে বিহারীরা বলে 

সুরজ অস্ত নেপাল মস্ত। 

.

ক্ল্যারিফিকেশন দরকার 

আমার বিড়িতে পোড়া ঠোঁটে লেগে আছে ঈশ্বরী ঠোঁট 

যোগ্যতা দরকার 

আমার কলমের থেকে যোগ্য এই জামানা না। 

হিসেব করে দেখতে পারেন 

কবিরা মরে খালি পেটে 

কিন্তু কবিদের বুকের হাঁড়িতে অনেকটা জীবন সেদ্ধ হয় 

সত্যি করে বললে অনুবাদে নোনা ধুলো শখ জ্বালা করে 

কবিরা সত্যি বাঁচে 

তাই না খেতে পেয়ে মরে। 


ঈশ্বর জন্ম

 ঈশ্বর জন্ম 

.. ঋষি 


যেখানে স্বার্থ আর লোভের আরেকনাম ঈশ্বর 

সেখানে ভালোবাসা নেহাত কেতাবি 

নির্ঘুম রাত বলে দেয় 

অপেক্ষারা এখনো জীবিত। 

.

ঈশ্বর শুধু একজন নায়ক 

যাকে বুঝতে আমাদের বারংবার নিজেকে বদলাতে হয় ,

ঈশ্বর আসলে বেঁচে থাকার আরেকনাম 

হয়তো নিঃশ্বাস 

কিংবা কলঙ্ক। 

.

আজকাল বাসি হতে হতে ভাবনারা দরজা খুলে 

মাথার ভিতর সিঁড়ি বেয়ে তোমার কাছে পৌঁছয় ,

ইতিহাস সাক্ষী থাকে জীবিত দৃষ্টিভঙ্গির 

যেখান থেকে কবিতা এই শহরে মুহূর্ত,

সমানে আলোকরশ্মি 

সামনে অনেকটা পথ 

যদি ফুরিয়ে যাওয়ার আগে সম্পর্ক ফুরোয় 

তবে ঈশ্বর নামমাত্র স্বার্থ 

আর লোভ 

তুমি ভালো থেকো চলন্তিকা।  

Tuesday, November 30, 2021

একমাত্র কারণ আমি



 একমাত্র কারণ আমি 

.. ঋষি 

.

তোমার সমস্ত হাতছানির ভাগিদার আমি 

এই যে  দিন ফুরিয়ে যাওয়ার কাব্যে প্রতিবার তুমি লেগে 

এই যে সকাল থেকে রাত মুহূর্তদের ঘড়ির মুখে তুমি ,

সমস্ত চিত্রপটের

সমস্ত কায়নাত জুড়ে তোমার মনখারাপ 

তার কারণ আমি। 

.

সমস্ত দোষারোপের 

সমস্ত আবিষ্কারের শেষে পরে থাকা ফসিল ,

দিন ফুরিয়ে যায় শহরের সমস্ত ল্যাম্পপোস্টে লম্পট পুরুষের গল্প

প্রতিটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে কাকতালীয় ন্যাকান্যাকা প্রেম 

আজকাল যে কোনো নেশায় আমার মন ভরে না 

আমি জানি এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ একমাত্র কারণ আমি। 

.

যদি ঈশ্বর কোনোদিন আগুনের ফলকে লেখে প্রহসন 

যদি মানুষ কোনোদিন সত্যির কলমে লেখে প্রতিবাদ 

তবে বোধহয় আর কিছু পাওয়ার থাকে না ,

সমস্ত প্রলোভনের পর এই যে তুমি একলা বসে মনখারাপ 

এই যে তোমার শাড়ির আঁচলে অজস্র সমাজ 

এই যে তোমার প্রতিমুহূর্তে লালিমার আজকাল চোখে বালি 

আমি জানি 

এই সমস্ত অবস্থানের একমাত্র কারণ আমি। 

তবুও চলন্তিকা এই কুয়াশায় 

তবুও সময় এই নিরাশায় 

আমি জানি ,আমি বড় নির্ভরশীল একটা সমাপ্তি 

যার শেষেরটুকুতে আমিও মৃত। 

 

Sunday, November 28, 2021

গল্প ভালোবাসার

 গল্প ভালোবাসার 

... ঋষি 


দুরন্ত কবিতার পাশে আমি শুয়ে  আছি 

এই শহর জানে না জাগতে 

আজ বহুযুগ শুধু একা একটা জীবন স্বপ্নের খোঁজে ,

আমার ভিতরে এক ডজন গল্প 

আতশ কাঁচে চোখ রেখে আমার দশ বছরের ছেলে বলে 

রৌদ্র ভিজিয়ে আগুন জ্বলে গো বাবা। 

.

গাছের ভিতর শতাব্দী পার করে জীবন সমুদ্রে একা নৌকা 

সময়ের গা ঘেঁষে ক্রমশ অবলুপ্ত এক একটা দিন 

বাঁচার দিন ,

অপেক্ষার শেষ প্রহরে এই শহর থেকে দূরে একটা সাবওয়ে 

কাগজ ছিঁড়ে কুচিয়ে দেয় শহরের উপর 

যারা বোঝে তারা জানে 

এ হলো ফুরিয়ে যাওয়ার গল্প ,পালকের গল্প 

গল্প ভালোবাসার। 

.

এ শহরে খুঁজি ফিরি কবিতা রোজ 

এ শহরে খুঁজি আমি কবিতার ঠোঁট 

স্পর্শ 

অথচ স্পর্শের পাশে শুয়ে আছে আমার গত জন্মের পাপ 

সেই একটা মুখ 

ভীষণ চেনা 

ভীষণ কাছের ,

ওচোখে পাপ ছিল না কোনোদিনই 

বরং আমি সেই পরাজিত অপেক্ষা যে ঈশ্বরের সেজে 

তাকে দিয়েছি এক মৃত পরিচয়।  


মধ্যবর্তী

একটা বিস্ফোরণ দরকার ছিল  দরকার ছিল একটা সীমা ছাড়ানো চিৎকারের  তোমার বুকের কাপড় সরে গেছে ,আমি রয়ে গেছি মধ্যবর্তী  তোমার নাভির থেকে দাগগুলো যদ...